পুজোয় রশ্মিকা না কি অদা, কার মতো চুলের সাজ চান? ছবি: সংগৃহীত।
শহর থেকে শহরতলি জুড়ে পুজোর প্রস্তুতি তুঙ্গে। চারদিক সাজ সাজ রব। নিজেকে নতুন করে সাজিয়ে তোলার এমন মোক্ষম সুযোগ হাতছাড়া করে না বাঙালি। পোশাক থেকে নেলপালিশের রং— পুজোর সময় সবেতেই বৈচিত্র্য খোঁজেন সকলে। পুজোর ভিড়ে আলাদা করে নজরকাড়া সহজ নয়। কেতাদুরস্ত পোশাকের সঙ্গে মানানসই রূপটান করার পাশাপাশি চুলেরও চাই আলাদা সাজ। স্পা, স্ট্রেটনিং, স্মুদনিং তো আছেই, তবে সেই সঙ্গে পুজোয় চুল রং করারও একটা হুজুগ ওঠে।
ইশার মতো ‘রেড টোন’ ও বেশ ভাল দেখাবে। ছবি: সংগৃহীত।
লাল, নীল, বেগনি— বাসে, ট্রামে, মেট্রোয় এমন রঙিন চুলের আনাগোনা প্রায়ই দেখা যায়। পুজোর সময়ে সেই সংখ্যাটি খানিক বেড়ে যায়। অনেকেই টলিউড, বলিউডের তারকাদের দেখেও চুল রং করান। তবে পুজো বলে কথা। চুলের সাজ যদি দেখে বোঝাই না যায়, যে পুজো আসছে তা হলে সব সাজই তো ব্যর্থ। চুল রং করানোর পরিকল্পনা নিয়ে পার্লারের চৌকাঠ তো পেরোলেন। কিন্তু তার পর অনেকেই বুঝতে পারেন না যে, চুলে ঠিক কোন রং করালে দেখতে ভাল লাগবে। সেটা একটা সমস্যা। তা ছাড়া, পুজোর ‘ট্রেন্ডিং হেয়ার কালার’-এরও খোঁজ করেন কেউ কেউ। কিন্তু চুল রং করার ক্ষেত্রে কি চলতি হাওয়ায় গা ভাসানো ঠিক হবে? চুল রং করানোর আগে কী কী বিষয় মাথায় রাখা জরুরি? আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে এমনই একগুচ্ছ প্রশ্ন রাখা হয়েছিল কেশসজ্জাশিল্পী জলি চন্দের কাছে। জলি বলেন, ‘‘বিশেষ কোনও একটা বা দুটো রংই যে সকলে করবেন বলে আসছেন, এমন নয়। এ বছর আলাদা করে কোনও ট্রেন্ডিং রং নেই। সকলেই তাঁদের ইচ্ছার রং বেছে নিচ্ছেন। আমিও কাউকে বলি না কোন রং বেশি চলছে। বরং সব সময়েই পরামর্শ দিই যে, ব্যক্তিত্বের সঙ্গে মানানসই রং করানো ভাল।’’ অনেকে রং করানোর ধরন নিয়েও পরীক্ষা করেন। যেমন জলি জানান, ‘ফ্যাশন কালার’ করান কেউ কেউ। অর্থাৎ, আর পাঁচ জনের চেয়ে আলাদা ভাবে চুলে রং করান। হয়তো একটি দিকে রং করালেন কিংবা কয়েকটি চুলে রং করিয়ে নিলেন। এমন সব ক্ষেত্রে ‘কপার টোন’, ‘ক্যারামেল টোন’, ‘চকোলেট টোন’ বেশি চলছে। আমার তো মনে হয় পুজোর সময়ে বলে নয়, সারা বছরই এই ধরনের রং খুব বেশি চলে।’’
দীপিকার মতো ‘চকোলেট টোন’ও কিন্তু মন্দ লাগবে না। ছবি: সংগৃহীত।
এই রংগুলি করার কি বাড়তি কোনও সুবিধা রয়েছে? কেশসজ্জাশিল্পী হিসাবে কী মনে হয় তাঁর? জলির কথায়, ‘‘পুজোর কয়েকটি দিন ফ্যাশন কালার করলে মন্দ লাগে না। কিন্তু তার পর তো সেই আবার আগের রুটিনে ফিরতে হবে। স্কুল, কলেজ, অফিস, কর্পোরেট মিটিং, বাস-ট্রামে যাতায়াত তো আছেই। ফলে ইচ্ছা থাকলেও খুব বেশি গাঢ় রং করাতে চান না অনেকেই। চেস্টনাট ব্রাউন, হালকা লাল বেশি করাচ্ছেন অনেকেই।’’
কৃতির মতো চুলে ‘ক্যারামেল টোন’ করাতে পারেন। ছবি: সংগৃহীত।
চুল রং করানো নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে ভয় পাচ্ছেন কি কেউ কেউ? কেশসজ্জাশিল্পীর কথায়, ‘‘ভয় বলব না, তবে নিজের কাজ, ব্যক্তিত্বের কথা মাথায় রাখা এবং সর্বোপরি কোন রংগুলি বেশি দিন স্থায়ী হবে, এই বিষয়গুলি মাথায় রেখেই চুলের রং নির্বাচন করছেন বেশির ভাগে।’’
প্রিয়ঙ্কার মতো ‘চেস্টনাট টোন’ এক বার করে দেখবেন না কি? ছবি: সংগৃহীত।
কম বয়সিদের মধ্যে ‘অমব্রে’ ইদানীং বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। চুলের নীচের অংশটা রং করা থাকে। মাথার সামনের দিকটা কালো। অনেকেই এমন করে রং করিয়েছেন। যাঁদের সব সময়ে চুল বেঁধে রাখতে হয়, তাঁদের জন্য এটা ভাল ভাবনা। যাঁরা চুল রং করাতে চান, কিন্তু রঙিন চুল হাওয়ায় উড়ে মুখের উপর এসে পড়ুক, তা না চাইলে অমব্রে করাতে পারেন। এক মত জলিরও।
পুজোর সময়ে অনেকেই চুল স্ট্রেট করান। আবার কারও নিজের কোঁকড়া, ঢেউ খেলানো চুলই বেশি পছন্দের। চুলের ধরন কেমন, চুল রং করানোর ক্ষেত্রে কি সেটা মাথায় রাখা জরুরি নয় বলেই মনে করছেন তিনি। কাকে কোন রং মানাবে তা নির্ভর করে তাঁর ব্যক্তিগত যাপন, ব্যক্তিত্ব, আচরণের উপর। সুন্দর মসৃণ চুল দারুণ একটা ট্রেন্ডি রং করলেই যে ভাল দেখাবে, তার কোনও মানে নেই। রং করার পর নতুন সাজের সঙ্গে কে কতটা নিজেকে মানিয়ে নিতে পারছেন, কে কতটা অভ্যস্ত হতে পেরেছেন সেটাই আসল। কেউ যদি মনে করেন যে তিনি চুলের একটি অংশ হলুদ কিংবা সবুজ করবেন, করতেই পারেন। তবে হলুদ, সবুজ চুলের সঙ্গে মানানসই সাজ হতে হবে। চলাফেরা, হাঁটাচলাও একটু অন্য রকম হতে হবে। বাইরে থেকে দেখে যেন আড়ষ্ট মনে না হয়। জড়তা কাটিয়ে ফেলতে পারলেই পুজোয় চুলে যে রং-ই করান না কেন, সকলের নজর থাকবে আপনার দিকে। তবে ঝুঁকি নিতে না চাইলে ‘চেস্টনাট ব্রাউন’ ‘মেহগনি’, ‘কপার ব্রাউন’ করাতে পারেন। চুলের নতুন সাজ হবে, আবার রঙিন চুল নিয়ে কোনও বেকায়দাতেও পড়তে হবে না।