গত দশ মাসেরও বেশি বিশ্ব জুড়ে কোভিড ১৯-এর দাপট চলছে। যা জারি থাকবে হয়তো বহু দিন। সংক্রমণকে আয়ত্ত করতে গবেষকদের নিরন্তর অন্বেষণ তো রয়েছেই, সচেতন থাকতে হবে মানুষকেও। নির্দিষ্ট স্বাস্থ্য-বিধি মেনে চলার পাশাপাশি বাড়াতে হবে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা। ডাক্তারদের মতে, সেই ক্ষমতা যাঁদের আছে, সংক্রমিত হয়েও এই কঠিন লড়াইয়ে তাঁরাই এগিয়ে থাকছেন।
তাই শরীরকে ভিতর থেকে সতেজ রাখতে ভিটামিন বা সাপ্লিমেন্ট ছাড়াও খেতে হবে পুষ্টিকর খাবার। পুষ্টিবিদদের মতে, এ দেশেরই বিভিন্ন প্রদেশে রয়েছে নিজস্ব এমন কিছু খাবার, যা সস্তার অথচ প্রোটিন, ভিটামিন, খনিজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। নিয়মিত সেগুলি খেলে বাড়বে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা।
সেই তালিকায় যেমন রয়েছে বাংলার শুক্তো, তেমনই আছে বিহারের ছাতুর মতো সহজলভ্য খাদ্যবস্তু। বেগুন, পেঁপে, কাঁচকলা, সজনে ডাঁটা এবং বড়ি দিয়ে তৈরি হয় শুক্তো। এই রান্নায় মশলা এবং দুধ যোগ হওয়ায় এতে পুষ্টিগুণ আরও বেড়ে যায়। বাঙালির মাছের পদে দই এবং সরষের যোগও বাড়িয়ে দেয় তার পুষ্টিগুণ। মাছের ভিটামিন ডি এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড দেহ ও মস্তিষ্কের কার্যকারিতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
পঞ্জাবি খাদ্য তালিকার আবশ্যিক দই দাঁত ও হাড়ের ভাল স্বাস্থ্যের কারণ। এতে থাকে প্রচুর ক্যালসিয়াম। এটি অন্ত্র ভাল রাখে, সংক্রমণের আশঙ্কাও কমায়।
বিহারের জনপ্রিয় ছাতুতে প্রোটিন আছে। পরিপাকতন্ত্রের পক্ষে উপকারিও। আর লিট্টি নামক খাবারে রয়েছে একাধিক ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।
পুষ্টিতে ভরপুর গ্রামীণ মহারাষ্ট্রের ঝুনকা-ভাকর-পিঠলা। ডাল ও সিরিয়াল সমৃদ্ধ এই খাবারে প্রোটিন যথেষ্ট। ওই রাজ্যের আরও একটি খাবার সাবুদানায় থাকা পটাশিয়াম, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। এতে থাকা ভিটামিন বি ৬ ভ্রূণের বিকাশে সাহায্য করে।
খাদ্যবস্তুর পাশাপাশি মশলাতেও বাড়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। দিল্লির খাবারে মুঘল ছাপ যথেষ্ট। এই খাদ্য সম্ভারে ব্যবহৃত বিভিন্ন মশলা থেকে রোগ প্রতিরোধী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মেলে। দিল্লিবাসীর খাদ্য তালিকায় স্থান পাওয়া ছোলা ওজন কমাতে, অন্ত্র ভাল রাখতে এবং টাইপ টু ডায়াবিটিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
আইসিএমআর-ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউট্রিশন এবং টাটা সাম্পান আয়োজিত এক আলোচনায় সম্প্রতি পুষ্টিবিদ কবিতা দেবগণও বিভিন্ন প্রদেশের সাধারণ খাবারের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে বলেন, “পশ্চিমবঙ্গ, পঞ্জাব, বিহার, মহারাষ্ট্র, দক্ষিণ ভারত এবং দিল্লির বিভিন্ন অঞ্চলের সাধারণ কিছু খাবার নিয়মিত খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। যা এই মুহূর্তে সব থেকে জরুরি।”
কোভিডের সঙ্গে যুদ্ধে ইমিউনো নিউট্রিশন গ্রহণের কথা বলছেন চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদেরা। কী এই ইমিউনো নিউট্রিশন? প্রোটিন, ভিটামিন সি, ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড এবং মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টসের (ফলেট, আয়রন, জিঙ্ক, সেলেনিয়াম ও কপার) মিলিত ফল হল বিশেষ এই নিউট্রিশন। আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র কলেজের ফুড অ্যান্ড নিউট্রিশনের অধ্যাপক সুনন্দা বিশ্বাস বলছেন, “অ্যান্টি অক্সিডেন্ট পাওয়া যায় দই, ইডলি, ধোসার মতো যে কোনও ফার্মেন্টেড খাবার থেকেই। এই উপাদান রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। মাছ, মাংস এবং ডিম থেকে প্রোটিন, আয়রন এবং জিঙ্ক যথেষ্ট পরিমাণে পাওয়া যায়। এ ছাড়া রেনবো ভেজিটেবল (সাত রঙের আনাজ) খাবারের তালিকায় রাখা জরুরি। বাইরে বেরোনো কম হচ্ছে, তাই ভিটামিন ডি পেতে ছাদে বা বারান্দায় বসে নিয়মিত রোদ লাগাতে হবে। মনে রাখতে হবে সেটাও শরীরের খাদ্য।”