কেয়া শেঠ
কথায় আছে "নারীর কেশেতেই বেশ", কেশ বিন্যাসের পুঙ্খানুপুঙ্খ সম্পর্কে নারীদের মতন সচেতনতার উদাহরণ নাকি পৃথিবীতে বিরল। তবে আজকের দিনে দাঁড়িয়ে নারীদের সঙ্গে তালে তাল মিলিয়ে কেশ সম্পর্কিত সমস্ত সচেতনতা অবলম্বন করতে পুরুষরাও কিন্তু সিদ্ধহস্ত। তাই এই কথার কথাটা এবার না হয় একটু পাল্টেই ফেলা যাক !!!...
এই সময়ে বেশিরভাগ মানুষেরই চুল সম্পর্কে ধারণা নিতান্তই সহজ। আদপে কি বিষয়টা এতটাই অনায়াস? আসুন দেখেনি চুল নিয়ে কী বলছেন কেয়া শেঠ।
আমাদের চুল তৈরী হয়েছে কেরাটিন নামক একটি বিশেষ ধরণের প্রোটিন দিয়ে। চুলের জন্ম, বৃদ্ধি এবং মৃত্যুর সাইকেল মূলত তিনটে ভাগে ভাগ করা হয়- অ্যানাজেন (জন্ম), ক্যাটাজেন (বৃদ্ধি) এবং টেলোজেন (মৃত্যু)। বিভিন্ন মানুষের চুল বিভিন্ন হারে বৃদ্ধি পেলেও, চুলের গড় বৃদ্ধির হার প্রতি মাসে প্রায় দেড় ইঞ্চি। প্রত্যেকটা চুল আবার তিন ভাগে ভাগ করা যায়- মেডুলা (ভিতরের স্তর), কর্টেক্স (মাঝের স্তর) এবং কিউটিকল (বাইরের স্তর)। চুলের সিংহ ভাগ অংশটাই হলো কর্টেক্স যার উপর কিউটিকল আস্তরণ তৈরী করে চুলের কাঠামো ধরে রাখতে সাহায্য করে। আবার অন্যদিকে মেডুলার দ্বারা নির্ধারিত হয় চুলের ঘনত্ব, রং এবং টেক্সচার। বিভিন্ন রকম চুলের প্যাটার্নের মধ্যে বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য রয়েছে স্ট্রেট চুল, ওয়েভি, কার্লি এবং কোয়েলি। এদের প্রত্যেকের বৈশিষ্ট আলাদা আলাদা রকমের। চেনার ক্ষেত্রে সহজ উপায় হলো তাদের টাইপ লক্ষ্য করা। চুলের জন্ম এবং মৃত্যুর সাইকেল ছোট হওয়ার ফলে প্রত্যেকদিন স্বাভাবিকভাবে ২৫-১০০ টি চুল পড়ে যায় এবং তার জায়গায় নতুন চুল গজায়।
আমাদের রোজকার জীবনে চুলের সঠিক যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো কোনো সময় অজান্তেই আমরা ভুল করে ফেলি এবং তার ফলে ঘটে নানান রকমের সমস্যা। যার মধ্যে কয়েকটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হলো:
ড্যানড্রাফ বা খুশকি: শুস্ক স্ক্যাল্পের সাদা সাদা ফ্লেক্স যা চুলের সঙ্গে সঙ্গে মাথার ত্বকের ক্ষতি করে এবং চুলের গড় আয়ু কমিয়ে আনে প্রায় ৩০%। এছাড়াও খুশকি যুক্ত চুলের কারণে লোক সমাজে অনেক সময় লজ্জায় পড়তে হয় মানুষকে।
শুস্ক ও রুক্ষ চুল: অনেক সময় ঘন ঘন শ্যাম্পু করার ফলে স্ক্যাল্প এবং চুল তার প্রাকৃতিক তৈলাক্তভাব হারায় যার ফলে সাংঘাতিক ভাবে রুক্ষ হয়ে পরে। এরফলে চুলের ফলিকল আস্তে আস্তে শুকিয়ে যেতে থাকে এবং চুল পড়ার সমস্যা অনেক গুন বেড়ে যায়।
ফ্রিজি হেয়ার: প্রায়ই শরীরে ডিহাইড্রেশনের ফলে চুলে আর্দ্রতার মাত্রা স্বাভাবিকের থেকে কম হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে চুল অনেক বেশি রাফ এবং জটযুক্ত দেখতে পারে, যাকে আমরা সাধারণ ভাষায় ফ্রিজি হেয়ার বলে থাকি।
অ্য়ালোপেশিয়া অ্য়ারিএটা বা টাকপোকা: মাথার স্ক্যাল্পের মাঝে মাঝে গোলাকার ভাবে চুল উঠে যাওয়াকে প্রধানত অ্য়ালোপেশিয়া অ্য়ারিএটা বা টাকপোকা বলা হয়। যদিও এই টাকের সঙ্গে পোকামাকড়ের কোনো রকম সম্পর্ক নেই তবে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার ফলে চুলের ফলিকলগুলো আস্তে আস্তে নষ্ট হয়ে যায় এবং চুল পড়ার পর সেই জায়গায় কোনো নতুন চুল নাও গজাতে পারে। প্রাথমিক অবস্থায় এর প্রতি লক্ষ্য না করা হলে পরে সমস্যা বেড়ে যায় এবং চিকিৎসার বাইরেও চলে যেতে পারে।
ফলিকুলাইটিস বা স্ক্যাল্প ইনফেকশন্স: ঘন ঘন শ্যাম্পু করার ফলে যেমন চুল এবং স্ক্যাল্প রুক্ষ হয়ে যেতে পারে ঠিক তেমন ভাবেই কম পরিষ্কারের ফলে অনেকসময় মাথার ত্বকে দেখা দিতে পারে নানান ব্যাকটেরিয়াল বা ফাংগাল ইনফেকশন্স। এর ফলে চুলের ফলিকলগুলি ফুলে যেতে পারে এবং সাময়িক চুল পড়া বৃদ্ধি পেতে পারে।
এছাড়াও, বিভিন্ন সূত্রের তথ্য অনুযায়ী পুরুষ এবং মহিলাদের মধ্যে বিশেষ কিছু চুল পড়ার সমস্যা আলাদা ভাবে দেখা দিতে পারে। মহিলাদের ক্ষেত্রে যেমন বয়সের বৃদ্ধি, শরীরে হরমোনাল ইমব্যালেন্স, প্রেগন্যান্সি, মেনোপজ, চুলে অতিরিক্ত কেমিক্যাল প্রোডাক্ট ব্যবহার, ইত্যাদি চুল পড়ার বিশেষ কারণ হতে পারে, তেমনি পুরুষদের ক্ষেত্রে অযত্ন, ক্লান্তি, অনিদ্রা, অতিরিক্ত স্ট্রেস, ইত্যাদির প্রভাব খানিকটা বেশি।
দৈনন্দিন জীবনে ছোট ছোট কিছু টোটকা মাথায় রাখলেই রেহাই পাওয়া যাবে এই সমস্ত সমস্যার হাত থেকে। যেমন:
সঠিক ডায়েট: রোজকার খাবারে পর্যাপ্ত পরিমানে প্রোটিন, ভিটামিন বি, জিঙ্ক, ইত্যাদি খাদ্যগুন থাকা প্রয়োজন সুন্দর ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুলের জন্য। খাবারের সঙ্গে পর্যাপ্ত জল খেতে হবে শরীর হাইড্রেশনের লেভেল মেনটেইন করার জন্য।
সঠিক ভাবে চুল আঁচড়ানোর পদ্ধতি: সব সময় মাথায় রাখতে হবে যে ভেজা চুল কোনো ভাবেই আঁচড়ানো যাবে না। চিরুনি ব্যবহারের ক্ষেত্রে কাঠের চিরুনি ব্যবহার করা শ্রেয়।
সঠিক শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনারের ব্যবহার: আপনার চুলের জন্য ঠিক কোন ধরণের শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার প্রযোজ্য সেটা সবার আগে বেঁছে নিতে হবে। স্ক্যাল্পের টাইপ অনুযায়ী সপ্তাহে কতদিন শ্যাম্পু করা যাবে সেটাও বুঝে নিতে হবে ভালো করে। শ্যাম্পু করার পরে অবশ্যই কন্ডিশনিং করা বিশেষ ভাবে প্রয়োজন।
চুলের সঠিক যত্ন এবার বাড়িতে বসেই সম্ভব। কেয়া শেঠ অ্য়ারোমাথেরোপির হেয়ার ফল কন্ট্রোল রেঞ্জের মধ্যে থাকা এক্টিভ এসেনশিয়াল অয়েলস, ভিটামিনস, ক্যাফেইন, অ্যামিনো আসিডস, চুল পড়া বন্ধ করে দ্রুত নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। এটি চুলের মান বৃদ্ধি করার পাশাপাশি স্ক্যাল্প হেলথও বজায় রাখে। অলিভ এক্সট্রাক্টস, মেথি এক্সট্রাক্টস এবং প্রাকৃতিক এসেনশিয়াল অয়েলস সমৃদ্ধ ড্যানড্রাফ ট্রিটমেন্ট রেঞ্জ যা খুশকি রোধ করে চুলের কিউটিকলস স্মুথ করতে সাহায্য করে। মিল্ক প্রোটিন এক্সট্রাক্টস যুক্ত হেয়ার মিল্ক নন-স্টিকি, ফ্রিজি চুলের সঠিক যত্ন নিতে বিশেষ ভাবে কার্যকর। প্রত্যেকটি প্রোডাক্টের নিয়মিত ব্যবহারে চুল হয়ে উঠবে ঝলমলে সুন্দর এবং স্বাস্থ্যে পরিপূর্ণ।