যোগাভ্যাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
২১ দিনের একটানা লকডাউনের মাত্র এক সপ্তাহ কেটেছে। সাত দিনের মাথায় দেশের মানুষকে এমন কঠিন সময়ে চনমনে ও ফিট রাখতে যোগনিদ্রার ভিডিয়ো শেয়ার করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সুস্থ থাকতে ও এই লকডাউনের সময় মানসিক অবসাদ কাটাতে সকলেরই কমবেশি যোগাভ্যাস প্রয়োজন, মনে করালেন সে কথাও।
মঙ্গলবার সকাল ৯টা বেজে ৩৭ মিনিটে নিজের টুইটার হ্যান্ডেলে এই যোগনিদ্রার ভিডিয়ো ভাগ করে নেন মোদী। যাতে সকল দেশবাসী তা বুঝতে পারেন তাই হিন্দি ও ইংরেজি দুই ভাষাতেই ভিডিয়োটি শেয়ার করেন। এই ভিডিয়োর সঙ্গে মোদী লেখেন, ‘‘এটা আপনার শরীরের সামগ্রিক সুস্থতা আরও বাড়িয়ে তোলে, মনকে শিথিল করে রাখে, মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমায়।’’
টুইটে মোদীর দাবি, এই যোগনিদ্রা মানসিক চাপ কমায়। তিনি নিজেও অন্তত সপ্তাহে একবার বা দু’বার, যখনই সময় পান, এই যোগনিদ্রা অনুশীলন করেন। তবে তিনি কোনও ফিটনেস বিশেষজ্ঞ বা যোগাসন প্রশিক্ষক নন। নেহাতই এক জন অনুশীলনকারী হিসেবে এই যোগনিদ্রা অভ্যাস করেন ও তাতে লাভবানও হন।
টুইটে এই ভিডিয়োই শেয়ার করেন মোদী।
আরও পড়ুন: করোনার জেরে মিলছে না শিশুর অন্য রোগের ভ্যাকসিন! কী বিপদ ধাওয়া করছে এর পর?
আরও পড়ুন: ষষ্ঠ দিন: আজকের যোগাভ্যাস
কী এই যোগনিদ্রা?
'বিহার স্কুল অব যোগ'-এর শিক্ষক স্বামী সত্যানন্দ সরস্বতী যোগনিদ্রা-র প্রবর্তক। যোগনিদ্রাকে নিদ্রাহীন ঘুম বা সচেতন ভাবে ঘুমিয়ে থাকাকে বোঝায়। অর্থাৎ ঘুমন্ত ও জাগ্রত অবস্থার মাঝামাঝি একটা অবস্থা। এটি বৈদিকী হিন্দু আচার নয় বরং তান্ত্রিক আচারের একটি অঙ্গ, যাকে ‘ন্যাশ’ নামেও ডাকা হয়। স্বামী সত্যানন্দের মতে, এটি বসা অবস্থায় অভ্যাস করতে হয়। যদিও বিহারের স্কুলগুলি-সহ দেশের বেশির ভাগ স্কুলই এই যোগনিদ্রাকে শুয়ে অভ্যাস করায়। মন্ত্রগুলিকে শরীরের বিভিন্ন অংশে স্থাপন করা হয়। আজকাল যদিও যোগনিদ্রায় সংস্কৃত মন্ত্রই ব্যবহৃত হয়, তবে এক সময় তান্ত্রিক মন্ত্র ব্যবহৃত হত। এই তান্ত্রিক মন্ত্রের সঙ্গে বাংলার কালীপুজোয় ব্যবহৃত মন্ত্রের বেশ মিল পাওয়া যায়।
আধুনিক যোগবিজ্ঞান অবশ্য যোগনিদ্রাকে ব্রাহ্মণ্য যোগের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বলে। তবে এটি ঠিক ব্যাখ্যা নয়। কারণ, এই যোগনিদ্রার উৎস তান্ত্রিক মত, যা আদতে ব্রাহ্মণ্য হিন্দুত্ববাদের বিরুদ্ধেই একপ্রকার বিদ্রোহ। এই যোগনিদ্রাকে আজকাল ‘রাজ যোগ’-এর অংশ হিসাবে ধরা হয়। এটি যোগসূত্রের পঞ্চম ভাগে প়়ড়ে। যোগসূত্রের ভাগগুলি হল: য়ম, নিয়ম, আসন, প্রাণায়াম, প্রত্যাহার, ধরনা, ধ্যান ও সমাধি। যোগসূত্রের পঞ্চম ভাগ অর্থাৎ ‘প্রত্যাহার’-এর অন্তর্গত ‘আসা’ প্রক্রিয়াই যোগনিদ্রা। তবে অনেক বিশেষজ্ঞ বলে থাকেন, খুব উন্নত মানের যোগনিদ্রায় ধরনা ও সমাধিও যুক্ত থাকে।