বজ্রাসন। অলঙ্করণ: শৌভিক দেবনাথ।
বজ্রাসন
এই আসনকে বজ্র ও অশনি ভঙ্গিমাও বলা হয়। ‘বজ্রনদী’ কিংবা ‘বজ্রপথ’ সাধারণ অবস্থা থেকে বোধি লাভের এক উজ্জ্বল পথ। আকাশের বিদ্যুতের মাটিতে নেমে আসার আলোকোজ্জ্বল পথের মতোই মানুষ এই আধ্যাত্মিক অনুভবের পথে অন্ধকার থেকে আলোর ঠিকানা খুঁজে পায়। নিয়মিত এই আসন অভ্যাসে আধ্যাত্মিক উন্নতি হয়। মুসলিম ও বৌদ্ধরা প্রার্থনা করার সময় বজ্রাসনে বসেন।
কীভাবে করব
ম্যাটের উপর হাঁটুগেড়ে মেরুদণ্ড টানটান করে বসুন।নিতম্ব থাকুক গোড়ালির উপর এবং ঊরু পায়ের ডিমের উপর। পায়ের আঙুলে বেশি চাপ না দিয়ে আরামদায়ক রাখার চেষ্টা করুন। এবারে হাঁটুর উপরে হাত রাখুন। এই অবস্থায় পিঠ ও মাথা একই সরলরেখায় রাখার চেষ্টা করুন। তবে এইভাবে থাকার জন্য যাতে বাড়তি চাপ না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এই অবস্থানে মেরুদণ্ড কিছুটা ধনুকের মত বেঁকে থাকবে। কিন্তু বেশি বাঁকালে চাপ পড়বে, খেয়াল রাখবেন। এবারে চোখ বন্ধ করে হাত সহ সমস্ত শরীর শিথিল করুন। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকবে। খেয়াল রাখবেন নাক দিয়েই শ্বাস নেবেন, মুখ দিয়ে নয়। এই অবস্থায় দু’মিনিট থেকে পাঁচ মিনিট পর্যন্ত থাকার চেষ্টা করুন। পরে সময় আরও বাড়ানো যেতে পারে। শ্বাস-প্রশ্বাসের দিকে খেয়াল রাখতে হবে, মনে মনে গুনে ১৫–২০ বার শ্বাস নিন। এবারে চোখ খুলুন। পা সোজা করে ছড়িয়ে দিন, দরকার হলে গোড়ালি নাড়াচাড়া করে নিন। সতর্কতা –আসন করার সময় যদি উরুতে ব্যথা হয়, গোড়ালির দূরত্ব সামান্য বাড়িয়ে নিতে পারেন। আসন শুরু করলে অনেকের গোড়ালিতে ব্যথা হতে পারে। এক্ষেত্রে একটা নরম ও পাতলা বালিশ বা পাট করা চাদর গোড়ালির উপর রাখতে পারেন।
আরও পড়ুন: লকডাউনে হাতে সারা ক্ষণ মোবাইল? অজান্তেই কী ক্ষতি হচ্ছে জানেন?
আরও পড়ুন: লকডাউনের জেরে ডায়ালিসিস বন্ধ করেছেন? এই ভুল ভুলেও নয়!
কেন করব
বজ্রাসন অভ্যাস করলে শ্রোণীচক্র অর্থাৎ তলপেট ও কোমরের নিচের দিকে রক্তচলাচল বাড়ে। স্নায়ুর কার্যকারিতা বজায় রাখার সঙ্গে সঙ্গে এই অঞ্চলের পেশি সুদৃঢ় করতে সাহায্য করে বজ্রাসন। হার্নিয়া ও অর্শ বা পাইলসের সমস্যা থেকে রেহাই পেতে সাহায্য করে,হাইপার অ্যাসিডিটি ও পেপটিক আলসারের মতো সমস্যা দূর করে হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে বজ্রাসন। মেয়েদের ঋতুচক্রের সমস্যা দূর করতে ও স্বাভাবিক প্রসব হতে সাহায্য করে এই আসন।
বজ্রাসন অভ্যাস করলে কোনও বাড়তি চেষ্টা ছাড়াই মেরুদণ্ড ঋজু থাকে। সায়টিকা ও স্যাক্রাল সংক্রমণ প্রতিরোধে এটি এক অন্যতম আসন। এই আসন অভ্যাস করলে আধ্যাত্মিক চেতনা জাগে ও যৌন ইচ্ছেকে আধ্যাত্মিক চিন্তায় পরিণত করা যায়।