মাদার্স ডে-র মতো বিশেষ দিন থেকে শুরু করে উইকেন্ডেও ব্রাঞ্চ এখন খুব জনপ্রিয় শহরের রেস্তরাঁগুলোয়। ক্রিসমাস, ইস্টার বা পুজোস্পেশ্যাল ইত্যাদি থিমবেসড ব্রাঞ্চেরও ব্যবস্থা করা হয় বিভিন্ন রেস্তরাঁয়। এই ব্রাঞ্চ কী? কেমন ধরনের খাবার রাখা যায় ব্রাঞ্চে? একে একে জানব এ বার...
ব্রাঞ্চ আসলে কী?
১৮৯৫ সালে একটি ম্যাগাজ়িনে প্রথম ‘ব্রাঞ্চ’-এর উল্লেখ পাওয়া যায়। ব্রেকফাস্ট ও লাঞ্চ একসঙ্গে ‘ব্রাঞ্চ’। মাল্টিস্পেশ্যালিটি রেস্তরাঁ চেনের কর্ণধার শেফ অঞ্জন চট্টোপাধ্যায় বললেন, ‘‘কনসেপ্টটা আসলে লেজ়ি সানডে কাটানো। সারা সপ্তাহ কাজ করে অনেকেই শনিবার অনেক রাত পর্যন্ত পার্টি করেন। রবিবার ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়। ব্রেকফাস্টের জন্য দেরি হয়ে যায়, এ দিকে লাঞ্চের সময়ও এগিয়ে আসে। তাই একটু লেট মর্নিং ব্রাঞ্চ শুরু হয়। বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে আড্ডা, বেশ অনেকক্ষণ ধরে খাওয়াদাওয়া মিলিয়ে একটু আনন্দ আর কী! ব্রাঞ্চের মেনুও একটু বড় হয়।’’
ব্রাঞ্চেও বিপ্লব
উনিশ শতকের গোড়ার দিক। ইউরোপের পুরুষেরা সপ্তাহভর কাজে ব্যস্ত থাকায় রবিবার একটু দেরি করে উঠে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা ও খাওয়াদাওয়া করার জন্য ব্রাঞ্চের আয়োজন করতেন। খাওয়াদাওয়ার সময় লাঞ্চের দিকে পিছিয়ে গেলে তখন তাকে বলা হত ‘ব্লাঞ্চ’। সে ক্ষেত্রে একটু বেলা হত তা শেষ হতে। তবে এই ব্রাঞ্চ বা ব্লাঞ্চ সীমাবদ্ধ ছিল সমাজের অভিজাত শ্রেণির মধ্যে। মহিলারাও তখন অংশ নিতে পারতেন না। এর পরে ক্রমশ ব্রাঞ্চে সংযোজন হল নানা ধরনের ককটেল। ইউরোপ থেকে ব্রাঞ্চ জনপ্রিয়তা লাভ করল আমেরিকায়। ক্রমে তা ছড়িয়ে পড়ল সমাজের মধ্যবিত্ত মহলেও। ধীরেধীরে ব্রাঞ্চে মহিলাদের প্রবেশও ঘটল। মহিলাদের জন্য মেনুতে এল মকটেল। তাঁরা দেখলেন, সারা সপ্তাহ কাজের পরে রেস্তরাঁয় সানডে ব্রাঞ্চ করলে তো রান্নাবান্নার ঝক্কি পোহাতে হয় না! ফলে খুব শীঘ্রই তা জনপ্রিয় হয়ে উঠল। বিভিন্ন অভিজাত রেস্তরাঁ ও ক্লাবে ‘ব্রাঞ্চ’ সার্ভ করা শুরু হল। উইকেন্ড বাদেও ইস্টার, ক্রিসমাস, বিয়ে উপলক্ষেও শুরু হল ব্রাঞ্চ।
ব্রাঞ্চের মেনু
যেহেতু ব্রেকফাস্ট থেকে লাঞ্চ, সুতরাং মেনু দীর্ঘ। ব্রাঞ্চে ডিম সকলেরই প্রিয়। তাই ডিমের অনেক পদ দেখা যায়। যেমন, সাধারণ ডিমসিদ্ধ ও অমলেট থেকে শুরু করে এগ বেনেডিক্ট, এগ হল্যান্ডিজ় ইত্যাদি। বিভিন্ন রকমের বানও পরিবেশন করা হয়। তার মধ্যে ক্রসোঁ, বাগেল রাখা যায়। স্মোকড ফিশ, চিকেন রোস্ট, ম্যাশড পটেটো থেকে শুরু করে ওয়াফল, পুডিং, কাস্টার্ডও রাখতে পারেন। ভারতীয় খাবার দিয়ে ব্রাঞ্চের আয়োজনে অমলেট, লুচি, কাবাব, পোলাও, মাংস কষা, মাছের কালিয়া, মিষ্টি দিয়েও প্ল্যাটার সাজাতে পারেন। দক্ষিণ ভারতীয় থিমে সাজালে ইডলি, দোসা, সম্বর, পোঙ্গল, কলার চিপস রাখা যায়। চিনাদের মধ্যে আবার ডিমসাম ব্রাঞ্চ খুব জনপ্রিয়। এই ধরনের ব্রাঞ্চে স্টাফড বান, ডাম্পলিং পরিবেশন করা হয়। স্মোকড, ফ্রায়েড সুইট ডাম্পলিংও থাকে। আমেরিকা, কানাডা ও ব্রিটেনে মিলিটারি ক্যান্টিনে উইকেন্ড ব্রাঞ্চের চল আছে। সাধারণত সেনাবাহিনীতে সময়ের মধ্যে ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ, ডিনার সারতে হয়। কিন্তু ব্রাঞ্চে ছাড় থাকে। সাধারণত এই ধরনের ব্রাঞ্চ শুরু হয় সকাল ন’টা নাগাদ, প্রায় দুপুর একটা পর্যন্ত চলে। কিছু কলেজেও ফেস্ট বা উৎসব উপলক্ষে ব্রাঞ্চের আয়োজন করা হয়।
বাড়িতে ব্রাঞ্চ
রবিবার বাড়িতে ব্রাঞ্চের ব্যবস্থা করতে পারেন। এতে গৃহকর্ত্রীর খাটনিও কম। একসঙ্গে অনেক ধরনের খাবার পেয়ে পরিবারের সদস্যরাও খুশি হবেন। মেনুতে ডিম সিদ্ধ রাখতে পারেন। সিদ্ধ করতেও বেশি ঝামেলা নেই, ডিমে পেটও ভরে খানিক। ফুলকো লুচিও রাখতে পারেন সার্ভিং প্লেটে। রাইসের পদও রাখতে পারেন। মাংসের পদ, মাছ ভাজার ব্যবস্থা রাখুন। দোকান থেকে কিছু মিষ্টি আনিয়ে নিতে পারেন। সকলকে খাবার পরিবেশন করার ঝামেলায় না গিয়ে টেবলে সব খাবার সাজিয়ে সকলে মিলে বসে পড়ুন। গল্প-গুজবে খাবার টেবলে বেশ একটা আনন্দের পরিবেশও তৈরি হবে। অতিথি আপ্যায়নেও ব্রাঞ্চের ব্যবস্থা রাখতে পারেন। ডিমসাম, কাপকেক, বান ইত্যাদি ছোট ছোট খাবারের ব্যবস্থা করতে পারেন। টেবল সাজানোও একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ। যেহেতু অনেক পদ থাকে, তাই সুদৃশ্য ভাবে তা সাজান।
পুজোয় রাত জেগে ঠাকুর দেখে ক্লান্ত হয়ে পড়লে সমস্যা নেই। পর দিন দেরি করে ঘুম ভাঙলে ভরসা রাখুন ‘ব্রাঞ্চ’-এ।