অ্যাসিডিটি তাড়াতে মেনে চলুন কিছু নিয়ম। ছবি: শাটারস্টক।
এক মাস হতে চলল কোভিড-১৯-কে আটকাতে আমরা সবাই একপ্রকার গৃহবন্দি। সপ্তাহে এক বা দু’দিন বাজারে যাওয়া ছাড়া বাইরে যাওয়া বন্ধ। অনেকেই ওয়ার্ক ফ্রম হোম করছেন, কারও আবার সে সব পাটও নেই। ওয়েব সিরিজ দেখে, খেয়ে, ঘুমিয়ে, টিভি মোবাইলের মধ্যেই নিজেকে বন্দি রেখেছেন। এক দিকে কায়িক পরিশ্রম কমে গিয়েছে, অন্য দিকে বাড়িতে থাকলেই এটা-ওটা খাওয়ার ইচ্ছা বাড়ে। দুইয়ের মিলিত ফল অ্যাসিডিটি আর মেদ বৃদ্ধি।
কয়েকটি সহজ নিয়ম মেনে চললেই এর হাত থেকে কিছুটা রেহাই পাওয়া যেতে পারে। ডায়েটেশিয়ান ইন্দ্রাণী ঘোষ জানালেন, ‘‘যখন-তখন মুখরোচক মশলাদার ও ভাজা খাবার খেলে এবং নাগাড়ে চুপচাপ শুয়ে বসে থাকলে হজম হতে কিছুটা সমস্যা হয়। এর উপর যাঁরা আবার সিগারেট টানেন, তাঁদের সমস্যা আরও বেশি।’’
অনেকে আবার নিরামিষ খাবার খুব একটা পছন্দ করেন না। এ দিকে লকডাউনের বাজারে সবচেয়ে সহজলভ্য ডিম। অনেকেই প্রত্যেক দিন একাধিক ডিম খেয়ে নেন। তাতেও শরীরের সমস্যা হয়। দিনের পর দিন অন্য খাবার কম খেয়ে শুধুই ডিম বা যে কোনও একটি প্রিয় পদকে কেন্দ্র করে খাবারের পাত সাজালে কিন্তু হজমের সমস্যা বাড়বে। আবার শুয়ে-বসে গা-হাত-পায়ে ব্যথা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই ব্যথার ওষুধ খেয়ে নেন। ব্যথার ওষুধ অ্যাসিডিটি বাড়িয়ে দেয়, হজম হতে অসুবিধা হয়।
আরও পড়ুন: সকলে কিনতে পারবেন না হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন, স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তালিকায় ছাড় কাদের?
ইন্দ্রাণীদেবীর মতে, ‘‘ডিপ ফ্রাই অর্থাৎ ডুবো তেলে ভাজা খাবার খেলে হজমের সমস্যার সঙ্গে সঙ্গে ওজন বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। আবার বাড়িতে থাকলে ঘন ঘন চা-কফি পান করতে ইচ্ছে করে। এই সব কারনেও হজমের সমস্যা হয়। যাঁরা চিনি দেওয়া চা পান করেন, তাঁদের বাড়তি ক্যালোরি শরীরে যায়। অনেকে আবার অ্যাসিডিটি কমাতে কোলা জাতীয় পানীয় খেতে পছন্দ করেন। এর ফলে অ্যাসিডিটির সমস্যা বাড়ে।’’
কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আমাদের ইনেট ইমিউনিটি অর্থাৎ শরীরের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো দরকার। এই পরিস্থিতিতে অ্যাসিডিটি কিংবা হজম ক্ষমতার উপর চাপ ফেলা মোটেও কাজের কথা নয়। রোজকার জীবনে ছোটখাট দু’-একটা পরিবর্তন এনে নিজেকে সুস্থ রাখা এমন কিছু কঠিন নয়। কেমন সে সব?
শরীরচর্চা বাদ দিলে হজমের সমস্যাও বাড়বে।
• সকালে ঘুম থেকে উঠে সম্ভব হলে ছাদে গিয়ে মিনিট দশেক পায়চারি করে আসুন। অসুবিধা থাকলে বারান্দায় বা বাড়ির মধ্যে হাঁটুন।
• চা পানের আগে গরম জলে লেবু আর সামান্য আদার রস মিশিয়ে খান। এই দুটিই ইমিউনিটি বুস্টার, করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে এটি অত্যন্ত উপযোগী।
• চায়ে চিনি বা সুগার ফ্রি নয়, বরং মধু মিশিয়ে খান।
• বাড়ির টুকটাক কাজ করতে পারলে এক দিকে মেদ জমার ঝুঁকি কমে, অন্য দিকে হজম শক্তি ভাল হয়।
• ব্রেকফাস্টের আগে শরীরচর্চা করে নিলে ভাল হয়। অ্যাসিডিটি কমাতে ও হজমশক্তি বাড়াতে পবনমুক্ত আসন, বজ্রাসন সাহায্য করে।
• নাগাড়ে বসে থাকলে মেদ জমার পাশাপাশি হজম করার সমস্যাও হয়। তাই কিছু ক্ষণ পর পর ওঠা-হাঁটা করে আসুন। বাড়িতে বাচ্চা থাকলে তাদের সঙ্গে খেলুন, শরীর-মন দুইই ভাল থাকবে।
আরও পড়ুন: শুধুই ছাদে হাঁটা বা জগিং নয়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ও মেদ ঝরাতে করুন এ সব ব্যায়াম
• অতিরিক্ত নুন খেলে আর খাবারে ফাইবারযুক্ত খাবার না থাকলেও অ্যাসিডিটির প্রবণতা বাড়ে। বাড়তি নুন খাবেন না।
• ধুমপায়ীদের হাইপার অ্যাসিডিটির সম্ভাবনা খুব বেশি। ধূমপান ছেড়ে দিন অবিলম্বে।
• মদ্যপান করলেও অ্যাসিডিটির ঝুঁকি বাড়ে, এই সুযোগে নেশা ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা করুন ।
• ভাজা খাবার খেতে ভাল লাগলেও শরীরের জন্যে মোটেও ভাল নয়। চেষ্টা করুন ভাজার বদলে সেঁকা পাঁপড়, বাদাম, নন স্টিক প্যানে তেল ছাড়া শুকনো ভাজা চিড়ে খেতে।
• শসা, ভেজানো ছোলা ও পেঁয়াজ, বিট নুন, পাতিলেবুর রস দিয়ে চানা বানিয়ে খেতে পারেন। অত্যন্ত মুখরোচক অথচ পুষ্টিকর।
• বার বার খেতে ইচ্ছা করলে নানা রকম বাদাম মিশিয়ে খেতে পারেন। এক দিকে এর পুষ্টিমূল্য অনেক বেশি অন্য দিকে বেশ অনেক ক্ষণ পেট ভর্তি থাকবে।
• পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করুন। বাইরে না বেরলে জল তেষ্টা কম পায়, কিন্তু সারা দিনে ১০–১২ গ্লাস জলপান করুন।
• অ্যাসিডিটির সমস্যা থাকলে খাবার খাওয়ার পর জোয়ান বা মৌরি খেলে অল্প গরম জল খান।
• রাতের খাবার খেয়েই সঙ্গে সঙ্গে ঘুমোলে হজম হতে অসুবিধা হয়। খাওয়ার পর কিছু ক্ষণ বারান্দায় পায়চারি করুন। নিজেদের মধ্যে গল্প করুন। খাওয়ার ঘণ্টা খানেক পর ঘুমোতে গেলে ভাল হয়।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)