শরীরচর্চা চলুক বাড়িতেই। ছবি: শাটারস্টক।
লকডাউনের মেয়াদ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও কমেছে শরীরের নড়াচড়া। এতে মনেও জমছে মেঘ। শরীর-মনের চক্রব্যূহে আটকে প্রায় সকলেই। গতিবিধিতে টানা লক্ষ্মণরেখা। তাই বিশ্বের তাবড় মনোবিদ বলছেন, শরীরের থেকেও করোনা বেশি থাবা বসিয়েছে মনে। চার দেওয়ালে বন্দি জীবন আর মৃত্যুভয় করোনা ভাইরাস গোটা মানব সভ্যতার মানসিক দৃঢ়তার পরীক্ষা নিচ্ছে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শব্দটার গুরুত্ব বুঝে নিন
করোনা ভাইরাস শরীরে কত সহজে থাবা বসাবে তা নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উপর। নিষ্ক্রিয় শরীর, সঙ্গে অবসাদ-উদ্বেগ— এই দুইয়ের যোগফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, অর্থাৎ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে বিশ্ব বিখ্যাত ফিটনেস গুরু পল চেক দিচ্ছেন ‘ফোর ডক্টর থিয়োরি’
ডক্টর মুভমেন্ট: এককথায়, শরীরচর্চা করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিশ্চিত ভাবে বাড়ে। আমাদের লিম্ফোটিক সিস্টেম হল জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মূল সৈনিক। এই সিস্টেমের অংশ অ্যান্টিবডি অতন্দ্র প্রহরীর মতো শরীরে ঘুরে বেড়ায় জীবাণুর খোঁজে। শরীর যত কার্যক্ষম হবে অ্যান্টিবডির প্রহরা ততই তীক্ষ্ণ হবে।
আরও পড়ুন: কংজাংটিভাইটিসও হতে পারে করনোর কারণে! কারা সাবধান থাকবেন?
ব্রিদিং এক্সারসাইজে সুস্থ রাখুন শরীর। ব্রিদিং এক্সারসাইজের প্রথম পর্যায়।
ডক্টর হ্যাপিনেস: মনে আনন্দ থাকলে লিম্ফোটিক সিস্টেম ভাল কাজ করে। ২০ মিনিট এক্সারসাইজ করার পর মস্তিষ্কের ফিল গুড হরমোন এন্ডরফিনের ক্ষরণ শুরু হয়। বাড়ে অবসাদ কমানোর হরমোন সেরোটোনিন। গান শোনা, বই পড়া, এ সব তো আমরা জানিই। সঙ্গে ব্যায়ামটা জুড়ে নিন।
ডক্টর কোয়ায়েট: রাতে ভাল ঘুম। ঘুম ভাল হলে উদ্বেগ কমে। ইমিউন সিস্টেম ভাল কাজ করে। ধ্যান, ব্রিদিং ভাল ঘুমে সাহায্য করে।
ডক্টর ডায়েট: পালংশাক, ব্রকোলি, অ্যাভোগাডো, সবুজ সব্জি, টক দই, আমন্ড, আখরোট, কড লিভার তেল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। সুতরাং সঠিক খাবার খেতে হবে।
শুধু ব্যায়াম নয়, পাশাপাশি পল চেক-এর উপদেশটা মাথায় রাখুন। ব্যায়াম কারা করবেন, কী ভাবে করবেন, তার নির্দেশ দিয়েছে আমেরিকান কলেজ অব স্পোর্টস মেডিসিন।
কারা করবেন
• সুস্থ-স্বাভাবিকরা।
• করোনা ধরা পড়েনি, অথচ আইসোলেশনে আছেন এমন ব্যক্তি।
কতটা তীব্র এক্সারসাইজ করবেন:
• সদ্য এক্সারসাইজ শুরু করলে মাঝারি তীব্রতার ব্যায়াম।
• অনেক দিন ধরে করলে উচ্চ তীব্রতার ব্যায়াম করতে হবে।
আরও পড়ুন: প্রাণঘাতীও হতে পারে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন, বলছেন বিজ্ঞানীরা
মাঝারি তীব্রতা বুঝবেন কী ভাবে:
টক টেস্ট: ধরুন জোরে হাঁটছেন। মিনিট ৩-৪ হাঁটার পরে দাঁড়িয়ে যান। কারও সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করুন। যদি দেখেন হাঁপাচ্ছেন, কথাই বলতে পারছেন না, তবে তীব্রতা মাঝারি ছাড়িয়ে গিয়েছে। সহজে কথা বলতে পারা মানে মাঝারি তীব্রতা।
নিজেকে উদ্দীপ্ত করুন
ঘরের সীমাবদ্ধতার মধ্যে শরীরকে খাটান। যখন জানছেন যে ভাল থাকতে হলে এক্সারসাইজ ওষুধের মতো কাজ করে তো মনের ইচ্ছাশক্তিটা জাগান। চিন্তা-অবসাদ ঝেড়ে ফেলে লেগে পড়ুন এক্সারসাইজে। নিজে ভাল থাকলে তবেই তো অন্যকে ভাল রাখতে পারবেন। কয়েকটা এক্সারসাইজের উদাহরণ দিচ্ছি।
ব্রিদিংয়ের এই ব্যায়াম অবশই করবেন
ব্রিদিং এক্সারসাইজের শেষ পর্যায়।
দুই পা ফুটখানেক ফাঁক রেখে দাঁড়ান। দুই হাত বুকের সামনে ভাঁজ করে রাখুন যেন কাউকে বুকে জড়িয়ে ধরছেন। এ বার শব্দ করে মুখ দিয়ে প্রশ্বাস ছাড়তে ছাড়তে দুই হাত টানটান করে মাথার উপর তুলুন। এর পর শ্বাস নিতে নিতে দুই হাত নীচে নামিয়ে আবার বুকের কাছে আনুন। প্রক্রিয়াটা ১৫-২০ বার চালান। খুব ভাল করে নজর দিন দীর্ঘ শ্বাসপ্রশ্বাসে। পেটের গভীর পর্যন্ত শ্বাস নিন। হাত তোলা আর নামানো যত দীর্ঘ সময় ধরে হবে ততই বেশি অক্সিজেন ঢুকবে। একে বলে ডিপ ডায়াফ্রামিক ব্রিদিং। ফুসফুসের অক্সিজেন ধারণ ক্ষমতা বাড়ে। শরীর রিল্যাক্সড হয়। ২ বার রিপিট করুন।
এ হাঁটা অন্য হাঁটা
জল ভরুন বোতল রাখুন: দরকার ৬টা এক লিটারের খালি বোতল। একটা করে বোতল ভরুন আর দ্রুত হেঁটে এক ঘর থেকে অন্য ঘরে নিয়ে রাখুন। ৬টা বোতল ভরে অন্য ঘরে রাখার সঙ্গে সঙ্গে পরের ব্যায়ামটা শুরু করুন।
সিটেড রাশিয়ান টুইস্ট।
সিটেড রাশিয়ান টুইস্ট: ছবির মতো হাঁটু সামনে ভাঁজ করে মাটিতে বসে পড়ুন। শরীরটা পিছনে হেলিয়ে, মানে একটু আনত করে রাখুন। এ বার এক লিটারের জলভর্তি একটা বোতল হাতে ধরে শরীরের এক পাশ থেকে অন্য পাশে নিন। দু’পাশ মিলিয়ে ২০ বার। পর পর দুটো ব্যায়াম হয়ে গেলে দু’মিনিট বিশ্রাম নিন।
১) এবং ২) এই পদ্ধতিতে ৩-৪ বার রিপিট করুন।
আরও পড়ুন: হাতে-পায়ে র্যাশ, চুলকানি? সাবধান, করোনা নয় তো?
সিঁড়িতে ওঠানামার ভঙ্গি।
সিঁড়িতে ওঠানামা: সহজ এক্সারসাইজ। বাড়ির সিঁড়ির সামনে দাঁড়ান। ছোট শক্তপোক্ত জলচৌকি হলেও চলবে। পর্যায়ক্রমে ডান আর বাঁ পা শুধুই প্রথম সিঁড়িতে তুলুন আর নামান। মোট ৩০-৪০ বার ওঠা-নামার পর ১-২ মিনিট বিশ্রাম নিন। এই ব্যায়ামটা তিন বার রিপিট করুন।
মাটিতে বসে ঘুসি মারার কৌশল।
মাটিতে বসে ঘুসি: ঠিক ছবিতে দেখানর মতো হাঁটু সামনে ভাঁজ রেখে মাটিতে বসুন। পিঠ সামান্য পিছনে হেলিয়ে হাতের মুঠো আড়াআড়ি চালিয়ে সজোরে শূন্যে ঘুষি ছুড়ুন। পর পর দ্রুত ঘুষির ফোয়ারা। সব রাগ হতাশা বেরিয়ে যাবে। ঠিক প্রেসার কুকারের সেফটি ভাল্ভ দিয়ে যেমন অতিরিক্ত বাষ্প বেরিয়ে যায়। মোট ৫০-৬০টা ঘুষির পর থামুন। ২ মিনিট বিশ্রাম নিন। ৩ বার রিপিট করুন।
একই দিনে ৩) আর ৪) করবেন না। যে কোনও একটা বেছে নিন।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)