দীর্ঘ লকডাউনের পর শুরু হয়েছে ‘আনলক’ পর্ব। ধীরে ধীরে চালু হচ্ছে গণ-পরিবহণ। খুলেছে সরকারি এবং বেসরকারি অফিস-কাছারিও। কিন্তু সারা দেশে করোনা পরিস্থিতি যে দিকে এগোচ্ছে, তাতে অফিস খুললেও অনেককেই বাড়িতে বসে কাজ করতে হচ্ছে। আবার করোনার জেরে বন্ধ স্কুল, কলেজও। পরিস্থিতি যে কবে স্বাভাবিক হবে এবং কবে আবার পড়ুয়ারা ব্যাগ পিঠে স্কুলে যাবে— তা এখনই বলা মুশকিল। অগত্যা ভরসা সেই ল্যাপটপ কিংবা ট্যাবলেট।
এই মুহূর্তে শহর কলকাতা-সহ সারা রাজ্যেই ল্যাপটপের বাজার বেশ চড়া। রাজ্যের বিভিন্ন জেলা সহ-কলকাতার ইলেকট্রনিক্স শো-রুমের বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, ল্যাপটপের ক্ষেত্রে চাহিদাটা হঠাৎই তৈরি হয়েছে! কলকাতার ধর্মতলা চত্বরের ইলেকট্রনিক্স মলের একটি স্টোরের ম্যানেজার বলছিলেন, ‘‘আগে সারাদিনে আমাদের স্টোর থেকে মোটামুটি ভাবে বিভিন্ন দামের তিনটে মতো ল্যাপটপ বিক্রি হত। এখন সংখ্যাটা ছয় থেকে সাতে এসে দাঁড়িয়েছে। লকডাউন শেষ হওয়ার পর থেকে স্মার্টফোনের বিক্রিও বেড়ে গিয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি।’’ কারা কিনছেন এগুলি? তাঁর উত্তর, ‘‘বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বাবা-মায়েরা তাঁদের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার জন্য স্মার্টফোন-ল্যাপটপ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। অনেকে আবার ছেলেমেয়েদের প্রয়োজন অনুসারে আমাদের কাছ থেকে ফোন-ল্যাপটপের স্পেসিফিকেশন জেনে নিয়ে, তার পর কিনছেন।’’
প্রসঙ্গত অনেক ক্রেতাই অভিযোগ তুলছেন, অনলাইনে পছন্দের ল্যাপটপ তাঁরা পাচ্ছেন না। জনপ্রিয় অনলাইন সাইটগুলি থেকে ল্যাপটপ কিনতে গেলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখাচ্ছে ‘আউট অফ স্টক’। এ ক্ষেত্রে সহজ সমাধান একটাই— হয় অনলাইন সাইটে পছন্দের মডেলটি আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন, নয়তো রিটেল শো-রুম থেকে গ্যাজেট-খাতে খরচ সামান্য বাড়িয়ে জুতসই কোনও ল্যাপটপ কিনে নিন।
তবে যে ব্র্যান্ড এবং মডেলের ল্যাপটপই কিনবেন, তাতে কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখা দরকার...
ল্যাপটপের স্ক্রিন
করোনা পরিস্থিতির জেরে অনেকেই বাড়িতে বসে অফিস কম্পিউটারের রিমোট-অ্যাকসেস ব্যবহার করে প্রয়োজনীয় কাজ করছেন। তাই যে ব্র্যান্ডের ল্যাপটপই কিনুন, তার স্ক্রিনটা যেন একটু বড় হয় সেটা দেখে নিন। কারণ অফিসের যে ডেস্কটপে আপনি কাজ করতে অভ্যস্ত, তার স্ক্রিন ল্যাপটপের স্ক্রিনের চেয়ে স্বাভাবিক ভাবেই বড়। ফলে ছোট স্ক্রিনের ল্যাপটপে কাজ করার সময় আপনাকে বারবার স্ক্রিনটিকে ওঠানো-নামানো করতে হবে। তাই কাজের সুবিধের জন্য বড় স্ক্রিনেরই ল্যাপটপ কিনুন।
ব্যাটারি ব্যাকআপ
ল্যাপটপটি ব্যাটারি ব্যাকআপ কতক্ষণ দেয়, সেটা আগে বিশদে জেনে নিন। প্রসঙ্গত, ‘সাধারণ’ মানের নতুন ল্যাপটপ ফুল রিচার্জের পর প্রায় আড়াই ঘণ্টার কাছাকাছি ব্যাটারি ব্যাকআপ দিয়ে থাকে। এর চেয়ে বেশি ব্যাটারি ব্যাকআপ পেতে হলে স্ক্রিনের ব্রাইটনেস কিছুটা কমিয়ে রাখতে পারেন। এতে ব্যাটারির খরচ কম হবে। অনলাইনে ল্যাপটপ কিনলে কোম্পানির নানাবিধ ‘দাবি’ চোখবন্ধ করে বিশ্বাস না করে, রিভিউয়েও চোখ বুলিয়ে নিন। হঠাৎ লোডশেডিং হয়ে গেলেও আপনি কতক্ষণ নিশ্চিন্তে কাজ করতে পারছেন, সেটাও জেনে নেওয়া দরকার।
র্যাম
চেষ্টা করুন অন্তত চার জিবি র্যামের ল্যাপটপ কেনার। এতে উইন্ডোজ়-টেন ইনস্টল করে লেখা কম্পোজ়, এক্সেল-শিট বানানো কিংবা ইমেল করার মতো কাজ অনায়াসে করতে পারবেন। তবে ভারী কোনও কাজ করতে গেলে যেমন, গ্রাফিক্সের কাজ কিংবা পেজ ডিজ়াইন, সে ক্ষেত্রে আপনার আট জিবি র্যামের ল্যাপটপ কেনাই শ্রেয়। মোটামুটি চলনসই ব্র্যান্ডের চার জিবির ল্যাপটপ আপনি ২০-২৫ হাজার টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন। তবে যদি আট জিবির ল্যাপটপ কিনতে চান, তা হলে মোটামুটি ভাবে ৩০ হাজার টাকা মতো ধরে রাখাই ভাল।
মেমরি
চেষ্টা করুন অন্তত ৫০০ জিবি স্টোরেজের ল্যাপটপ কিনতে। এই পরিমাণ মেমরিতে অফিসের যে কোনও কাজের ডকুমেন্ট অনায়াসে সেভ করে রাখতে পারবেন। তবে যদি প্রচুর ডকুমেন্ট ল্যাপটপে সেভ করে রাখার প্রয়োজন থাকে, তা হলে আপনার ১ টিবি স্টোরেজের ল্যাপটপ কেনাই ভাল।
টাচপ্যাড
কেনার আগে ল্যাপটপের টাচপ্যাড ‘মডারেট’ কি না, সেটা ভাল ভাবে দেখে নেবেন। কোনও কোনও ল্যাপটপের টাচপ্যাড খুব সেনসেটিভ হয়, আবার কোনও ল্যাপটপের টাচপ্যাড কিঞ্চিৎ হার্ড। কেনার সময়ে খেয়াল রাখবেন, মডারেট টাচপ্যাডের ল্যাপটপে কাজ করেই বেশি সুবিধে এবং এতে আপনি দ্রুত কাজ করতে পারবেন।
গ্রাফিক্স কার্ড
পেশাগত ভাবে আপনি গ্রাফিক্সের কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকলে ল্যাপটপে ইন-বিল্ড গ্রাফিক্স কার্ড রয়েছে কি না, সেটা জেনে নিন। প্রসঙ্গত, ইন-বিল্ড গ্রাফিক্স কার্ড দেওয়া ল্যাপটপের দাম সাধারণত একটু বেশিই হয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে এমন ল্যাপটপ কিনতে পারেন, যেগুলিতে পরে গ্রাফিক্স কার্ড লাগানোর অপশন রয়েছে। তার পর নিজের সময় এবং সুযোগ মতো ভাল কোনও ব্র্যান্ডের গ্রাফিক্স কার্ড কিনে ল্যাপটপে লাগিয়ে নিন। এতে আপনার খরচ কম পড়বে।
স্যানিটাইজ়েশন
শো-রুম হোক কিংবা অনলাইন, যেখান থেকেই ল্যাপটপ কিনুন, ব্যবহার শুরুর আগে ভাল ভাবে স্যানিটাইজ় করে নেবেন। এক টুকরো সুতির কাপড় নন স্টিকি স্যানিটাইজ়ারে ভিজিয়ে ল্যাপটপটিকে মুছে নিন। কয়েক মিনিট পর আর একটি শুকনো নরম কাপড় দিয়ে পুরো যন্ত্রটাকে দ্বিতীয়বার মুছে ফেলুন। শুধু মনে রাখবেন, আপনার সাধের ল্যাপি-র ইউএসবি পোড-এর কোনও অংশে যেন স্যানিটাইজ়ার না লাগে। তা হলে শর্ট-সার্কিটের আশঙ্কা থাকবে।
আগামী কয়েক মাসের ওয়র্ক ফ্রম হোমের প্রয়োজনে আস্ত একটা ল্যাপটপ কেনা কিঞ্চিৎ বিলাসিতা মনে হলে, আপনি মাসিক চুক্তিতে ল্যাপটপ ভাড়া নিয়ে নিতে পারেন। এ ক্ষেত্রে সহজতম উপায় হল, আপনার এলাকার বড় কোনও রিটেল শো-রুমে গিয়ে সরাসরি কথা বলা। কলকাতা-সহ সারা রাজ্যে এমন অনেক শো-রুমই রয়েছে, যারা মাসিক চুক্তিতে ল্যাপটপ ভাড়া দেয়। মডেল, ব্র্যান্ড এবং কনফিগারেশনের নিরিখে মাসিক ভাড়া সাধারণত দু’ থেকে সাড়ে চার হাজার টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করে। অনলাইন বা শোরুমে প্রি-ইনস্টলড ল্যাপটপও পেয়ে যাবেন। এতে উইন্ডোজ-টেন ভার্সনে মাইক্রোসফ্ট অফিসের প্রতিটি অ্যাপ্লিকেশনই পেয়ে যাবেন। তবে প্রি-ইনস্টলড ল্যাপটপের দাম একটু বেশি হয়। আর আপনি যদি গান শুনতে বা সিনেমা দেখতে ভালবাসেন, তা হলে ল্যাপটপের ইনবিল্ট স্পিকারের গুণগত মানের ভরসায় না থেকে, ভাল ব্র্যান্ডের দু’টি এক্সটার্নাল স্পিকার কিনে নিন। এতে খরচ কম পড়বে।