Durga Puja 2023

প্লাস্টিকের ব্যানারে মোড়া শহর নয়, দুর্গাপুজোয় বিজ্ঞাপনের বার্তা লেখা হোক কাপড়, ক্যানভাসেই

ক্লাইমেট চেঞ্জ, আর্থডে.ওআরজি ডিরেক্টর অজয় মিত্তলের পিটিশনে কলকাতা পুরসভার কাছে উৎসবের মরসুমে শহর জুড়ো প্লাস্টিকের ব্যানার, ফ্লেক্স ব্যবহার ও ফেলে দেওয়ার বিষয় যথাযথ নির্দেশিকা জারি করার জন্য আবেদন করা হয়েছে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২০:৩৪
Share:

পুজোয় দূষণের হাত থেকে বাঁচুক শহর। ছবি: শাটারস্টক।

২০২২ সাল থেকে ইউনেস্কোর ‘ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ’-এর তালিকায় ঢুকে পড়েছে কলকাতার দুর্গাপুজো। তা নিয়ে বাঙালিদের উত্তেজনার খামতি নেই। মাস গড়ালেই আবার পুজো আসছে। চারদিকে এখন থেকেই সাজ সাজ রব। পাড়ায় পাড়ায় মণ্ডপসজ্জার কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। আর শুরু হয়ে গিয়েছে মণ্ডপের বাইরে এলাকা জুড়ে ফ্লেক্স, ব্যানার, হোর্ডিং লাগানোর কাজ। একটা সময় ছিল যখন বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়ে লোকে পুজোর ভিড় উপভোগ করতেন, তবে এখন আর সেই সুযোগ নেই। গোটা শহর যেন প্লাস্টিকের মোড়কে ঢেকে যায়, পুজোর ক’দিন। সোনার গয়না থেকে অন্তর্বাস, টিএমটি বার থেকে তামাকজাত পদার্থ— বিভিন্ন সংস্থার প্লাস্টিকের হোর্ডিং ইতিমধ্যেই লাগানো শুরু হয়ে গিয়েছে শহরের নানা প্রান্তে। এই সব হোর্ডিং, ব্যানার মূলত তৈরি হয় পিভিসি (পলি ভিনাইল ক্লোরাইড) দিয়ে। পুজোর পর সেই সব হোর্ডিং খুলে ধাপার মাঠে পোড়ানো ছাড়া উপায় নেই। আর তাতেই বাড়ছে পরিবেশ দূষণের মাত্রা। পুজোর ক’দিন পরিবেশ বাঁচাতে মৃত্তিকা আর্দি টক্‌স ফাউন্ডেশনের ডিরেক্টর সোমিনী সেন দুয়া, পরিবেশকর্মী স্বাতী নন্দী চক্রবর্তী এবং ক্লাইমেট চেঞ্জ, ‘আর্থডে ডট ওআরজি’-র অধিকর্তা অজয় মিত্তল মিলিত ভাবে উদ্যোগী হয়েছেন। দুর্গা পুজোয় প্লাস্টিকের ব্যানার ব্যবহারের বিষয় জনগণকে আরও সতর্ক করতে অজয় সমাজ ও পরিবেশ সচেতনতা নিয়ে কাজ করে এমন একটি সংস্থা ‘চেঞ্জ ডট ওআরজি’-তে একটি পিটিশন ফাইল করেছেন ইতিমধ্যেই। পিটিশনে কলকাতা পুরসভার কাছে উৎসবের মরসুমে শহর জুড়ো প্লাস্টিকের ব্যানার, ফ্লেক্স ব্যবহার ও ফেলে দেওয়ার বিষয় যথাযথ নির্দেশিকা জারি করার জন্য আবেদন করা হয়েছে।

Advertisement

(বাঁ দিক থেকে) স্বাতী নন্দী , অজয় মিত্তল, সোমিনী সেন দুয়া।

অজয়ের এই উদ্যোগে তাঁকে সঙ্গ দিচ্ছেন স্বাতী ও সোমিনী। এ বিষয় স্বাতী বলেছেন, ‘‘পুজোর সময়ে বাড়ির সামনের গাছপালাগুলি ঢেকে যায় ব্যানারে। গোটা শহরে যেন তৈরি হয় এক দমবদ্ধকর পরিস্থিতি। পিভিসি দিয়ে এই প্লাস্টিকের ব্যানারগুলি একেবারে নিশ্চিহ্ন করার উপায় নেই। শেষমেশ ধাপার মাঠে গিয়ে পোড়ানো হয় সেগুলি, যাতে একসঙ্গেই বায়ু, জল, মাটিকে দূষিত করছে সমান তালে। আমাদের উচিত ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য পরিবেশকে রক্ষা করা। পুজোর সময়ে ব্যাবসা করতে গিয়ে প্রকৃতির বড় ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। এর জন্য পুজোমণ্ডপগুলিকে খানিকটা উদ্যোগী হতে হবে। বিভিন্ন সংস্থাগুলি ব্যানারের জন্য চাইলেই প্লাস্টিকের বিকল্প ব্যবহার করতে পারে। তাতে হয়তো সামান্য খরচ বেশি, তবে পরিবেশকে বাঁচাতে এই কাজ না করলেই নয়। এ ক্ষেত্রে জুট, কাপড়, ক্যানভাসের ব্যানার বিকল্প হতে পারে। ডিজিটাল মাধ্যমেও তো প্রচার চালানো যায়। আমাদের কাছে বিকল্প আছে, তবে সচেতনতার অভাব রয়েছে।’’

দুর্গাপুজোর সময়ে মানুষ মণ্ডপে মণ্ডপে শিল্পকর্ম দেখতে পছন্দ করেন, ব্যানারে মোড়া দেওয়াল নয়। অজয় বলেন, ‘‘সরকারের উচিত পুজো কমিটিগুলিকে একটি নির্দেশিকা তৈরি করে দেওয়ার। যেখানে তাঁরা মোট কতগুলি ব্যানার ব্যবহার করতে পারবে এবং ক’ধাপে ব্যানার ব্যবহার করতে পারবেন, সেই বিষয় স্পষ্ট উল্লেখ করা হবে।’’

Advertisement

এ পুজোর প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে এখনই। এক দিনেই সব প্লাস্টিকের ব্যানার বন্ধ করে দেওয়া সম্ভব নয়। তাই সোমিনী পুজো কমিটিগুলির কাছে আবেদন জানিয়েছেন, যে পুজোর পর যাতে ব্যানারগুলি না পুড়িয়ে অন্য কোনও কাজে ব্যবহার করা যায়, সেই দিকে নজর দিতে। পাড়ায় পাড়ায় চা দোকানের উপর ছাউনি তৈরি করতে, রাস্তার কুকুরদের আশ্রয় বানাতে এই ব্যানারগুলি কাজে আসতে পারে। সোমিনী বলেন, ‘‘এই সব প্লাস্টিকের ব্যানার দুর্গাপুজোর শোভা বাড়ায় না। কলকাতা পুজোগুলিকে আরও বেশি নান্দনিক করে তুলতে প্লাস্টিকের বদলে কাপড়, চট, এমনকি উত্তরীয় দিয়েই ব্যানার বানিয়ে ফেলা যায়। তাই এ বারের পুজো হোক #প্রকৃতিরপুজোপ্রাণেরপুজো। আর পাঁচজনকে সতর্ক করতে https://chng.it/kn4DVvN4- এই পিটিশনে আপনিও সই করতে পারেন। ’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement