অ্যান্টিবডি ককটেল কিনতে পারবেন ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন দেখিয়ে। ছবি: সংগৃহিত
‘রশ’ এবং ‘সিফলা’র যৌথ উদ্যোগে ভারতে সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে কোভিড চিকিৎসার নতুন ওষুধ, অ্যান্টিবডি ককটেল। আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত বছর যখন করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন, তখন রশের তৈরি অ্যান্টিবডি ককটেলের ডোজ দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। কাসিরিভিমাব এবং ইমডেভিমাব— এই দু’টি পরীক্ষামূলক ওষুধ দিয়েই তৈরি করা হয়েছে ওই ককটেল। ভারতে একেকটা ডোজের দাম ৫৯,৭৫০ টাকা। তাই এই চিকিৎসাও যথেষ্ট খরচসাপেক্ষ।
কারা ব্যবহার করতে পারেন?
যে কোভিড রোগীদের ক্ষেত্রে ভাইরাসের প্রভাব গুরুতর হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি, তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করানোর মতো পরিস্থিতি যাতে না হয়, তার জন্য এই ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে বলে জানানো হয়েছে নির্মাতাদের তরফ থেকে। ১২ বছরের বেশি বয়সের যে কোনও করোনা রোগী এটি নিতে পারেন। ওজন অন্তত ৪০ কেজি হতে হবে।
কাদের ঝুঁকি বেশি?
নির্মাতাদের তালিকা অনুযায়ী যাঁদের কোভিডের প্রভাব মারাত্মক হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি বেশি—
১। ৬০ বছরের উপর বয়স
২। ওবেসিটি
৩। হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ
৪। ফুসফুসের রোগ
৫। টাইপ ১ বা টাইপ ২ ডায়বেটিস
৬। ডায়ালিসিস বা বৃক্কর রোগ
৭। যকৃতের রোগ
৮। ক্যানসার, এইচআইভি, থ্যালাসেমিয়া বা অ্যানিমিয়ার মতো দীর্ঘ রোগের কারণে যাঁদের রোগ প্রতিরধক ক্ষমতা এমনিই কম
কী ভাবে কাজ করে
দু’টো ভিন্ন মোনোক্লোনাল অ্যান্টিবডির মিশেল এই ওষুধ। এই ধরনের অ্যান্টিবডি ল্যাবরেটরিতে তৈরি করা হয় কোনও নির্দিষ্ট রোগের সঙ্গে লড়াই করার জন্য। এই মোনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি শরীরে ঢুকে সার্স-সিওভি-২’র স্পাইক প্রোটিনের সঙ্গে লড়াই করে। এবং শরীরের বিভিন্ন কোষে যাতে ভাইরাস না ঢুকতে পারে, সেটা নিশ্চিত করে।
কী ভাবে কিনবেন
ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন দেখিয়ে প্রায় ৬০ হাজার টাকা দিয়ে কিনতে হবে। চিকিৎসক এই ওষুধ দেওয়ার পর ১ ঘণ্টা দেখা হবে শরীরে কোনও রকম ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে কিনা। না হলে ঘণ্টাখানেক পর রোগীকে ছেড়ে দেওয়া হবে।
কতটা কার্যকরী
মৃদু বা সামান্য বেশি উপসর্গ রয়েছে এমন কোভিড রোগীদের যাতে হাসপাতালে ভর্তি করানোর মতো পরিস্থিতি না হয়, তা নিশ্চিত করতে ৭০ শতাংশ কার্যকরী এই ওষুধ বলে দাবি করেছেন নির্মাতারা। তবে চিকিৎসকদের একাংশ এই বিষয়ে খুব একটা নিশ্চিত নন। চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী বললেন, ‘‘যে কোনও ড্রাগ বা ওষুধ দু’রকম হতে পারে। এক, যা পর্যবেক্ষণ করে কিছু চিকিৎসক সম্মতি দিয়েছেন, দুই যেটা র্যান্ডমাইজড কন্ট্রোল ট্রায়ালের (আরসিটি) মধ্যে দিয়ে পাশ হয়েছে। এখনও পর্যন্ত করোনার চিকিৎসায় একমাত্র ৩টে ওষুধই নিশ্চিতভাবে কার্যকরী— স্টেরয়েড, অক্সিজেন থেরাপি এবং কিছু ক্ষেত্রে অ্যান্টি কোয়াগুলেন্ট (থ্রমবোসিস বা রক্তে জমাট বাঁধা আটকাতে)। এগুলো আরসিটি’র মধ্যে দিয়ে পাশ হয়েছে। বাকি সবই হয়তো কারও কারও ক্ষেত্রে কাজ করেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প এক সপ্তাহে সেরে গিয়েছেন বলে সকলেই সেরে যাবেন, এমন কোনও নিশ্চয়তা নেই।’’
আরসিটি নানা রকম ভাবে করা যেতে পারে। সুবর্ণবাবু বোঝালেন, দু’দল ছেলে মেয়েকে বেছে নেওয়া হয়। একই উপসর্গ থাকাকালীন হয়তো এক দলকে স্টেরয়েড (উদাহরণ স্বরূপ) দেওয়া হল, আরেক দলকে হল না। দেখা গেল যাঁদের স্টেরয়েড দেওয়া হল তাঁদের মধ্যে বেশি শতাংশ মানুষ সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তখন আরও কিছু পর্যায় এই পরীক্ষাগুলো চলতে থাকে। যে ওষুধ পাশ করে, তাকে কার্যকরী ধরে নেওয়া হয়।
কিন্তু চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণ দ্বারা যে ওষুধ পাশ হয়, তা নিয়ে একটা সংশয় থেকেই যায়। তিনি বললেন, ‘‘ধরুন ক্যালিফোর্নিয়ার সেরা হাসপাতালে মোনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি দেওয়ায় ১০০০ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। কিন্তু সেই ১০০০ জনের সঙ্গে পৃথিবীর বাকি মানুষদের অনেক পার্থক্য থাকতেই পারে। তাই কোনও ওষুধের পরীক্ষা নিয়ে যদি বিশ্ব স্বীকৃত কোনও প্রত্রিকায় গবেষণা-তথ্য প্রকাশ না করা হয়, তা হলে সেই ওষুধ নিয়ে সংশয় থেকেই যায়। রেমডেসিভির বা প্লাজমা থেরাপি আমরা গত বছর অনেক ব্যবহার করে দেখেছিলাম। কিন্তু শেষমেশ সেগুলো তো বাতিল হয়ে গেল! অ্যান্টিবডি ককটেলের দামও নেহাত কম নয়। প্রিয়জনকে বাঁচাতে হয়ত মানুষ বহু কষ্টে এই অর্থ জোগাড় করলেন, কিন্তু শেষরক্ষা হল না! তাই কোনও বিষয়ে ভাল করে পরীক্ষা না করেই বাজারে এনে সাধারণ মানুষকে উদ্ভ্রান্ত করা উচিত নয়।’’