ওজন কমাতে চান? ভাবছেন, খাবারের তালিকা থেকে প্রথমেই বাদ দেবেন আলু? অনেকেরই ধারণা, আলু খেলেই মেদের বোঝা বাড়ে। এই ধারণাটা সম্পূর্ণ ঠিক নয়। ১০০ গ্রাম আলুতে ১ মিলিগ্রামেরও কম চর্বি থাকে। তাই রোজকার ডায়েটে আলু রাখা যায় অনায়াসে। এমনকি যাঁদের রক্তে শর্করার মাত্রা ঊর্ধ্বমুখী, তাঁরাও নির্ভয়ে আলু খেতে পারেন।
নির্ভয়ে আলু খেতে পারেন মানেই, প্যাকেটের চিপস বা ছাঁকা তেলে ভাজা আলু নয়। খোসা-সহ সিদ্ধ আলু অল্প তেলে সাঁতলে দম, টিক্কা বা তরকারি খাওয়া যায়। পুষ্টিবিদ ইন্দ্রাণী ঘোষ জানালেন, খোসা-সহ সিদ্ধ আলুতে আছে পর্যাপ্ত ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস, ফাইবার, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন ও ভিটামিন সি। এর প্রতিটিই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে জোরদার করার পাশাপাশি নানা অসুখের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। তবে ইন্দ্রাণী জানালেন, আলুর খোসা ছাড়িয়ে ফেললে এবং সিদ্ধ করে জল ফেলে দিলে অনেক পুষ্টিকর উপাদানই নষ্ট হয়ে যায়। খোসা-সহ আলু অল্পগরম জলে ভিজিয়ে রেখে পরিষ্কার করে ধুয়ে কেটে রান্না করা উচিত। এক নজরে জেনে নেওয়া যাক আলুর গুণাগুণ।
- আমেরিকান জার্নাল অফ ক্লিনিকাল নিউট্রিশনে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে জানা গিয়েছে, আলুতে থাকা কার্বোহাইড্রেট রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। এর ফলে স্মৃতিশক্তি ও শেখার ক্ষমতা বাড়ে।
- সিদ্ধ আলুর রান্না নিয়ম করে খেলে গাঁটের প্রদাহ (ইনফ্ল্যামেশন) কমে। ফলে আর্থারাইটিস জনিত বাতের ব্যথা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
- খোসা-সহ আলুর ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার সঙ্গে সঙ্গে হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
- আলুর ভিটামিন-বি-৬ স্নায়ুতন্ত্র ও মস্তিষ্ককে কার্যকর রাখতে সাহায্য করে। ইউনিভার্সিটি অফ মেরিল্যান্ড মেডিক্যাল সেন্টারের পুষ্টি বিজ্ঞানিদের মতে, খোসা-সহ সিদ্ধ আলুর রান্না করা খাবার নিয়ম করে খেলে মানসিক চাপ, অবসাদ ও মনযোগ দিতে না পারার সমস্যা (অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাক্টিভ ডিসর্ডার) অনেকটা কমে।
- আলুতে যথেষ্ট পরিমাণে পটাশিয়াম আছে। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে পটাশিয়াম কাজে লাগে। যারা নিয়মিত অল্প পরিমাণ আলু খান, তাঁদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকে। আমেরিকার ইনস্টিটউট অফ ফুড রিসার্চের খাদ্য বিজ্ঞানীরা আলুতে থাকা এক বিশেষ উপাদান কুকোয়ামাইনস বিশ্লেষণ করে জেনেছেন, এই উপাদানটি রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।
- খোসা-সহ সিদ্ধ আলুতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যাফেইক অ্যাসিড, ক্যারোটিনয়েড ও ফ্ল্যাভোনয়েডস নামে ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস থাকে। এ সবই আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারি। এইসব উপাদান মানুষকে সামগ্রিক ভাবে সুস্থ থাকতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয়।
তাই রোজকার ডায়েটে আলু রাখতে পারেন নিশ্চিন্তে।