Coronavirus

কোভিড-১৯ আক্রান্তদের ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে

সম্প্রতি এক সমীক্ষায় জানা গিয়েছে যে, এই ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে পুরোপুরি সেরে ওঠা কিছু মানুষের ফুসফুস অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোভিড-১৯ ভাইরাসের সংক্রমণের ফলে ফুসফুসের কর্মক্ষমতা কমে গিয়েছে ২০-৩০ শতাংশ।

Advertisement

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০২০ ১৪:০০
Share:

করোনা ভাইরাস সরাসরি আক্রমণ করে ফুসফুসকে।

কোভিড-১৯-এর সব থেকে খারাপ দিক, এই ভাইরাস শ্বাসনালী ও ফুসফুসকে সরাসরি আক্রমণ করে। এর ফলেই যত সমস্যার সূত্রপাত।

Advertisement

সম্প্রতি এক সমীক্ষায় জানা গিয়েছে যে, এই ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে পুরোপুরি সেরে ওঠা কিছু মানুষের ফুসফুস অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোভিড-১৯ ভাইরাসের সংক্রমণের ফলে ফুসফুসের কর্মক্ষমতা কমে গিয়েছে ২০-৩০ শতাংশ। এমনটাই জানালেন কনসালট্যান্ট পালমোনলজিস্ট অশোক সেনগুপ্ত।

এই ভাইরাসের থাবা থেকে মুক্তি পেলেও ফুসফুসের সমস্যা আক্রান্তদের আজীবন সঙ্গী হয়ে থাকে। হংকং হসপিটাল অথরিটির (এইচকেএইচকে) ইনফেকশাস ডিজিজ সেন্টারের একদল চিকিৎসক SARS-CoV-2 করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯ এর আর এক নাম) থেকে সেরে ওঠা রোগীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে এ কথা জানিয়েছেন। দেখা গিয়েছে এদের মধ্যে কারও কারও ফুসফুসের কর্মক্ষমতা ২০ থেকে ৩০ শতাংশ কমে গিয়েছে। তাই অল্প পরিশ্রমেই তাঁদের শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। অবশ্য এখনও এ বিষয়ে খুব বেশি তথ্য জানা যায়নি। কারণ, আক্রান্তদের একটা বড় অংশকেই এখনও পর্যন্ত এই সমীক্ষার আওতায় আনা সম্ভব হয়নি।

Advertisement

আরও পড়ুন: আইসোলেশন, কোয়রান্টিন ও হোম কোয়রান্টিন এগুলোয় ফারাক কী? কখন কোনটা দরকার?​

অশোক সেনগুপ্ত জানাচ্ছেন, নোভেল করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ ছাড়াও অন্যান্য ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের সংক্রমণে নিউমোনিয়া হলে খুব নগণ্য মাত্রায় হলেও ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বিশেষ করে বয়স্ক মানুষদের অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ডিসট্রেস সিনড্রোম (এআরডিএস) হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এ ক্ষেত্রে ফুসফুসের বায়ুপূর্ণ থলি বা অ্যালভিওলাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এক জন সুস্থ পূর্ণবয়স্ক মানুষের ফুসফুসে প্রায় ৪৮ কোটি অ্যালভিওলাই থাকে। ভাইরাসের সংক্রমণে অ্যালভিওলাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বয়স্কদের ক্ষেত্রে এই ক্ষতিপূরণ হওয়া মুশকিল। অপেক্ষাকৃত কম বয়সিদের বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই ক্ষয়ক্ষতি পূরণ হয়ে যায়। তবে, যাঁরা ধুমপায়ী তাঁদের শ্বাসনালী ও ফুসফুস বেশিমাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাঁদের কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি।

একটি চিনা মেডিক্যাল জার্নালের ডিজিটাল সংস্করণে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্র থেকে জানা গিয়েছে যে, ধূমপায়ীরা কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হলে তাঁদের নিউমোনিয়ার ঝুঁকি একজন অধূমপায়ীর থেকে ১৪ শতাংশ বেশি। আসলে মানুষের শ্বাসনালী ও ফুসফুসে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম চুলের মতো অনেক সিলিয়া থাকে। এদের কাজ— শ্বাসনালী ও ফুসফুসের ধূলিকণা, মিউকাস বা শ্লেষ্মা-সহ সব বাধাকে সরিয়ে দিয়ে শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করা। কিন্তু ধূমপায়ীদের এই সিলিয়াগুলি কার্যত অকেজো হয়ে যায়। আর সে কারণেই ফুসফুসের যুদ্ধ করার ক্ষমতা কমে যায়। অনেকে সিগারেটের বদলে ই-সিগারেট পান করেন। ভেপিংয়ের ফলেও ফুসফুস ও শ্বাসনালী একই রকম ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

আরও পড়ুন: মাল্টিভিটামিন খেলেই কি করোনা-সংক্রমণ এড়ানো যাবে?

SARS-CoV-2 করোনাভাইরাসকে এড়াতে প্রথমেই ধূমপান বন্ধ করতে হবে। বেশি বয়সে শরীর কমজোরী হয়ে পড়ায় কোভিড-১৯ দ্রুত গ্রাস করে মারাত্মক আকার নিতে পারে। ঠিক যেমনটি হয়েছে ইটালিতে। সাধারণ পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি বিশেষ দরকার না পড়লে বাড়ির বাইরে না যাওয়াই ভাল। বিশ্ব জুড়ে কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা ২ লক্ষ ছাড়িয়েছে, মারা গিয়েছেন ৮ হাজারের বেশি মানুষ। কলকাতা শহরেও ঢুকে পড়েছে কোভিড -১৯ ত্রাস। বিশেষজ্ঞরা আশ্বস্ত করছেন, এ রোগে মৃত্যুর হার তুলনামূলক ভাবে অনেকটাই কম। কিন্তু, ইটালিতে আক্রান্তদের অতিরিক্ত মৃত্যুহারে চিন্তিত চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা।

এই মারণ ভাইরাসের হাত থেকে নিজেদের বাঁচাতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) এবং এ দেশের সরকার যে নিয়মবিধি চালু করেছে, তা মেনে চলা উচিত।

• বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে যাবেন না।

• ধূমপান, মদ্যপানের মতো নেশা ছেড়ে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করুন।

• খাবার আগে ভাল করে হাত সাবান দিয়ে ধুতে হবে। অকারণে মুখে-নাকে-চোখে হাত দেবেন না।

• হাঁচি, কাশি, গলাব্যথা বা সর্দি-জ্বর হলে অবশ্যই আলাদা থাকুন ও চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

• ভিটামিন-এ জীবাণুদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে। তবে ট্যাবলেট ক্যাপসুল নয়, খাবারে থাকা ভিটামিনই ভাল। ভিটামিন-এ পাওয়া যায় গাজর, কমলালেবু, টোম্যাটো, ডিমের কুসুম, পালংশাক, রাঙা আলু, ব্রোকোলি-সহ নানা টাটকা ফল ও সব্জিতে।

• ভিটামিন-ডি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। নিয়ম করে একটু রোদ্দুরে ঘোরাঘুরি করলেই চলবে। সঙ্গে দুধ বা দুগ্ধজাত খাবার, মাশরুম, ডিম খেতে হবে।

• আমলকি-সহ সব ধরনের লেবুতে থাকা ভিটামিন-সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

• অসুখ সম্পর্কে সচেতন থাকুন। অযথা ভয় পাবেন না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement