ভুজঙ্গাসন।অলঙ্করণ: শৌভিক দেবনাথ।
ভুজঙ্গাসন
মাথা তুলে আসনের ভঙ্গি এর আগেও আমরা শিখেছি, এটি সে রকমই, তবে কিছুটা ভিন্ন আর একটি আসন। ‘ভুজঙ্গ’ শব্দের অর্থ ‘সাপ’। সাপের ফণা তোলার মত ভঙ্গিমায় এই আসনটি করা হয়। ভুজঙ্গাসন নিয়মিত অভ্যাস করলে জীবনের সব কিছুকে সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করার আত্মবিশ্বাস জন্মায়।
কী ভাবে করব
• উপুড় হয়ে ম্যাটের উপর শুয়ে পড়ুন। পা সোজা করে রিল্যাক্স করুন। দুই হাতের তালু কাঁধের পাশে মাটিতে রাখুন, কনুই থাকুক শরীর ঘেঁষে। আগুপিছু করে আরামদায়ক ভাবে নিজের অবস্থান ঠিক করে নিন। কপাল মাটিতে রেখে চোখ বন্ধ করুন।
• এটি শুরুর অবস্থান। এই অবস্থানে ভাবনা চিন্তা মন থেকে সরিয়ে শরীর শিথিল করে (বিশেষ করে শরীরের নিচের অংশ) রিল্যাক্স করার চেষ্টা করুন।
আরও পড়ুন: ৪৯তম দিন: আজকের যোগাভ্যাস
• এ বার ধীরে ধীরে শ্বাস নিতে নিতে মাথা ও বুক উপরের দিকে তুলুন। ভাঁজ করা হাত পাশে থাকবে। কিন্তু চেষ্টা করবেন হাতে ভর না দিয়ে পেট-সহ শরীরের নিচের অংশে ভর দিয়ে মাথা ও বুক উপরের দিকে তোলার।
• খেয়াল রাখবেন, নাভি যেন মাটি থেকে ৩ ইঞ্চি উপরে ওঠে। আর একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল নাভির নীচে শ্রোণি অঞ্চল মাটিতে ঠেকে থাকবে। ভুজঙ্গাসনের ক্ষেত্রে এই অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
• এ বার দুই হাতে ভর দিয়ে শরীর যতটা সম্ভব উপরের দিকে তোলার চেষ্টা করুন। মাথা পিছন দিকে হেলিয়ে রাখুন। ঘাড়ে যেন কিছুটা টান পড়ে খেয়াল রাখবেন।
• আপনার সুবিধে মতো হাত কনুই থেকে ভাঁজ করে রাখতে পারেন আবার টানটান করে হাতে ভর দিয়ে শরীর উপরের দিকে তুলতে পারেন। এই অবস্থানে যতক্ষণ সম্ভব থাকুন। তবে বেশি স্ট্রেন করবেন না।
• এ বার শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে শুরুর অবস্থানে ফিরে আসুন। এক রাউন্ড সম্পূর্ণ হল।
• আসন শেষে শবাসনে বিশ্রাম নিন। ২–৩ রাউন্ড ভুজঙ্গাসন অভ্যাস করুন।
সতর্কতা
যাঁদের হাইপার থাইরয়েড আছে, পেপটিক আলসারের সমস্যা বা হার্নিয়া আছে তাঁরা এই আসন অভ্যাস করবেন না। পিঠ বা কোমরের সাঙ্ঘাতিক ব্যাথা থাকলেও আসনটি করা অনুচিত।
আরও পড়ুন: ৪৮তম দিন: আজকের যোগাভ্যাস
কেন করব?
ভুজঙ্গাসন আমাদের নানা শারীরিক সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে। যাঁদের নাগাড়ে বসে কম্পিউটারে কাজ করতে হয় বলে ঘাড় ও পিঠ স্টিফ হয়ে যায়, তাঁদের এই আসন অভ্যাসে মেরুদণ্ডের পেশীর রক্ত সঞ্চালন বাড়ে ও ব্যথার হাত থেকে রেহাই মেলে। শিরদাঁড়া স্টিফ হয়ে গেলে শরীরের সমস্ত স্নায়ু বা নার্ভের কাজ ব্যহত হয়। কারণ, মস্তিষ্ক থেকে শিরদাঁড়ার মধ্যের সুষুম্নাকাণ্ড দিয়ে যাবতীয় নার্ভ শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে আছে।
শিরদাঁড়ার সমস্যা হলে নার্ভের কাজ করার অসুবিধা হবেই। নিয়মিত ভুজঙ্গাসন অভ্যাস করলে মেরুদণ্ডে রক্ত চলাচল বাড়ে বলে স্নায়ুতন্ত্র উজ্জীবিত হয় ও সঠিক ভাবে কাজ করতে পারে। যে কোনও স্ত্রীরোগে এই আসনটি অভ্যাস করলে সমস্যা বাড়তে পারে না। ভুজঙ্গাসন করলে ফুসফুস ও বুক প্রসারিত হয় বলে অ্যাজমা বা হাঁপানির রোগীদের জন্যে অত্যন্ত উপযোগী। নিয়মিত অভ্যাস করলে পেটের মধ্যে থাকা সব ক’টি প্রত্যঙ্গের কার্যকারিতা বাড়ে। লিভার ও কিডনি ভাল থাকে, হজম ক্ষমতা বাড়ে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।