কান উৎসবে পৌঁছে গেল কলকাতার আর এক কন্যার কাজও। ছবি: ইনস্টাগ্রাম।
প্রথম ভারতীয় অভিনেত্রী হিসাবে কান চলচ্চিত্র উৎসবে ‘আন সার্টেন রিগার্ড’ বিভাগে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার হাতে তুলে নিয়েছেন কলকাতার লেক গার্ডেন্সের অনসূয়া সেনগুপ্ত। ‘দ্য শেমলেস’ ছবিতে অনসূয়ার অভিনয় মন কেড়েছে সিনেপ্রেমীদের। এ বছরের কান উৎসবে ভারতের অন্য অভিনেত্রীরা যখন বিদেশি পোশাকে ক্যামেরাবন্দি হয়েছেন, তখন অনসূয়াকে দেখা গিয়েছে শাড়িতেও। নিয়ন সবুজ রঙের সুতির শাড়ি পরা সেই ছবিই ছড়িয়ে পড়েছে দিকে দিকে। জায়গা করে নিয়েছে জনপ্রিয় বিজ্ঞাপনেও। অনসূয়ার দেশি বেশভূষার নেপথ্যে কারা? খোঁজ নিল আনন্দবাজার অনলাইন।
কলকাতার শ্রুতান্বিতা চক্রবর্তী ও উজান গঙ্গোপাধ্যায়ের অনলাইন স্টোর ‘কোয়ার্কিবে’ থেকে অনসূয়া নিজেই এই শাড়িটি পছন্দ করেছেন। অনসূয়ার এই শাড়িটির নকশা করেছেন পোশাকশিল্পী শ্রুতান্বিতা। এ বছরের কান উৎসবের জন্য তাঁর নকশা করা পোশাক অনসূয়া বেছে নিয়েছেন বলে বেশ আনন্দিত তিনি। শ্রুতান্বিতা বলেন, ‘‘অনসূয়া মাঝেমধ্যেই আমাদের স্টোর থেকে কেনাকাটা করেন। আমাদের ওয়েবসাইটে এই শাড়িটির ছবি দেখে অনসূয়ার খুব পছন্দ হয়। তিনি আমাকে জানান, এই শাড়িটি কান উৎসবে পরতে চান। ওঁর কথা মতো আমরা শাড়িটি ওঁর কাছে পাঠিয়ে দিই। তিনি তখন গোয়ায় ছিলেন। তখনও আমরা আঁচ করতে পারিনি এত বড় কিছু হতে চলেছে। তবে অনসূয়া পুরষ্কার পাওয়ার পর আমাদের শাড়ির কদর যেন অনেক গুণ বেড়ে গেল। আমরা খুব ছোট একটি ব্র্যান্ড। আমাদের পোশাক পরে ও এত বড় একটি প্ল্যাটফর্মে নিজেকে তুলে ধরেছে, এর জন্য আমরা ওর কাছে কৃতজ্ঞ। অনুসূয়ার এই পদক্ষেপ আমাদের জীবনে একটি বড় প্রভাব ফেলেছে।’’
‘কোয়ার্কি বে’-র কর্ণধার শ্রুতান্বিতা চক্রবর্তী এবং উজান গঙ্গোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।
কান উৎসবে আর পাঁচ জন ভারতীয় অভিনেত্রীর পরনের পাশ্চাত্য পোশাকগুলি নিয়ে যখন সংবাদমাধ্যমে এত রকম চর্চা হচ্ছে, তখন অনুসূয়া হঠাৎ শাড়িকেই বেছে নিলেন কেন? শ্রুতান্বিতা বলেন, ‘‘অনুসূয়া বরাবরই শাড়ি পরতে ভালবাসেন। আর খুব সুন্দর ভাবে শাড়িটি পরেও ফেলেন। দেখে মনে হয়, তিনি শাড়ি পরে পাহাড়ও চড়ে ফেলতে পারবেন। অনুসূয়া সব সময়েই পরিবেশবান্ধব শিল্প, দেশের শিল্পকে তুলে ধরতে চেয়েছেন ওঁর ফ্যাশনে। তাই হয়তো ওঁর আমাদের স্টোর এত পছন্দ।’’
অনুসূয়ার অরগ্যানিক কটন শাড়িটি পুরোটাই হাতে বোনা। মূলত হ্যান্ড ব্রাশ ও হ্যান্ড ব্লক করে তৈরি করা হয়েছে। এই শাড়িটির ফড়িং মোটিফ শাড়িটিকে আরও নজরকাড়া করে তুলেছে। মোলায়েম সুতির শাড়িটি গরমে পরার জন্য একেবারে আদর্শ। শাড়িটির দাম ৩, ৯৯৯ টাকা।
গোটা বিশ্ব এখন সুস্থায়ী উন্নয়নের পথে হাঁটছে। অর্থাৎ, এমন উন্নয়ন, যার ফলে পরিবেশের কোনও রকম ক্ষতি হবে না। পরিবেশের ক্ষতি মানেই তো সকলের ক্ষতি। উষ্ণায়ন, বৃষ্টিপাতের স্বল্পতা কিংবা অতিবৃষ্টি বা অনাবৃষ্টি, আচমকা ভূমিকম্প, সুনামি— এ সবই পরিবেশ দূষণের ফল। পোশাকশিল্পেও পরিবেশ সচেতনতার বিষয়টি মাথায় রেখে নানা রকমের কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। অনসূয়াও এই বিষয়ে বেশ সচেতন। তাই তিনি হাতে বোনা সুতির পোশাক ভালবেসেন। কলকাতার এই দুই পোশাকশিল্পী পরিবেশবান্ধব উপকরণ নিয়েই কাজ করে। কান উৎসব থেকে ফেরার পর অনুসূয়ার কথা হয়েছে উজানের সঙ্গে। উজানকে তিনি জানিয়েছেন, শহরে ফিরেই শাড়ি পরা ছবিগুলি তিনি ভাগ করে নেবেন তাঁর সঙ্গে।