প্রতীকী ছবি। ছবি: সংগৃহিত
কারও বস্ত্র বিপণি বন্ধ বহুদিন। কারও গোটা ব্যবসাই অনলাইনে। গত বছরের একটানা লকডাউনের লাভ-ক্ষতি হিসাব করার আগেই এ বছর ফের দ্বিতীয় ঢেউয়ে জেরবার শহরের ডিজাইনারেরা। ব্যক্তিগত অসুস্থতা বা মানসিক উদ্বেগ সামলে তাঁরা নেটমাধ্যমে নিজেদের সৃষ্টি ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু তাতেও বাধা-বিপত্তির অন্ত নেই। পণ্যের ছবি বা কোনও ফোটোশ্যুটের ছবি দিতেই তাঁদের সামাজিক পাতা ভরে যাচ্ছে কটাক্ষে। ‘লোকে করোনায় মরছে, কে শাড়ি ব্লাউজ কিনবে’ বা ‘অতিমারিতে লোকের চাকরি নেই, আর ফোটোশ্যুটের কী ঘটা’— এই জাতীয় মন্তব্য রোজই উড়ে আসছে তাঁদের কাছে। নিত্যদিনের এই কটাক্ষ কী করে সামলাচ্ছেন তাঁরা? খোঁজ নিল ‘আনন্দবাজার অনলাইন’।
শাড়ি-ব্লাউজ না বেচলে কেউ প্রাণ হারাতেও পারেন
ডিজাইনাররা একটা কথাই মনে করাতে চান, তাঁদের সৃষ্টির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে অনেকগুলো মানুষের প্রাণ। শহরের বিখ্যাত ডিজাইনার পরমা ঘোষ এই প্রসঙ্গে বললেন, ‘‘ব্যবসায় লাভ করার কথা এখন কেউ চিন্তাই করতে পারেন না। কিন্তু আমার সঙ্গে যে ক’জন কারিগর কাজ করছেন, তাঁদের তো প্রত্যেক মাসে বেতন দিতে হবে। অফুরন্ত সঞ্চয় কারওরই থাকে না। ব্যবসা না চললে কী করে তাঁদের মাইনে দেব? যখন কেউ কটাক্ষ করে বলেন এই পরিস্থিতিতে কে শাড়ি-ব্লাউজ কিনবে, তাঁদের মনে রাখা উচিত, শাড়ি-ব্লাউজ না বেচলে হয়তো একজনের প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হবে না। লকডাউনে সব বন্ধ থাকলেও পেট তো আর বন্ধ রাখা যায় না।’’
ব্যক্তিগত টানাপড়েন
‘আর্থমেন্টস’-এর কর্ণধার মোনালিসা মান্না জানালেন, তিনি নিজেও দ্বিতীয় ঢেউয়ের শুরুতে নানা রকম মানসিক টানাপড়েনের মধ্যে দিয়ে গিয়েছিলেন। অনেকদিন কোনও গয়না বা কোনও ফোটোশ্যুটের ছবি পোস্ট করতে পারেননি। ‘‘আমাদের সৃষ্টির অনুপ্রেরণা সাধারণ মানুষই। কালীঘাটের বাজারে বিক্রেতা কী ভাবে শাড়ি পরেছেন, লেক মার্কেটের মাছওয়ালি কী ধরনের নাকে নথ পরেছেন, এগুলো না দেখলে আমাদের অনুপ্রেরণা আসবে কোথা থেকে? বাড়ি বসে তা সম্ভব নয়। তাই লকডাউনে মন ভাল ছিল না। ব্যবসার কথা কিছুই মাথায় থাকত না। কিন্তু আমার কাজের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে আরও অনেক মানুষের জীবন। তাই ধীরে ধীরে হলেও ফের আমার জিনিসগুলোর ছবি নেটমাধ্যমে দেওয়া শুরু করি। ২০টার বদলে ১টা জিনিস বিক্রি হলেও তো একজনের পেট চলবে,’’ বললেন মোনালিসা।
প্রতীকী ছবি। ছবি: সংগৃহিত
অতিমারিতে নিজে বাঁচো, অন্যের কাজে ক্ষতি করো না
দেশের অর্থনীতির এমন পরিস্থিতিতেও কেউ যদি কাজ করে সংসার চালাতে পারেন, তা তো ভাল কথা। কেন অন্যেরা সেই কাজে উৎসাহ না দিয়ে কটাক্ষ করছেন? প্রশ্ন পরমার। একই কথা জানালেন শহরের আর এক ডিজাইনার সায়ন্তনী বরুয়া। ‘‘এত লোকের কাজ চলে গিয়েছে লকডাউনের জন্য। যাঁদের রয়েছে, তাঁদের পিছনে না লেগে, নিজে কী ভাবে বাঁচা যায়, সেটি নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে পারেন সকলে,’’ বক্তব্য তাঁর।
ভাল থাকার জন্য জরুরি
অতিমারিতে নানা রকম মানসিক সমস্যা বেড়েছে। পরমা নিজে গত বছর বেশ কয়েকটা প্রদর্শনী করতে পারেননি। তিনি নিজে কোভিড-আক্রান্ত হয়ে পড়ায় ব্যবসার ক্ষতি হয়েছিল অনেক। কিন্তু এ বছর তিনি অনেক বেশি প্রস্তুত ছিলেন লকডাউনের জন্য। ব্যবসা কী ভাবে সামলাবেন, তা জানা ছিল। ‘‘শুধু ব্যবসার জন্য নয়, কাজের মধ্যে থাকলে মনও অনেক বেশি শান্ত থাকে। বাড়তি উদ্বেগ কমে যায়। তাই কাজে মন দিয়েছি এ বছর,’’ বললেন তিনি। মোনালিসারও একই মত। তিনি বললেন, ‘‘আমার সঙ্গে যাঁরা কাজ করেন তাঁরা বারবার প্রশ্ন করছেন। কবে থেকে কাজ শুরু করব, জানতে চাইছেন। তাঁদের উৎসাহ দিতে আমিও ফের কাজ শুরু করেছি। কাজ না থাকলে আমারই বা কী নিয়ে বাঁচব!’’