কর্মক্ষেত্রে বকুনির জেরে ক্যাটাটোনিক স্টুপর রোগে আক্রান্ত তরুণী। ছবি: শাটারস্টক।
কর্মজীবনে কখনও বসের বকুনি শুনতে হয়নি, এমন সৌভাগ্যবান কর্মচারীর সংখ্যা হাতেগোনা বললে ভুল হবে না। কারও কারও ক্ষেত্রে বসের বকুনি গা সওয়া হয়ে যায়, কারও ক্ষেত্রে আবার তা ঠিক উল্টো প্রভাব ফেলে। শুরু হয় নানা রকম সমস্যা। চিনের হেনান প্রদেশের তরুণী লি বসের বকুনি শুনে মানসিক নানা রকম সমস্যায় পড়েছেন। চিনের এক সংবাদপত্রের খবর অনুযায়ী, বসের বকুনি শোনার পর থেকে লি খাওয়াদাওয়া, জল খাওয়া, হাঁটাচলা, এমনকি কারও সঙ্গে কথা বলাও বন্ধ করে দিয়েছেন। ঘটনাটি ঘটেছে প্রায় ১ মাস আগে। লি-র বস্ যখন তাঁকে প্রচণ্ড বকাবকি করেন।
বিগত ১ মাসে লি-র মানসিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতিও হতে শুরু করেছে। তাঁর পরিবারের লোকজন জানিয়েছেন, লি রোজের সাধারণ সব শারীরবৃত্তিয় কাজগুলিও করতে পারছেন না। শৌচালয়ে যাওয়ার জন্যও তাঁকে বাড়ির লোকের সাহায্য নিতে হচ্ছে। তাঁর প্রিয়জনেরা সব সময় তাঁর কাছে থাকছেন তাঁকে সাহায্যের জন্য।
লি-র চিকিৎসক জিয়া দিহুয়ান জানিয়েছেন, তাঁর শরীর যেন কাঠের মতো হয়ে গিয়েছে, কোনও রকম হাঁটাচলা কিংবা প্রতিক্রিয়া দিচ্ছেন না তিনি। চিকিৎসকের মতে, লি ক্যাটাটোনিক স্টুপর অর্থাৎ একর কম সাইকোমটর ডিজ়অর্ডারে ভুগছেন। মানসিক চাপ, আতঙ্ক যদি অত্যধিক মাত্রায় বেড়ে যায়, সেই ক্ষেত্রে রোগী বিরল এই ডিজ়অর্ডারে ভুগতে পারেন বলে মত চিকিৎসকের। লি একজন অন্তর্মুখী মানুষ, সহজে তিনি মনের ভাব অন্যের সামনে ব্যক্ত করতে পারেন না, আর সেই কারণেই তাঁর ক্ষেত্রে সমস্যা আরও বেশি হয়েছে।
এই ঘটনা চিনের সংবাদপত্রে প্রকাশিত হওয়ার পর চারদিকে হইচই শুরু হয়েছে। অনেকেই চিনের কর্মসংস্কৃতিতে অত্যধিক চাপের কথা স্বীকার করে তার বিরোধিতা করেছেন। একজন লিখেছেন, ‘‘চাকরির ক্ষেত্রে যদি বাঁধনছাড়া চাপের সম্মুখীন হতে হয়, তা হলে সেই চাকরি ছেড়ে দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
চিনের আর এক সংবাদপত্রে প্রকাশিত চাইনিজ় সাইকোলজিক্যাল সোসাইটির একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, সে দেশের প্রায় ৪.৮ শতাংশ কর্মচারী কর্মক্ষেত্রের কারণে অবসাদে ভুগছেন। ৮০ শতাংশ কর্মচারী স্বীকার করেছেন যে, তাঁরা কর্মক্ষেত্রে সারা ক্ষণ উৎকণ্ঠার মধ্যে থাকেন। ৬০ শতাংশ কর্মচারীর কর্মক্ষেত্রের কারণে উদ্বেগ বেড়েছে আর ৪০ শতাংশের মধ্যে বিভিন্ন রকম মানসিক সমস্যা দেখা দিয়েছে।