প্রিয় পোষ্যটিকে যত্নে রাখুন সবসময়। ফাইল ছবি।
নিউ ইয়র্কের চিড়িয়াখানায় বাঘের শরীরে সার্স কোভ ২ ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছিল। এই খবর জেনে ভয়ে অনেকে তাঁদের আদরের পোষ্যদের বাড়ি থেকে বার করে দিতে শুরু করেছিলেন। জন্ম ইস্তক মানুষের আদর ভালবাসা পেয়ে অভ্যস্ত এই “না-মানুষেরা” নিশ্চিন্ত গৃহকোণ থেকে পথে নেমে ভয়ানক অসহায় হয়ে পড়েছে।
কলকাতা-সহ নানা শহর, মফঃস্বলে এমনকি গ্রামেও এই ঘটনা দেখা যাচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ভাইরোলজিস্ট সিদ্ধার্থ জোয়ারদার জানালেন, মানুষের থেকে গৃহপালিত প্রাণীদের মধ্যে সার্স কোভ ২ ভাইরাস ছড়ায়, এর প্রমাণ আছে। কিন্তু এই ভাইরাস পোষ্যদের থেকে মানুষের শরীরে আসে না এটি পরীক্ষিত সত্য।
অনেকেই ভুল ভাবনার বশবর্তী হয়ে বাড়ির পোষা প্রাণীটিকে তাড়িয়ে দেন। এই ব্যাপারটা অত্যন্ত অমানবিক। গৃহপালিত প্রাণী তা সে কুকুর, বিড়াল, খরগোশই হোক বা বিদেশি পাখি এখনও পর্যন্ত কোনও পোষ্যের শরীর থেকে করোনা ভাইরাস মানুষকে সংক্রামিত করেনি। এই নিয়ে কোনও রকম সন্দেহের অবকাশ নেই, জোর দিয়ে বললেন সিদ্ধার্থবাবু।
আরও পড়ুন: জ্বর না হয়েও করোনা আক্রান্ত অনেকেই, এ সব বিষয়ে সতর্ক হতে বলছেন চিকিৎসকরা
শুধু তাই নয় মাসখানেক আগে মুরগির মাংস, পাঁঠার মাংস বা ডিম খাওয়ার ব্যাপারেও অনেকে দ্বিধায় ভুগছিলেন। প্রাণী বিষয়ক গবেষণায় একথা প্রমাণিত পোলট্রি বা বা যে কোনও পশুপালন কেন্দ্রে পালন করা প্রাণীর মাংস বা ডিম রান্না করে খেলে তার থেকে করোনা ছড়িয়ে পড়ার কোনও রকম সম্ভাবনা নেই।
আরও পড়ুন: দ্বিতীয় বার করোনা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কতটা? রোগ ফেরার ভয় কাদের বেশি?
নিশ্চিন্তে প্রাণীজ প্রোটিন খাওয়া যেতেই পারে বলে আশ্বস্ত করলেন সিদ্ধার্থবাবু। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে একটি পোষা বিড়ালের শরীরে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পাওয়া যায়। তার পরেই ভয় ও উদ্বেগ বাড়ে। কিন্তু প্রাণী ও ভাইরাস বিশেষজ্ঞরা এ ব্যাপারে নিশ্চিত করেছেন যে বিড়ালটির যিনি দেখভাল করতেন তিনি কোভিড ১৯ পজিটিভ ছিলেন। তাঁর মাধ্যমেই বিড়ালটি সংক্রমিত হয়ে পড়ে। দুজনেই এখন কোভিড মুক্ত।
ব্রিটেনের চিফ ভেটেরিনারি অফিসার ক্রিস্টিন মিডলমিস বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান যে, মানুষ থেকে পোষ্য প্রাণীতে সার্স কোভ ২ সংক্রমিত হলেও তাদের থেকে মানুষের সংক্রমণের কোনও ঘটনার কথা এখনও পর্যন্ত শোনা যায়নি। একই সঙ্গে তিনি এও জানিয়েছেন, পোষ্য প্রাণীদের কোভিড ১৯ সংক্রমণ হলে অল্প বিস্তর উপসর্গ দেখা যায় ও তা দু’চার দিনের মধ্যে সেরে যায়, এ নিয়ে অযথা আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই।
ভাইরাস পোষ্যদের থেকে মানুষের শরীরে আসে না এটি পরীক্ষিত সত্য। ফাইল চিত্র।
নেদারল্যান্ডসে কয়েকটি মিঙ্ক ( রোমশ স্তন্যপায়ী প্রাণী) ফার্মের মিঙ্কদের মধ্যে কোভিড ১৯-এর সংক্রমণ ধরা পড়ে। তাদের যাঁরা দেখভাল করতেন তাঁদের থেকেই ওদের মধ্যে রোগ ছড়িয়ে পড়েছে সেই প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। মিঙ্কদের থেকে করোনা মানুষে যায়নি সেই ব্যাপারেও বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত। অথচ ভয় পেয়ে প্রচুর মিঙ্ককে মেরে ফেলা হয়েছে।
এ ছাড়া ফেরেট নামে এক বিশেষ প্রাণী যাদের পরীক্ষাগারে গবেষণার ট্রায়ালের কাজে লাগানো হয় তাদের শরীরে সার্স কোভ ২ জীবাণুর সংক্রমণ পাওয়া গেছে, কিন্তু তাদের থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রমণের কোনও চিহ্ন নেই। ইতিমধ্যে ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা ও এশিয়ার কোনও কোনও জায়গায় পোষ্যদের মধ্যে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণের খবর পাওয়া গেলেও তাদের থেকে আজ পর্যন্ত কোনও মানুষের সংক্রমণ হয়নি হওয়ার কোনও আশঙ্কাও নেই বলে জানালেন সিদ্ধার্থ।
এই প্রসঙ্গে ভাইরোলজিস্টদের পরামর্শ যাঁদের বাড়িতে কুকুর, বিড়াল বা অন্যান্য পোষ্য আছে তাঁদের কয়েকটা ব্যাপারে সাবধানতা মেনে চলা উচিত। তাঁরা বা বাড়ির অন্যরা কোভিড পজিটিভ হলে পোষ্যদের থেকে দূরে থাকবেন। হাঁচি কাশি কিংবা কথা বললে ড্রপলেটের মাধ্যমে প্রাণীদের লোমে ভাইরাস চলে যায়। আর প্রাণীরা লোম চাটতে গিয়ে সংক্রমিত হয়ে পড়ে। বাইরে থেকে বাড়িতে ফিরলেও পোষ্যরা কাছে আসে।এই ব্যাপারেও নজর রাখা দরকার।
আরও পড়ুন: আসল এন৯৫ চিনবেন কী করে? সংশয় হলে কী করবেন?
বাইরের হাত পা পরিষ্কার করে পোশাক পরিবর্তন করে তবেই ওদের কাছে যাবেন। বাড়ির অন্যান্য সদস্যদের বা বাচ্চাদের ক্ষেত্রে যে নিয়ম মানতে হয় পোষ্যদের ক্ষেত্রেও সেই নিয়ম জারি রাখা দরকার বলে মনে করেন তিনি। ইটালিতে পোষ্য কুকুরদের মধ্যে কোভিড সংক্রমণ দেখা গিয়েছিল, ওরা সংক্রমিত হয়েছিল মানুষের থেকে।
আরও পড়ুন: প্রায় উপসর্গহীন বা সামান্য উপসর্গের করোনা আক্রান্তরা কী করবেন?
সুতরাং অকারণে অবলা প্রাণীদের উপর বিরূপ হবেন না। নিজেরা ভাল থাকুন, পোষ্যদের যত্ন করুন, ভাল রাখুন।
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)