ত্বকের যত্ন নিন

অতিরিক্ত রোদেও বিপদ, সানস্ক্রিন ব্যবহারে এ গুলি মেনে চলছেন তো

অনেকেই ইদানিং রোদে ঘোরাফেরা শুরু করছেন। কারণ লকডাউনে দীর্ঘ সময় বাড়িতে ছিলেন । বাড়ছে ত্বকের নানা সমস্যা।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০২০ ১৪:২৪
Share:

চটজলদি জেল্লা আনতে এমন কিছু ব্যবহার করবেন না যা আপনার ত্বককে ক্ষতি করতে পারে। ফাইল ছবি

ভিটামিন ডি-৩ নভেল করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ আটকে দিতে পারে। আনলক পর্ব শুরু হতেই এই ভিটামিনের জন্য ইদানিং রোদে ঘোরাফেরা শুরু করছেন অনেকেই। কারণ লকডাউনে দীর্ঘ সময় বাড়িতে ছিলেন অনেকেই। এর ফলে বাড়ছে ত্বকের নানা সমস্যা।

Advertisement

সরাসরি রোদ থেকে অতিবেগুনি রশ্মি ত্বকের সংস্পর্শে এসে ত্বকের সমস্যা ডেকে আনে, বলছিলেন ইনস্টিটিউট চাইল্ড হেলথের অধ্যাপক, ইন্ডিয়ান সোসাইটি ফর পেডিয়াট্রিক ডার্মাটোলজির প্রেসিডেন্ট ত্বক বিশেষজ্ঞ সন্দীপন ধর।

নিয়ম করে যাঁরা বাইরে বের হন, তাঁদের শরীরের খোলা অংশে সানস্ক্রিন লাগানো আবশ্যক। সূর্য যখন আমাদের মাথার উপরে থাকে, রোদ্দুরের ইনফ্রা রেড রশ্মি সরাসরি ত্বকের উপরে পড়ে, গরমে বেশি কষ্ট হয়। সঙ্গে থাকে বেগনি পারের আলো আর লাল উজানি আলো অর্থাৎ অতিবেগুনি এ ও বি রশ্মি।

Advertisement

আরও পড়ুন: করোনা হয়নি, প্রবল জ্বরে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েছি, লিখছেন সেরে ওঠা রোগী​

সূর্যের আলোর অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে ত্বকের নানা ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি থাকে, বললেন সন্দীপনবাবু। অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে ত্বকে পিগমেন্টেশন হয়ে কালচে হয়ে যায়, কালো ছোপ পড়ে। এই অতি বেগুনি রশ্মি দিনের আলোতে সারাক্ষণই থাকে বলে দিনে বাইরে বেরলেই সানস্ক্রিন মাখতে হবে। এছাড়াও ফোটো ডার্মাটাইটিস, জেরো পিগমেন্টেশন বা এরিথোমাটোসাসের মতো ত্বকের অসুখের রোগীদের রোদ লাগলে ত্বক জ্বালা করে, কষ্ট হয়। এঁদের চিকিৎসকের পরামর্শ মতো সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে।

ত্বক বিশেষজ্ঞ শেখর হালদার জানালেন যে, বাইরে যাওয়ার ন্যূনতম ২০ মিনিট আগে ৩০ বা তার বেশি এসপিএফ যুক্ত সানস্ক্রিন মেখে বাইরে যাওয়া উচিত। শরীরের অনাবৃত অংশে সানস্ক্রিন মাখতে হয়। অনেকের ধারণা, মেঘলা দিনে সানস্ক্রিন অপ্রয়োজনীয়। কিন্তু এই ধারণা একেবারেই ঠিক নয়, মেঘ বা কুয়াশা রোদ্দুরের ইনফ্রা রেড আটকায় বলে গরম কম হয়, কিন্তু অতি বেগুনি রশ্মিকে আটকাতে পারে না। তাই বাড়ির বাইরে যেতে হলে সানস্ক্রিন আবশ্যিক, বললেন শেখরবাবু। সানস্ক্রিন ত্বককে সূর্যালোক থেকে ছাতার মতো আড়াল করে রাখে। তাই সব ঋতুতেই, দিনের যে কোনও সময়ে বাইরে বেরতে হলে ত্বকে সানস্ক্রিন লাগানো জরুরি বলে পরামর্শ দিলেন শেখর হালদার।

চোখের তলায় সানস্ক্রিন লোশন ব্যবহার করুন তবে তা যেন মেডিকেটেড হয়। ফাইল ছবি।

যথাযথ নিয়ম মেনে ব্যবহার না করলে সানস্ক্রিন লাগিয়েও অনেকের ত্বকে কালো ছোপ পড়ে, বললেন সন্দীপন ধর। সানস্ক্রিন ক্রিম বা লোশন ব্যবহারের নিয়ম করে‌ বাইরে বের হওয়ার ১৫-২০ মিনিট আগে অনেকটা ক্রিম বা লোশন নিয়ে ঘাড়, মুখ, হাত, হাতের কনুই প্রভৃতি শরীরের খোলা অংশে আলতো করে লাগিয়ে নিতে হবে। জোরে ঘষা চলবে না। নাগাড়ে রোদে ঘুরে বেড়াতে হলে ২.৫–৩ ঘণ্টা পর পর সানস্ক্রিন লাগানো দরকার।

আরও পড়ুন: বর্ষার আবহে করোনা দোসর, জামাকাপড় যত্নে রাখতে এই সব মানতেই হবে

যাঁদের ত্বক সংবেদনশীল, তাঁদের জন্য মেডিকেটেড সানস্ক্রিন ভাল, বললেন শেখরবাবু। এলইডি লাইট থেকেও অতিবেগুনি রশ্মি নির্গত হয়। তাই সংবেদনশীল ত্বক হলে বিদ্যুতের আলোর নীচে থাকলেও সানস্ক্রিন লাগানো উচিত বলে শেখরবাবু মনে করেন। ছোটদের ২ বছর বয়সের পর থেকেই সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত। যদিও কোভিড-এর কারণে বাচ্চাদের বাইরে বেরনো অনেক কমে গেছে, কিন্তু বাইরে যেতে হলে সানস্ক্রিন বাধ্যতামূলক, পরামর্শ সন্দীপনবাবুর। এছাড়া যাঁদের পেশার কারণে মেক-আপ করতে হয়, তাঁদেরও মেক-আপের আগে সানস্ক্রিন লাগিয়ে নেওয়া উচিত।

কেবল মাত্র রোদ্দুরেই নয়, অতিরিক্ত চড়া কৃত্রিম আলোয় কাজ করতে হলেও সানস্ক্রিন লাগানো উচিত। ইদানিং মাস্ক ও ফেস শিল্ড পরতে হচ্ছে বলে অনেকেই সানস্ক্রিন লাগান না। মাস্ক বা শিল্ড কোভিড-১৯-কে আটকালেও অতিবেগুনি রশ্মিকে আটকাতে পারে না, বললেন সন্দীপনবাবু।

আমাদের দেশের আবহাওয়ায় সাধারণত মানুষ ২০-৩০ এসপিএফের সান স্ক্রিন ব্যবহার করেন, ৭০–৮০ এসপিএফ যুক্ত সানস্ক্রিন খুব একটা দরকারি নয়।

শেখরবাবুর মতে, ত্বকের ধরন জেনে নিয়ে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে মেডিকেটেড সানস্ক্রিন ব্যবহার করলে ভাল হয়। এই ক্রিম ২.৫–৩ ঘণ্টা ত্বককে অতিবেগুনি রশ্মি থেকে বাঁচাতে পারে। মেডিকেটেড সানস্ক্রিন ৩ ঘণ্টা কার্যকর থাকলেও কসমেটিক সানস্ক্রিনের কার্যকারিতা কমতে শুরু করে ৩০ মিনিট পর থেকেই ।

বাচ্চাদের সংবেদনশীল ত্বকে কখনই কসমেটিক সানস্ক্রিন লাগানো উচিত নয়। যাঁদের ত্বক অতিবেগুনি রশ্মির প্রতি অতি মাত্রায় সংবেদনশীল, তাঁদের উচিত বাড়িতেও সানস্ক্রিন মেখে থাকা। ডায়বিটিস বা থাইর‍য়েডের সমস্যায় নিয়মিত ওষুধ খেলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে ত্বক অতিমাত্রায় সংবেদনশীল হয়ে পড়তে পারে। এছাড়া, কারও বাড়িতে প্রখর সূর্যালোকিত থাকলেও বাড়িতে সানস্ক্রিন ব্যবহার করা দরকার বলেই পরামর্শ দিলেন দুই চিকিৎসক।

আরও পড়ুন: আক্রান্তের বীর্যেও এ বার মিলল করোনাভাইরাসের আরএনএ!​

করোনা আবহে কী করতে হবে

ত্বকের যত্নের প্রাথমিক শর্ত পরিচ্ছন্নতা। সানস্ক্রিন লাগানোর আগে মুখ ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন। করোনা পরিস্থিতিতে বাইরে থেকে ফিরেও হালকা সাবান দিয়ে হাত মুখ, চোখ ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে, সে কথা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। বৃষ্টির দিনে পুজোর বাজার করতে গেলেও সানস্ক্রিন লাগাতে ভুললে চলবে না। ত্বকই হল সুস্থ শরীরের আয়না, ত্বকের যত্ন নিন, ভাল থাকুন।

(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।

• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement