ক্যালোরিতে রাশ টানবে কফি।—ফাইলচিত্র
কফির কিছু উপাদান শরীরে ক্যালোরি খরচের হার বাড়ায়৷ তার মধ্যে সবার প্রথমে আছে ক্যাফেইন৷ ক্যাফেইন স্নায়ুকোষ থেকে নিঃসৃত এক রাসায়নিক অ্যাডেনোসিনকে সাময়িক ভাবে অকার্যকর করতে পারে বলে ডোপামিন ও নরএপিনেফ্রিন হরমোনের ক্ষরণ বাড়ে, যাদের প্রভাবে বাড়ে এনার্জি৷ আসে তরতাজা ভাব৷ সে জন্যই ব্যায়ামের আগে এক কাপ কালো কফি খেলে ব্যায়াম করার ক্ষমতা প্রায় ১০–১২ শতাংশ বেড়ে যায়৷ পাল্লা দিয়ে বাড়ে ক্যালোরি খরচ৷ ব্যায়ামের পরে খেলে ক্লান্ত শরীর চট করে চাঙ্গা হয়৷ কিছু স্টাডিতে দেখা গেছে, আধ ঘণ্টা ব্যায়ামের পর যাঁরা জলের বদলে কফি খান, তাঁদের বেশি চর্বি ঝরে৷ তবে এ ব্যাপারে শেষ কথা বলার সময় এখনও আসেনি৷
আরও সুখবর
ক্যাফেইনের প্রভাবে রেস্টিং মেটাবলিক রেট, অর্থাৎ শুয়ে–বসে থাকার সময় যে পরিমাণ ক্যালোরি খরচ হয়, তা প্রায় ৩–১১ শতাংশ বেড়ে যায়৷ এবং এই অতিরিক্ত ক্যালোরিটুকু খরচ হয় চর্বি ভেঙেই৷ কফি পান আগের চেয়ে দ্বিগুণ করে দিলে, ওজন ও চর্বি ঝরার হার প্রায় ১৭–২৮ শতাংশ বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা৷ তবে ব্যাপারটা সাময়িক৷ শরীর যত ক্যাফেইনের সঙ্গে অভ্যস্ত হতে থাকে, তত এই প্রভাব কাটতে শুরু করে৷ তখন কফি পান দু’সপ্তাহের মতো বন্ধ রাখার পর আবার দু’সপ্তাহ ধরে খেলে এবং এ ভাবেই চালিয়ে গেলে নতুন করে কাজ হতে শুরু করে৷
কফি খেলে খিদে ও খাওয়ার ইচ্ছে কমে অনেক সময়৷ এ ব্যাপারে প্রধান ভূমিকা পালন করে কফি বিনে উপস্থিত ক্লোরোজিনিক অ্যাসিড নামের ফাইটোকেমিক্যাল৷ বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, এর প্রভাবে বৃহদন্ত্রে পিওয়াইওয়াই নামের প্রোটিন ক্ষরিত হয়ে খাওয়ার ইচ্ছে কমিয়ে দেয়৷ আবার খাবার খাওয়ার পর কালো কফি খেলে ক্লোরোজিনিক অ্যাসিডের দৌলতেই শরীরে গ্লুকোজ তৈরির হার কমে যায়৷ তার হাত ধরে কমে চর্বি জমার প্রবণতা৷
“তবে ক্যাফেইনের সবটাই গুণ, এমন নয়৷ বেশি কফি খেলে ঘুম কমে যেতে পারে৷ ক্যাফেইন যাঁদের সহ্য হয় না, তাঁদের মেজাজ খারাপ হতে পারে৷ বাড়তে পারে উদ্বেগ৷ বুক ধড়ফড় করতে পারে৷ গ্যাস–অম্বলে কাবু হতে পারেন”, জানালেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সব্যসাচী সেন৷
কতটুকু কফি, কখন, কী ভাবে
হার্ভার্ড স্কুল অব পাবলিক হেলথ-এর বিজ্ঞানীদের মতে, কম ক্যালোরির সুষম খাবার ও পরিমিত ব্যায়ামের সঙ্গে দিনে কম করে ৩–৪ কাপ বা ৭২০–৯০০ মিলি–র মতো কফি খেলে সব দিক বজায় থাকে৷ যাঁরা পেশিবহুল সুঠাম শরীর চান, প্রচুর ব্যায়াম করেন, তাঁরা আরও বেশি খেতে পারেন, যদি সহ্য হয়৷ কখন, কী ভাবে খাওয়া যেতে পারে দেখে নিন–––
• সকাল–দুপুর ও রাত্রে খাবার খাওয়ার কিছুক্ষণ আগে খান৷ কম খাবারে পেট ভরবে৷
• খাবার খাওয়ার পর খেলে চর্বি কম জমবে শরীরে৷
• ক্লান্ত লাগলে খান৷ চনমনে হওয়ার পাশাপাশি বাড়বে ক্যালোরি খরচ৷
• ব্যায়াম করার আগে খাবেন৷ মধ্যপথেও অনেকে খান৷ ব্যায়ামের পরেও খেতে পারেন৷
“তবে আর যাই করুন, বেশি উপকারের আশায় বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া ক্যাফেইন সাপ্লিমেন্ট খাবেন না৷ মাত্রা রাখতে না পারলে তা থেকে নানান বিপদ হতে পারে”, জানালেন সব্যসাচী৷
ক্যাফেইন সাপ্লিমেন্টের বিপদ
২০১৮ সালে নিউট্রিয়েন্ট ম্যাগাজিনের স্টাডি থেকে উঠে আসে এক মারাত্মক তথ্য৷ জানা যায়, গত ৫০ বছরে ক্যাফেইনের বিষক্রিয়ায় ৯১ জনের মৃত্যু নথিভুক্ত হয়েছে৷ আসল সংখ্যাটা এর চেয়ে অনেক বেশি, বলাই বাহুল্য৷ কারণ, আজকের প্রজন্ম পেশিবহুল শরীর বানানোর জন্য ফ্যাট বার্নার, এনার্জি ড্রিঙ্ক, এনার্জি শেক বা বার খাচ্ছেন দেদার৷ তাতে বিপদের আশঙ্কা প্রতি পদে৷ কারণ, অধিকাংশ সময়েই এ সবে খুব বেশি মাত্রায় ক্যাফেইন থাকে৷ যা অনেক বেশি খেয়ে নিলে অতিরিক্ত ক্যাফেইনের প্রভাবে হার্ট ও শিরা–ধমনির উপর প্রবল চাপ পড়ে, যা থেকে কখনও জ্ঞান হারান মানুষ, কখনও হার্ট বন্ধ হয়ে মারাও যান৷
এই বিপদ ঠেকাতে চাইলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া সাপ্লিমেন্ট নেওয়া বন্ধ করুন৷ সবচেয়ে ভাল হয়, কফি বা সাধারণ এনার্জি ড্রিঙ্ক খেলে৷ কারণ, এতে ক্যাফেইন নিরাপদ মাত্রায় থাকে৷ অনেকটা খেয়ে নিলেও খুব অল্প সময়ের মধ্যে তাকে বিপজ্জনক সীমায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না৷ তার আগেই বমি হয়ে যায়৷
আরও পড়ুন :কোভিডের নতুন স্ট্রেন ধরা পড়ার মতো কিট কি এ দেশে আছে?
আরও পড়ুন :বন্ধু বাইপ্যাপ