CORONAVIRUS

ভারতে করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা কি সত্যিই নিয়ন্ত্রণে?

শেষ কয়েক দিনে আক্রান্তের সংখ্যার এই নিয়ন্ত্রণ কি কিছুটা স্বস্তি দিতে পারে?

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০২০ ১৯:৩২
Share:

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

১ মার্চ দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩। গত ২৪ মার্চ যখন দেশ জুড়ে লকডাউন শুরু হল, করোনা সংক্রমণের সংখ্যা তখন ৫০০-র মতো। লকডাউনের ১৯ দিনের মাথায়, অর্থাত্ ১০ এপ্রিল বিকেলে, সংখ্যাটা অনেকটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬,৭৬১-তে। বৃদ্ধির অঙ্কটা হেলাফেলার নয়। কিন্তু একই সঙ্গে এটাও সত্যি যে— আমেরিকা বা ইউরোপের দেশগুলোর ছবি যদি আমরা দেখি, সে তুলনায় আমাদের দেশের অবস্থা কম খারাপ বললে কম বলা হবে, উল্লেখযোগ্য ভাবেই কম খারাপ। পশ্চিমের দেশগুলোতে যে লাগামছাড়া পরিস্থিতি, আমাদের এখানে একেবারেই তা নয়। কিন্তু এটাই কি বাস্তব পরিস্থিতি? এই তথ্য কি দেশের প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরছে? কেউ কেউ একমত হলেও, কেউ কেউ ক্ষীণ সন্দেহও প্রকাশ করছেন।

Advertisement

লকডাউন শুরুর দিন, ২৪ মার্চ রাতে ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৫১৯ জন। ২৪ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত, আট দিনে, সংক্রমণ বেড়েছিল ৯২৬ জনের। গড়ে ১১৬ জনের মতো। কিন্তু ১০ এপ্রিল এক দিনেই সংক্রমণ বৃদ্ধির সংখ্যা ৮৯৬। এপ্রিলের ১ থেকে ১০ তারিখ পর্যন্ত ধরলে গড়ে দৈনিক নতুন সংক্রমণ সাড়ে ৫০০-র কাছাকাছি। অর্থাত্ পরিস্থিতি ভাল মতো নিয়ন্ত্রণে বলা যাবে না। কিন্তু আবার সেই ইউরোপ-আমেরিকার তুলনায় গেলে বৃদ্ধির অঙ্কটা কিছুই নয়। একই সঙ্গে, দৈনিক বৃদ্ধির সংখ্যাটা মোটামুটি এক জায়গায় ওঠানামা করছে। লকডাউন না হলে এটা হতো না বলে মনে করছেন অনেকেই। আইসিএমআর-এর মতে, মোট আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও দেশের কোভিড পজিটিভ আসার হার নিয়ন্ত্রণে।

এখনও পর্যন্ত এই বৃদ্ধি অঙ্ককে ‘নিরাপদ’ বলেই মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিষয়ক চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরী। তাঁর মতে, ‘‘এই সংখ্যা নিঃসন্দেহে আশাব্যঞ্জক। লকডাউন শুরুর পর তাকে অভ্যাসে আনা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ফল এটা। আরও কঠোর ভাবে মানতে পারলে আরও ভাল ফল মিলবে। আপাতত দেশের বিভিন্ন প্রান্তে লুকিয়ে থাকা রোগ সামনে আসছে। কিন্তু সংখ্যাটা আগের মতো আর প্রতি দিন প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে না, এটা কিছুটা স্বস্তির তো বটেই!’’

Advertisement

আরও পড়ুন: এসি থেকেও ছড়ায় সংক্রমণ, রুখতে কী কী করবেন?

মাস্ক পরলে ও স্বাস্থ্যবিধি মানলে ঠেকাতে পারবেন করোনাভাইরাস।

বক্ষবিশেষজ্ঞ কৌশিক সরকারও অভিজিৎবাবুর সঙ্গে সহমত। তাঁর মতে, ‘‘একটি দেশে প্রতি দিন এই সময় আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়বে, কিন্তু তা কতটা নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে, সেটাই ঠিক করবে সেই দেশ করোনার সঙ্গে লড়াইয়ে এগিয়ে থাকবে কি না। আমেরিকা বা স্পেন বা ইতালির তুলনায় কিন্তু সেই হিসেবে ভারতের অঙ্ক অনেকটা নিয়ন্ত্রণে। এমনকি, লকডাউন শুরু থেকে আজ অবধি মোট যে হিসেব, তাতে এক সময় সংখ্যাটা হাতের বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে বলে মনে হলেও এখন আর সেটা মনে হচ্ছে না। লাগাতার প্রচার, সচেতনতা ও স্বাস্থ্যবিধি ধরে রাখতে পারলে এই অঙ্ক আরও কমিয়ে আনা যাবে।’’

সত্যিসত্যিই বিশ্বের অন্য দেশগুলির হিসেব কিন্তু এত নিয়ন্ত্রিত নয়। আমেরিকা, ইতালি ও স্পেন— এখনও পর্যন্ত করোনা-ত্রাসে সর্বোচ্চ ভুক্তভুগীদের তালিকায় পড়ে। সেই সব দেশের হিসেবে চোখ রাখলে আঁতকে উঠতে হয়।

আমেরিকায় লকডাউন শুরু হয় ১৬ মার্চ। সে দিন সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ৬০০ জন। আজ এখানে আক্রান্তের সংখ্যা ৪ লক্ষ ৬৬ হাজার। স্বাভাবিক ভাবেই বোঝা যাচ্ছে, সেখানে এখনও আক্রান্তের সংখ্যা প্রতি দিনই হু হু করে বাড়ছে। হাজারে হাজারে বাড়ছে।

আরও পড়ুন: মাস্ক মিলছে না, বাড়িতে বানাবেন কী ভাবে?

স্পেনের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। স্পেনে লকডাউন শুরুর দিন, ১৪ মার্চ আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৬ হাজার ৪০০। আজ, ১০ এপ্রিল সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১ লক্ষ ৫৩ হাজারেরও বেশি। ইতালিতে লকডাউন শুরু হয় ৯ মার্চ। ১০ এপ্রিলের হিসেবে সেখানে সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লক্ষ ৪৪ হাজারেরও বেশি। অর্থাৎ প্রতিটা দেশেই এই সংখ্যাবৃদ্ধির হার দিনকে দিন লাগামছাড়া হচ্ছে। ভারতের অঙ্কের সঙ্গে তার একেবারেই মিল নেই।

তবে এই অঙ্কে খুব একটা নিশ্চিন্ত নন চিকিৎসকদের আর একটা অংশ। যেমন বক্ষবিশেষজ্ঞ সুমিত সেনগুপ্তের মতে, ‘‘আজ, ১০ এপ্রিলই তো এই সংখ্যা আবার খানিকটা বেড়ে কিন্তু ৮৯৬ হয়ে গিয়েছে! আসলে এই সংখ্যার হার অনেকটা নির্ভর করে টেস্টের উপর। প্রতি দিন কি সমান হারে পরীক্ষা হচ্ছে, সেই অঙ্কও জানা জরুরি। ধরা যাক, কোনও এক দিন পরীক্ষা হল ৫০ জনের, দেখা গেল, ১০ টি কেস পজিটিভ। পরের দিন যদি আরও ৫ জনের পরীক্ষা হয় ও প্রত্যেকে পজিটিভ হয়, তা হলে কিন্তু আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ১৫ ই। মানে মাত্র পাঁচটি পরীক্ষা হচ্ছে, পাঁচটিই পজিটিভ। তাই ২৪ ঘণ্টায় মোটে ৫ জন বেড়েছে বলে এখানে স্বস্তির জায়গা নেই, কারণ দ্বিতীয় দিনের ১০০ শতাংশ কেসই পজিটিভ।’’

সংক্রামক ব্যাধি বিশেষজ্ঞ অমিতাভ নন্দী কোথাও সুমিতবাবুকে সমর্থন করলেও, তিনি আবার পরীক্ষা হচ্ছেই না এমনটা মানতে নারাজ। তবে আরও ব্যাপক হারে পরীক্ষার প্রয়োজন আছে বলেই তাঁর মত। অমিতাভবাবুর কথায়, ‘‘শেষ কয়েক দিনে এই অঙ্ক মানেই যে তা আবার বেড়ে যাবে না এমন নয়। গত ৩-৬ এপ্রিল আক্রান্তের সংখ্যা দেখে মনে হচ্ছিল আগের তুলনায় সামান্য হলেও কমছে হয়তো, কিন্তু ফের ৭ তারিখ তা একলাফে ৭০৪ হয়ে যায়। ১০ তারিখ ৮৯৬। সুতরাং কবে এটা যে আবার অনেকটা লাফিয়ে বেড়ে যাবে তার কোনও ঠিক নেই। শুধুই স্বাস্থ্যবিধি মানাই নয়, ব্যাপক হারে পরীক্ষা ও অবশ্যই সঙ্গে কঠোর ভাবে লকডাউন মেনে চললে তবেই অনেকটা স্বস্তি আসতে পারে।’’

উপরের গ্রাফে দেওয়া তথ্যগুলোতে আর একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক রয়েছে। ভারতে যখন লকডাউন শুরু হয়েছে তখন আক্রান্তের সংখ্যা ৫০০-র মতো। কিন্তু আমেরিকায় লকডাউন শুরু হয়েছিল সাড়ে ৪ হাজারের বেশি মানুষের করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ার পর। স্পেন-ইতালির ক্ষেত্রে সংখ্যাটা আরও বেশি। অনেকেরই মতে— ওরা দেরি করে ফেলেছে। সে দিক থেকে ভারতের সামনে চিন-ইরান-ইতালি-স্পেন-আমেরিকা ইত্যাদি দেশগুলোতে সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার ছবিটা ছিল। এখানে প্রথমে পশ্চিমবঙ্গ-সহ কয়েকটি রাজ্যে এবং পরবর্তীতে সারা দেশে লকডাউন কার্যকর হয়েছে তুলনামূলক ভাবে আগে। এটা সম্ভবত একটা বড় আশার দিক। যদিও শেষ কথা বলার সময় এখনও আসেনি।

(গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।)

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement