ছবি: সংগৃহীত
শুক্রবার ভোরে দিল্লি থেকে দেহারাদূনে নিজের বাড়ি যাওয়ার পথে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিলেন ভারতীয় ক্রিকেট দলের উইকেটরক্ষক ঋষভ পন্থ। সদ্য বাংলাদেশের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ় খেলে দেশে ফিরেছিলেন। গুরুতর আহত অবস্থায় দেহরাদূনের ম্যাক্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ঋষভ।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ঋষভের পরিস্থিতি এখন স্থিতিশীল। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের তরফে জানানো হয়েছে, পন্থের কপালের দু’টি জায়গায় কেটে গিয়েছে। ক্ষত কতটা গভীর তা চিকিৎসকরা বোঝার চেষ্টা করছেন। এ ছাড়াও হাঁটু, পিঠ-সহ শরীরের একাধিক জায়গায় আঘাত পেয়েছেন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। উইকেটরক্ষকের ডান হাঁটুর লিগামেন্ট ছিঁড়ে গিয়েছে। ডান হাতের কব্জিতে আঘাত পেয়েছেন তিনি। ডান পায়ের গোড়ালি এবং পাতাতেও গুরুতর চোট পেয়েছেন পন্থ।
সব মিলিয়ে এই মুহূর্তে শারীরিক ভাবে অত্যন্ত বিপর্যস্ত পন্থ। কবে আবার সুস্থ হয়ে মাঠে ফিরবেন তিনি, তা নিয়েও রয়েছে ধোঁয়াশা। বাঁহাতি ব্যাটসম্যান, কিন্তু পায়ের পাতা থেকে কাঁধ— সব আঘাত ডান দিকে। ফলে পন্থের শারীরিক অবস্থার প্রভাব খেলায় ততটা না-ও পড়তে পারে। তবে এ ক্ষত কি শুধুই শারীরিক? ঘটনার অভিঘাত কি মনের উপর পড়বে না তরুণ ক্রিকেটারের?
সময় লাগলেও এই মানসিক আঘাত কি তিনি কাঠিয়ে উঠতে পারবেন না? ছবি: সংগৃহীত
এ প্রসঙ্গে ক্রীড়া মনস্তত্ত্ববিদ অনুশীলা ব্রহ্মচারী বলেন, ‘‘অবশ্যই পড়বে। এটা শুধু ক্রীড়া মনস্তত্ত্বের দিক থেকে বলছি না, সাধারণ ক্ষেত্রেও মনের উপর চাপ পড়াটা স্বাভাবিক। ওঁর তো একটা দুর্ঘটনা হল। সেটা থেকে এমনিতেই ওঁর ‘পোস্ট সিনড্রোম স্ট্রেস ডিজ়অর্ডার’ দেখা দিতে পারে। যে কোনও অপ্রত্যাশিত খারাপ ঘটনা থেকেই মনের একটা বদল আসে। চালচলনে এবং আচরণে কিছুটা পরিবর্তন আসতে পারে। ঋষভ এখন যে পরিমাণ অসুস্থ, সে ক্ষেত্রে দু’রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে— শারীরিক এবং মানসিক। সুস্থ হতে ওঁর যতটা সময় লাগবে, তাতে শারীরিক ভাবে পন্থ অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়বে। বেশ অনেক দিন শয্যাশায়ী থাকতে হবে। অনুশীলন বন্ধ থাকবে। ওঁর নিজস্ব যে দক্ষতা, সেটা নিয়ে আত্মবিশ্বাসও খানিকটা কমে যেতে পারে। এমনিতে ছোটখাটো চোট লাগার কারণে কয়েক দিন খেলা থেকে দূরে থাকলেও খানিকটা সমস্যা হয়। আর এখানে তো বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। ফলে এর অভিঘাত মনের উপর খুব গভীর ভাবেই পড়বে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে। সব কিছু সামলে ও যখন আবার মাঠে ফিরবে, খেলা নিয়ে আগের যে দক্ষতা তা ফিরে পেতে কিন্তু বেশ কিছুটা সময় লেগে যাবে বলেই মনে হচ্ছে। শারীরিক ভাবে সুস্থ হলেও খেলার মাঠে নিজের সেরাটা দিতে মানসিক ভাবে কতটা প্রস্তত থাকবে তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।
খেলোয়াড় মাত্রেই শারীরিক এবং মানসিক ভাবে ফিট থাকতে হয়। ঋষভও তার বাইরে নয়। কুয়াশায় ভরা সকালে দুর্ঘটনার কবলে তিনি পড়েছেন ঠিকই। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন এই প্রথম হতে হল তাঁকে। তাই বলে এর আগে কোনও কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যে ঋষভ যাননি, তা তো নয়। সময় লাগলেও এই মানসিক আঘাত কি তিনি কাঠিয়ে উঠতে পারবেন না? অনুশীলার কথায়, ‘‘নিশ্চয়ই পারবেন। তবে মনের ক্ষত কতটা নিরাময় হয়েছে, তা বোঝা যাবে যখন ঋষভ মাঠে ফিরবেন। সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরলে তাঁর আচরণ, কথাবার্তা, বাইশ গজে তাঁর পারফরম্যান্স তা বলে দেবে। তবে আমার মনে হয় শারীরিক চিকিৎসা চলার পাশাপাশি ঋষভের মনের ক্ষত সারাতে এক জন মনোরোগ চিকিৎসকের সাহায্যে নেওয়া জরুরি এই মুহূর্তে। এখনই কাউন্সেলিং শুরু করা প্রয়োজন। তবে ঋষভ তো আদতে একজন খেলোয়াড়। ব্যথা, না পাওয়ার যন্ত্রণা কী করে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব তা জানতেই হয় খেলোয়াড়দের। ফলে আমার মনে হয় সময় লাগলেও আবার আগের ফর্মে ফিরবেন পন্থ।’’
মাঠে আবার কবে ফিরতে পারবেন ঋষভ? চিকিৎসকদের তরফে সে বিষয়ে এখনও কিছু জানানো হয়নি। পায়ের লিগামেন্ট ছিঁড়ে গিয়েছে। ফলে শরীরের অন্য আঘাত শুকিয়ে এলেও লিগামেন্ট না জুড়লে তো বাইশ গজে ফেরার প্রশ্ন নেই। এ ক্ষেত্রে সুস্থ হতে ঠিক কত দিন সময় লাগে, তা আগে থেকে বলা যায় না। নির্ভর করে আঘাত কতটা প্রবল, তার উপর। এ বিষয়ে অস্থিরোগ বিশেষজ্ঞ নবারুণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘তিন-চার সপ্তাহ লাগতে পারে আবার দু’মাসও লাগতে পারে। হাঁটুতে চার ধরনের লিগামেন্ট থাকে। এক একটির ভূমিকা আলাদা। ঋষভের ক্ষেত্রে ঠিক কোন লিগামেন্টটি ছিঁড়েছে, সেটা জানা না গেলে বোঝা যাবে না আসলে সুস্থ হতে কত দিন সময় লাগতে পারে। অস্ত্রোপচারও করতে হতে পারে। ‘লিগামেন্ট টিয়ার’-এ হলে কয়েক সপ্তাহে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিলে সুস্থ হওয়া সম্ভব। পন্থের ঠিক কতটা আঘাত লেগেছে তা না জানা পর্যন্ত নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়।’’