শিশুর সঙ্গে সময় কাটান।
করোনাভাইরাসের আতঙ্কে তামাম ভারতবাসী আজ গৃহবন্দি। ছোটরাও বাধ্য হয়েছে বাড়িতে থাকতে। কোনও কোনও শিশু ব্যাপারটাকে উপভোগ করছে মা-বাবাকে সারা ক্ষণ কাছে পাচ্ছে বলে। কিন্তু দৌড়োদৌড়ি করে খেলতে না পেরে শিশুদের অনেকেই অস্থির হয়ে উঠছে। এই অবস্থার মোকাবিলা করতে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ কেদাররঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় শিশুদের একটা নির্দিষ্ট রুটিনে অভ্যস্ত করে তোলার পরামর্শ দিলেন।
• সকাল থেকে রাত— কী ভাবে সময় কাটাবে সে বিষয়ে বাচ্চার সঙ্গে বসেই আলোচনা করে নেওয়া যেতে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বাচ্চারা বেশ বুদ্ধিমান। তাদের সম্পূর্ণ পরিস্থিতি বুঝিয়ে বললে তারা ঠিকই বুঝতে পারবে।
• এখনকার বাচ্চাদের মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস খুব কমে গিয়েছে। এই সুযোগে ওদের বই পড়ার অভ্যেস গড়ে তোলার চেষ্টা করুন। বই পড়ার অভ্যাস না থাকলে কোনও ভাল গল্প পড়ে শোনান, কিন্তু সম্পূর্ণ করার আগেই থেমে যান। সন্তানকে বলুন বাকি অংশ ও যেন আপনাদের পড়ে শোনায়। শিশুসাহিত্যিকদের লেখা একটা করে গল্প পড়ে শোনানোর ফলে মাতৃভাষার প্রতি ধীরে ধীরে আগ্রহও বাড়বে।
• লকডাউনের খারাপ দিক বা কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাস কতটা মারাত্মক সেই বিষয়ে বাচ্চাদের সামনে বেশি আলোচনা না করাই ভাল। তবে বিষয়টি ওদের মতো করে বুঝিয়ে বলুন। এতে পরবর্তীতে ওরা যে কোনও খারাপ সময়ের সঙ্গে লড়তে পারবে।
• নিজেরাও সারা ক্ষণ নিউজ চ্যানেল চালিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা আর মৃতের সংখ্যা দেখবেন না। এতে বাচ্চার মনে মৃত্যুভয় দেখা দিতে পারে।
আরও পড়ুন: লকডাউনে বাচ্চাকে সামলানো যাচ্ছে না? পরামর্শ পেতে ফোন করুন শিশু সুরক্ষা কমিশনে
সন্তানের বই পড়ার অভ্যাস তৈরি করুন।
শিশু রোগবিশেষজ্ঞ নিশান্তদেব ঘটকের পরামর্শ:
• যে সব শিশুর একটু বোধশক্তি তৈরি হয়েছে তাদের বুঝিয়ে বলুন, ‘হোম কোয়ারেন্টাইন’ কী আর তার যৌক্তিকতাই বা কতটা। তা হলে চার দেওয়ালের মধ্যে আটকে থাকার গ্রহণযোগ্যতা অনেকটা বাড়বে ওদের মধ্যে। এক জন ৩-৫ বছর বয়স্ক শিশুদের মধ্যে কিন্তু মৃত্যু সম্পর্কে ধারণা তৈরি হয়ে যায়। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু ও তার সংখ্যা নিয়ে ওদের সামনে বেশি আলোচনা না করাই বাঞ্ছনীয়। অপরিণত মস্তিষ্কে মৃত্যুভয় বাসা বাঁধতে পারে।
• বাড়ির অন্য সবাই যেমন সংসারের সমস্ত কাজ ভাগ করে করছে। আপনার শিশুকেও তার বয়স ও ক্ষমতা অনুযায়ী কাজ ভাগ করে দিন। এর ফলে শিশু এক দিকে স্বাবলম্বী হতে শিখবে, অন্য দিকে সময় কাটবে। তবে কাজে সফল হলে প্রশংসা করতে ভুলবেন না। ধরুন জল দিতে বললেন, দিতে গিয়ে পড়ে গেলে বকাবকি না করে উৎসাহ দিতে হবে। আবার একটুও না ফেলে কাজটা সারতে পারে, তা হলে তাকে উৎসাহিত করুন।
• ছবি দেখা, ছবি আঁকা, বাগান করা, গল্পের বই পড়া, মিউজিক্যাল ইনস্ট্রুমেন্ট বাজানোর মতো কোনও শখ যেটা ঘরে বসেই করা যায়, এমন কিছুতে উৎসাহিত করলে ভাল হয়। বছরের আর পাঁচটা দিনের চেয়ে অভিভাবকদের হাতে কিন্তু একটু বেশিই সময় আছে সন্তানকে দেওয়ার মতো। তাই এই সময়ের সুযোগ্য ব্যবহার করুন।
আরও পড়ুন: ভিড় এড়ান, কিন্তু গোল দাগে দাঁড়ালেই কি আপনি নিরাপদ?
সৃজনশীল কাজে সঙ্গ দিন।
• এই সময় সব বাড়িতেই খাওয়া আর পাঁচটা দিনের চেয়ে অনেক বেশি সহজ ও সংক্ষিপ্ত হওয়া বাঞ্ছনীয়। এর মধ্যে দিয়ে শিশুটি বুঝতে শিখবে যে জীবনে খারাপ-ভাল যে কোনও পরিস্থিতি মেনে নিতে হবে। এই সময় শিশু খাবার যেন একদম নষ্ট না করে তাও শেখান।
• খেয়াল রাখতে হবে বাবা-মার মধ্যের অশান্তি যেন সন্তানকে কোনও ভাবে প্রভাবিত না করে।
• ঘরে বসে বসে বিরক্ত হয়ে দুষ্টুমি করলে তাকে মারধর করবেন না। এতে মনের উপর উল্টো প্রভাব পড়ে শিশুটির মধ্যে হতাশা তৈরি হতে পারে। বরং বুঝিয়ে বলুন।
• এই সময় 'হ্যান্ড হাইজিন 'আর 'কাফ এটিকেট' শেখানোর আদর্শ সময়। এই সময় সোশাল মিডিয়াতে যে ভাবে সুন্দর সুন্দর 'হ্যান্ড ওয়াশিং' পদ্ধতির ছবি ভিডিও দেখা যাচ্ছে বা 'কাফ এটিকেট' যে ভাবে শেখানো হচ্ছে, সেটা আয়ত্ত করে ফেলতে পারলে করোনাভাইরাসকে প্রতিরোধ করার সঙ্গে সঙ্গে বাচ্চাটি সারা জীবন ধরেই অন্য অনেক রোগের আক্রমণ থেকে নিজে রক্ষা পাবে আর অন্যকেও রক্ষা করতে পারবে।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)