দাগবর্জিত, ঝকঝকে, পেলব, চিকন মুখমণ্ডল প্রত্যেক নারীর সম্পদ। মুখের ভাঁজে ধরা থাকে রূপের জাদুস্পর্শ, যৌবনের গোপন কাহিনি। কিন্তু এমন মুখ পেতে রূপচর্চা কেমন হবে?
অবাঞ্ছিত রোম, অ্যাকনে মার্ক, কাটা দাগ, রোদে পোড়া ত্বক, দু’ধরনের স্কিনটোন... সুন্দর মুখের জন্য এর কোনওটাই কাঙ্ক্ষিত নয়। এই সব সমস্যার সমাধান করতে পারে ডার্মাপ্লেনিং। সাধারণ ভাবে একে ‘শেভিং’ও বলা হয়। তবে শেভিংয়ের চেয়েও ডার্মাপ্লেনিংয়ের ব্লেড অনেক বেশি আধুনিক, প্রফেশনাল এবং ক্ষুরধার। প্রথম বার এই ট্রিটমেন্ট প্রফেশনালদের কাছেই করানো ভাল। বাড়িতে নিজেও এটি করা যায়। তবে তার জন্য সবটা ভাল করে বুঝে নিতে হবে।
ডার্মাপ্লেনিং কী?
এটি এক ধরনের কসমেটিক ট্রিটমেন্ট, যেখানে মুখের ত্বকের উপরিভাগের মৃত কোষ বা ডেড সেল দূর করা হয়। অ্যাকনে বা ব্রণ মার্ক কমিয়ে দেয় এবং মুখের বেবি হেয়ারও দূর করা হয়। মূলত এই তিনটি কাজ করা হয় ডার্মাপ্লেনিংয়ের মাধ্যমে। স্বাভাবিক ভাবেই এর পরে ত্বক অনেক বেশি মোলায়েম, মসৃণ ও প্রাণোজ্জ্বল হয়ে ওঠে।
কী ভাবে করা হয়?
এই ট্রিটমেন্টের জন্য কয়েকটি ব্লেড বা রেজ়ার ব্যবহার করা হয়। সাধারণ ব্লেড বা রেজ়ারের সঙ্গে এর পার্থক্য রয়েছে। রূপবিশেষজ্ঞ ব্রিজেট জোনস বললেন, ‘‘ডার্মাপ্লেনিংয়ের ব্লেড ৪৫ ডিগ্রি অ্যাঙ্গলে চালাতে হয়। তা না হলে কেটে যাবে। ঠিকমতো রোম পরিষ্কার হবে না। ত্বকের কতটা গভীরে গিয়ে ব্লেড চালাতে হয়, সেটা প্রফেশনালরা ভাল বুঝতে পারেন।’’ বাড়িতে করলে অনেক ক্ষেত্রেই এটা উপর-উপর করা হয়। আপওয়ার্ড বা ডাউনওয়ার্ড... যে কোনও মোশনেই করলে সুফল পাওয়া যায়।
প্রথমে ত্বক পরিষ্কার করা হয়। প্রয়োজনে ডাবল ক্লিনিং করা হয়। একবার কেমিক্যাল দিয়ে, পরে অর্গ্যানিক ক্লিন করা হয়। ট্রিটমেন্টের পরে ময়শ্চারাইজ়ার এবং সানস্ক্রিন অবশ্যই লাগাতে হবে। বাড়িতে করলেও এই দু’টি নিয়মিত লাগানো খুব জরুরি। এর তেমন কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। তবে করার পরে পরেই মুখে লাল ছোপ তৈরি হতে পারে। তখন অ্যালো ভেরা জেল বা কোনও সেরাম লাগিয়ে দেওয়া হয়। ঘণ্টাকয়েক পরে তা কমে যায়।
ডার্মাপ্লেনিং কখন করবেন না
এটি অ্যাকনে মার্ক কমায় ঠিকই। তবে কারও যদি অ্যাকনে থাকে, তবে এই ট্রিটমেন্ট না করানোই ভাল। অ্যালার্জি থাকলে বা ত্বক যদি প্রচণ্ড সংবেদনশীল হয়, তবে এই ট্রিটমেন্ট করতে বারণ করা হয়।
করার আগে কোন বিষয় মনে রাখতে হবে?
সাধারণত তিন-চার সপ্তাহ অন্তর ডার্মাপ্লেনিং করা যায়। কারণ নতুন কোষ তৈরি হতে একুশ দিন সময় লাগে। সেই সময়ের আগেই ঘন ঘন এই ট্রিটমেন্ট করালে ত্বকে অন্য সমস্যা দেখা যায়। শহরের এক নামী সালঁর কর্ণধার মৌসুমী মিত্র কয়েকটি বিষয় সম্পর্কে সতর্ক করে দিলেন:
ডার্মাপ্লেন করানোর আগে তিন থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে এক্সফোলিয়েট করা যাবে না।
সরাসরি সূর্যের আলো দিন সাতেক আগে থেকেই ত্বকে লাগানো চলবে না।
বোটক্সের পরিকল্পনা থাকলে, ডার্মাপ্লেনের পরে তা করতে হবে।
ফেশিয়াল ওয়্যাক্সিং করাতে হলে তা হবে এক-দু’সপ্তাহ আগে।
ডার্মাপ্লেন করার পরে কী করণীয়?
এই ট্রিটমেন্টের ৪৮ ঘণ্টা পর পর্যন্ত মেকআপ লাগানো যাবে না।
দিনদুয়েক রোদে না বেরোনোই ভাল।
বাড়িতে থাকলেও সানস্ক্রিন ও ময়শ্চারাইজ়ার ব্যবহার করা জরুরি।
ওয়্যাক্সিং ও ডার্মাপ্লেনের মধ্যে পার্থক্য
ওয়্যাক্সিং গোড়া থেকে রোম নির্মূল করে। ডার্মাপ্লেনে উপর থেকে রোম কেটে দেওয়া হয়। কারও যদি শুধু রোম নির্মূলের ব্যাপার থাকে, তবে ওয়্যাক্সিং শ্রেয়। ত্বকের অন্য সমস্যাগুলির নিরসন চাইলে, ডার্মাপ্লেন করতে পারেন। ওয়্যাক্সিংয়ের খরচ অনেক কম।
রোম কি মোটা হয়ে যায়?
অনেকের ধারণা, ডার্মাপ্লেন করার পরে মুখের রোম মোটা হয়ে যায়। এটা ভ্রান্ত ধারণা। রোম মোটা হয় না। তবে তার দৃশ্যমানতা বাড়ে। হয়তো ক্ষেত্রবিশেষে তা শক্ত হয়ে যায়। শরীরের যে কোনও অঙ্গে ওয়্যাক্সিং করালে যে পরিবর্তন দেখা যায়, এ ক্ষেত্রেও তাই।
বাড়িতে ডার্মাপ্লেন
প্রথমে মুখ ভাল করে ক্লিন করা হল। তার পরে পুরো মুখে পেট্রোলিয়াম জেলি লাগিয়ে ডার্মাপ্লেন করা যায়। ব্লেড চালানোর কায়দা এ ক্ষেত্রে রপ্ত করতে হবে। ডার্মাপ্লেন করার পরে সুইট আমন্ড অয়েল, হোহোবা অয়েল বা অ্যাপ্রিকট অয়েল লাগানো যেতে পারে। এই অয়েলগুলি ত্বকের ভিতরে গিয়ে পুষ্টি জোগায়, জেল্লা বাড়ায়।
ডার্মাপ্লেনের বাড়তি উপকারিতা
প্রধান তিনটি কাজ ছাড়াও ডার্মাপ্লেন বলিরেখা কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া নিখুঁত মেকআপ করার জন্যও এটি খুব ভাল কাজে দেয়। ডার্মাপ্লেন করার পরে যে কোনও ধরনের প্রডাক্ট ত্বকের ভিতরে পৌঁছতে পারে
আরও সহজে।
মুখের জেল্লা বাড়াতে ডার্মাপ্লেন করা হয়। তবে অবশ্যই এর আগে ও পরে সতর্কতা পালন করতে হবে। তা না হলে কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যাবে না।
মডেল: সুস্মিতা চট্টোপাধ্যায়
মেকআপ: সৈকত নন্দী
ছবি: শুভদীপ সামন্ত