Coronavirus in West Bengal

মাস্ক মানেই বেলাগাম হুল্লোড়ের ছাড়পত্র নয়

মাস্ক যেমন পরতেই হবে, তেমনই হাত ধোয়া ও দূরত্ব-বিধি পালন করতেই হবে।

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০২০ ০৩:২৪
Share:

ভিড়: দূরত্ব-বিধির বালাই না রেখেই চলছে দেদার কেনাকাটা। রবিবার, হাওড়া ময়দানে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

‘মাস্ক পরলেই মুশকিল আসান। যতই ভিড়ে ঘুরি না কেন, আমার কিছুই হবে না। কারণ রক্ষাকবচ তো আছেই।’― পুজোয় ঠাকুর দেখার ভিড়ের সপক্ষে এমনই রব উঠতে শুরু করেছে। সেখানে সংক্রমণ ঠেকানোর অন্য সব নিয়ম, অর্থাৎ হাত ধোয়া, দূরত্ব-বিধি বজায় রাখা ক্রমশ গৌণ হয়ে যাচ্ছে বলে শঙ্কিত চিকিৎসকেরা।

Advertisement

তাঁদের বক্তব্য, মাস্ক যেমন পরতেই হবে, তেমনই হাত ধোয়া ও দূরত্ব-বিধি পালন করতেই হবে। তাই যদি না হত, তা হলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বিজ্ঞানী, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসকেরা শুধু মাস্ক পরার কথাই বলতেন। অন্য দু’টি নিয়মের কথা বলতেনই না। ফলে ফুসফুসজনিত যে কোনও সংক্রমণ আটকানোর প্রাথমিক শর্ত— মাস্ক পরা, হাত ধোয়া, দূরত্ব-বিধি বজায় রাখার সব ক’টিই অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে। পরিস্থিতি ও সুযোগ বুঝে শুধুমাত্র একটিকে বেছে নিলে হবে না!

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘সাউথ-ইস্ট এশিয়া রিজিয়ন অফিস’-এর কমিউনিকেবল ডিজ়িজ় বিভাগের প্রাক্তন ডিরেক্টর রাজেশ ভাটিয়া জানাচ্ছেন, সংক্রমণ ঠেকানোর জন্য মাস্কই যে সব থেকে কার্যকরী ও সহজলভ্য, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। মাস্ক পরলে শুধু নিজেই না, আশপাশের মানুষকেও তুলনামূলক ভাবে সুরক্ষিত রাখা যায়। তাঁর কথায়, ‘‘ফলে মাস্ক-সংস্কৃতি গড়ে তুলতেই হবে। এর বিকল্প নেই। কিন্তু মাস্কই সংক্রমণ ঠেকানোর একমাত্র উপায় নয়, এটাও মনে রাখা প্রয়োজন।’’ আরও একটি বিষয় চিন্তায় রাখছে বিশেষজ্ঞদের। তা হল, গত সাড়ে ন’মাসে যাঁরা এখনও সংক্রমিত হননি, তাঁদের একাংশ এটা ভাবতে শুরু করেছেন, ‘তা হলে আমার আর কিছু হবে না!’ ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অব ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্টস’-এর (আইএসিপি) ডিজ়াস্টার ম্যানেজমেন্ট টাস্ক ফোর্সের সদস্য প্রশান্তকুমার রায়ের বক্তব্য, ‘‘আমার আর কিছু হবে না, এই ভাবনা নিয়ম পালনের ক্ষেত্রে বিহেভিয়োরাল অ্যাপাথি (আচরণগত উদাসীনতা) তৈরি করেছে। তাই কোনও মতে মাস্ক পরা এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই না পরার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।’’

Advertisement

তবে প্রবল ভিড়ে অন্য নিয়ম পালন না করে শুধু মাস্ক পরলে যে কোনও কাজই হবে না, তা স্পষ্ট ভাবে জানাচ্ছেন চিকিৎসকদের একটি বড় অংশই। তাঁদের বক্তব্য, দূরত্ব-বিধি উড়িয়ে মণ্ডপ দর্শনের লাইনে ঘেঁষাঘেঁষি ভিড়ে এমনটা মনে করা ভুল হবে যে সংক্রমণ ঠেকানোর একমাত্র পথ মাস্ক। কারণ, হাঁচি-কাশি বা কথা বলার সময়ে ছিটকে আসা থুতুর ড্রপলেটের মাধ্যমে সার্স কোভ-২ ছড়ায়। তবে তুলনামূলক ভাবে বড় হওয়ায় ড্রপলেট ভেসে বেশি দূর যেতে পারে না। কিন্তু ড্রপলেটের চেয়ে ছোট কণা বা এরোসলের মাধ্যমেও সংক্রমণ

ছড়াতে পারে। ক্রিটিক্যাল কেয়ার চিকিৎসক অর্পণ চক্রবর্তী জানাচ্ছেন, মাস্ক ড্রপলেটের সংক্রমণ আটকাতে পারে। কিন্তু এরোসলের মাধ্যমে সংক্রমণের বিস্তার ঠেকানোয় মাস্কের ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। পুজোর সময়ে ভিড়ে মানুষ যে ভাবে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে দাঁড়ান, সেখানে মাস্ক পরলেই ‘আমি বিপন্মুক্ত’, এই ভাবাই ভুল! অর্পণবাবুর কথায়, “শুধু মাস্ক পরে সংক্রমণ ঠেকানো যাবে না। এমনকি এন ৯৫ মাস্ক পরলেও হাত ধোয়া, দূরত্ব-বিধি পালন করা জরুরি।’’ ‘মাইক্রোবায়োলজিস্টস সোসাইটি অব ইন্ডিয়া’-র প্রেসিডেন্ট এ এম দেশমুখের কথায়, ‘‘মাস্ক সংক্রমণের আশঙ্কা অনেকটা কমিয়ে দেয় ঠিকই। কিন্তু শুধু মাস্ক পরে সংক্রমণ ঠেকানো সম্ভব নয়। তাই যদি হত তা হলে বার বার হাত ধোয়া এবং দূরত্ব-বিধি পালনের কথা বলা হত না!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement