কিছু ভুল-ত্রুটি মেরামত করতে পারলেই ফিরবে সম্পর্কের প্রাণ। ছবি: শাটারস্টক।
কিছু দিন আগেও যে বন্ধন ছিল আনন্দের, আজ তাকে মনে হয় জেলখানা৷ দায়িত্বকে বোঝা লাগে৷ সংসার পাতানো দুই মানুষের ভালবাসা ও যত্নের ক্ষেত্রটিও যান্ত্রিক হয়ে ওটে অনেকের বেলায়। কখনও বা অভ্যাসের পালে হাওয়া দিয়েই বছরের পর বছর একটা সম্পর্ক বয়ে বেড়াতে বাধ্য হন অনেক দম্পতি।
মনোবিদদের মতে, এই পরিণতি বেশির বাগ বিয়ের ক্ষেত্রেই ঘটে। তা বলে খুব একটা ঝগড়া যে হয়, এমন নয়৷ কেউ কাউকে ঠকান না, স্বেচ্ছাচারি নন, বিবাহ বহির্ভূত প্রেমের প্রশ্ন নেই— তার পরেও বিয়ের দীরিঘ দিন পর সংসারের জোয়াল টানতে টানতে অনেকের মধ্যেই সেই ম্যাজিকটা আর কাজ করে না। কেন করে না, তার জন্য রয়েছে প্রভূত যুক্তি ও মত।
মনোস্তত্ত্ববিদ জয়রঞ্জন রামের মতে, ‘‘দুই মানুষের মনের গতিপ্রকৃতি নিত্য বদলায়। তাই সবটা পিকচার পারফেক্ট হওয়া সম্ভব না হলেও উপায় যে একেবারে নেই তা নয়। বরং কিছু ভুল-ত্রুটি মেরামত করতে পারলে অনেক সময়ই সম্পর্কের মাধুর্য ফিরে আসে।’’
আরও পড়ুন: সকালে উঠে খালি পেটে এক কোয়া রসুন! এই সব অসুখ ঘেঁষবে না কাছে
হাতে কিছুটা সময় রাখুন নিজেদের জন্য।
আপাত দৃষ্টিতে বড়ই তুচ্ছ মনে হয় এই সব ভুল। কিন্তু এ সব শুধরে নেওয়ার মূলেই রয়েছে সম্পর্কের শৈত্য ঝরিয়ে দেওয়ার নানা উপায়।
কোথায় ভুল
সাধারণত যে কোনও সুস্থ সম্পর্কের বেলায় প্রথম দিকে দু’জনেই দু’জনের মন বুঝে চলার চেষ্টা করেন৷ কিন্তু একটা সময়ের পর ব্যাপারটার আর তত গুরুত্ব থাকে না৷ প্রাথমিক বিপদ আসে তার হাত ধরে৷ যত দিন গড়াতে থাকে ততই একে অপরের ভুলত্রুটি ধরতে শুরু করেন। কেউ কম, কেউ বেশি৷ ভাবেন, এ ভাবেই হয়তো শুধরে দেওয়া সম্ভব। কিন্তু ফল হয় উল্টো। কেউ এতে রেগে যান, কেউ গুটিয়ে যান৷ ধীরে ধীরে তৈরি হয় বিরক্তি ও দূরত্ব। সংসারে নিজেদের ভূমিকা ঠিক করে না নিলে সমস্যা ঢুকে পড়তে পারে যখন তখন। প্রত্যেকের সংসার আলাদা ও প্রতিটা মানুষের প্রকৃতি আলাদা। তাই যদি ধরে নেন, কোনও আত্মীয়-স্বজন বা অভিভাবকদের সাংসারিক ছক অনুসরণ করেই আপনারও সংসার চলবে, এমন ভাবলে বিপদে পড়বেন৷ সারা দিন যে যাঁর নিজের কাজে ডুবে থাকলে সম্পর্কের মাধুর্য কমে৷ তাই একটু সময় বার করুন গরের মানুষের জন্যও। দিনান্তে আধ-এক ঘণ্টা গল্প, মাঝে মাঝে একটু খোঁজখবর মজবুত করে সম্পর্কের বুনিয়াদ। দাম্পত্যে সুস্থ শারীরিক সম্পর্কেরও বড় ভূমিকা আছে৷ এর মাধ্যমেও কিন্তু অনেক ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটে৷ কাজেই ঝগড়া হলেই যাঁরা বিছানা আলাদা করে দেন, তাঁদের সমস্যা হয় বেশি। বরং সময়ের হাতে রাগের বশ ছেড়ে কিছুটা শান্ত থাকুন। রেগে গেলে অনেকেরই অভব্য আচরণ করা বা অন্যকে আঘাত করে ছোট-বড় কথা বলার অভ্যাস থাকে। তেমনটা হলে এই অভ্যাসে রাশ টানুন। পরে মিটিয়ে নিলেও এই সব কু-কথার স্রোত বেশি হয়ে গেলে কিন্তু তা সহজে ভুলতে পারেন না উল্টো দিকের মানুষ। আসলে মানুষের মন থেকে সহজে কিছু মোছে না। থিতিয়ে থাকে মাত্র। তাই দিনের পর দিন আঘাত পেলে সঙ্গীও এক সময় পাল্টা আঘাত করবেন বা গুটিয়ে যেতে বাধ্য হবেন অভিমানে।
আরও পড়ুন: শীতের অনিয়মে মেদ বাড়ছে? ভুঁড়ি কমিয়ে ছিপছিপে থাকতে প্রতি দিন পাতে রাখুন এই ফল
রাশ টানুন দোষারোপে।
ভুল শোধরাতে
সংসারের জন্য কে কী করবেন, তা দু’জনে মিলে ঠিক করুন৷ অন্য জনের কাছে কী আশা করেন না করেন তাও খোলামেলা আলোচনা করে সে ভাবে চলার চেষ্টা করুন৷ কেউ কাউকে ‘টেকেন ফর গ্র্যান্টেড’ করবেন না৷ এ রকম পরিস্থিতি হলে আলোচনা করে ব্যাপারটা ঠিক করে দিন৷ কথায় কথায় দোষ দেওয়া বা বাঁকা উত্তর দেওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করুন৷ দু’জনেই যেন মন খুলে কথা বলতে পারেন৷ ভয়ের পরিবেশ তৈরি হয়ে গেলে কিন্তু কোনও ভাবেই আর সম্পর্ক স্বাভাবিক থাকবে না৷ যা খুশি হোক, বেশি ক্ষণ কথা বন্ধ করবেন না৷ এটাও খুব খারাপ অভ্যাস৷ দরকারে ইগো সরিয়ে নিজে কথা বলুন। প্রিয়জনকেও বুঝিয়ে দিন এই ইগো সরিয়ে এগিয়ে আসার দায়িত্ব কখনও কখনও তাঁর উপেরও বর্তাবে। কিছু পছন্দ না হলে তা নিয়ে সরাসরি আলোচনা করুন৷ আপনি যা বোঝেন সেটাই কিন্তু শেষ কথা নয়। তাই জেদ ধরে থাকবেন না নিজের যুক্তিতে।