বছরশেষে এ বার ফ্যাশনের ক্ষেত্রে টলিপাড়ার সেরাদের বেছে নেওয়ার পালা। প্রতীকী ছবি।
সিনেমা, ওয়েব সিরিজ়, ধারাবাহিক— বিভিন্ন মাধ্যমে দর্শককে সারা বছর বিনোদনের মোড়কে মুড়িয়ে রাখেন অভিনেতারা। তাঁদের অভিনয় যেমন আলোচনার কেন্দ্রে থাকে, তেমনই চর্চা তাঁদের সাজপোশাক নিয়েও। কখনও কুড়িয়ে নেন প্রশংসা, কখনও তৈরি হয় বিতর্কও। কেউ পোশাক নিয়ে প্রচলিত ধারণার ছক ভেঙেছেন, কেউ আবার ছিমছাম থেকেও কেড়ে নিয়েছেন দর্শকের নজর। বছর শেষে এ বার ফ্যাশনের ক্ষেত্রে সেরাদের বেছে নেওয়ার পালা। আনন্দবাজার অনলাইনের তৈরি করা তালিকায় টলিপাড়ার কোন অভিনেতারা জায়গা করে নিলেন?
আজমেরি হক বাঁধন
বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী। তবে এখন আর তাঁকে শুধু ও পারের বললে ভুল বলা হয়। সৃজিত মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি’ সিরিজ়ের হাত ধরে এ পার বাংলাতেও এখন পরিচিত মুখ বাঁধন। অভিনেত্রী হিসাবে নিজের দক্ষতা প্রমাণ করেছেন ইতিমধ্যেই। অভিনয়ের পাশাপাশি, তাঁর সাজপোশাকেও মুগ্ধ দুই বাংলার দর্শক। শাড়ি থেকে মিনি স্কার্ট— সবেতেই তিনি সাবলীল। অভিনেত্রীর সামাজিক মাধ্যমের পাতায় উঁকি দিলে সে কথা প্রত্যয় হবে। সরুহাতা ব্লাউজ, উন্মুক্ত পিঠ, সেই পিঠের উপর ছড়ানো ঢেউ খেলানো চুল, পরনে কখনও জামদানি, কখনও হ্যান্ডলুম, দুই ভুরুর মাঝখানে ছোট্ট টিপ— ছিমছাম অথচ এমন মায়াবী সাজে পর্দার ‘মুশকান জ়ুবেরী’ দাগ কেটেছিলেন দর্শকের মনে। তার পর থেকেই আলোচনার কেন্দ্রে তিনি। আন্তর্জাতিক কান চলচ্চিত্র উৎসবের রেড কার্পেট মাতিয়েছিলেন ধূসর ঢাকাই জামদানি আর নানা রঙের পাথরের কারুকাজ করা পিঠখোলা ব্লাউজে। কান-এ এর আগেও বহু অভিনেত্রী শাড়ি পরেছেন। ঐশ্বর্য রাই বচ্চন থেকে কঙ্গনা রানাউত— অনেকেই রয়েছেন সেই তালিকায়। তবে প্রথম কেউ বাংলার ঢাকাই জামদানি পরে লাল গালিচায় হাঁটলেন। দেশের সংস্কৃতিকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে তুলে ধরতেই এই প্রয়াস নিয়েছিলেন অভিনেত্রী। শাড়িতে তাঁকে সুন্দর দেখালেও অন্য পোশাকেও তিনি সমান স্বচ্ছন্দ। এয়ারপোর্ট লুক কিংবা মেয়ে সায়রার সঙ্গে সমুদ্রের পাড়ে— যে কোনও সাজেই চোখ টেনে নেন বাঁধন। পোশাক নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করতে ভালবাসেন। অনুষ্ঠানের স্বাদ অনুযায়ী বাছাই করেন পোশাক। সাজপোশাকে একটা স্বকীয়তা বজায় রাখার চেষ্টা করেন সব সময়। অভিনেত্রীর সাজ বাড়িয়ে তোলে তাঁর উপস্থিতির গাম্ভীর্য। ব্যক্তিগত জীবনের ওঠাপড়ার মতো অভিনেত্রীর সাজগোজেও রয়েছে ব্যতিক্রমী ছোঁয়া।
আন্তর্জাতিক কান চলচ্চিত্র উৎসবের রেড কার্পেট মাতিয়েছিলেন ধূসর ঢাকাই জামদানি আর নানা রঙের পাথরের কারুকাজ করা পিঠখোলা ব্লাউজে। ছবি: বাঁধনের ইনস্টাগ্রামের পাতা থেকে।
অনির্বাণ ভট্টাচার্য
ফটোশুট কিংবা বিজ্ঞাপনী প্রচারে অংশ নেওয়া ছাড়া বাকি সময়ে একেবারে সাধারণ পোশাকেই দেখা যায় অভিনেতা-পরিচালক অনির্বাণ ভট্টাচার্যকে। অভিনয় জীবনের শুরুটা মঞ্চ থেকে। খুব বেশি জাঁকজমকে বিশ্বাস করেন না। ফলে পোশাকেও তার প্রতিফলন দেখতে পাওয়া যায়। বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে নিজেও সে কথা স্বীকার করেছেন তিনি। ‘ট্রেন্ড’ অনুযায়ী চলার মানুষ যে অনির্বাণ নন, তা এত দিনে জেনে গিয়েছে গোটা টলিপাড়া। দর্শকেরও তা অজানা হয়। তাঁর কাছে ‘ফ্যাশন’ মানে স্বস্তি। যে ধরনের পোশাক পরলে তা মিলবে, তাতেই তিনি স্বচ্ছন্দ বোধ করেন। পোশাক নিয়ে ভাবনাচিন্তা না থাকলেও, যে কোনও সাজেই পর্দার ‘ব্যোমকেশ বক্সী’ নজর কাড়তে জানেন। যে পোশাক পরে নাটকের মহড়া দেন, সেটি গায়ে চাপিয়েই অবলীলায় চলে যেতে পারেন ছবির প্রিমিয়ারে কিংবা জমকালো কোনও পার্টিতে। অভিনয় বা পরিচালনা নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষায় যতটা বিশ্বাসী অনির্বাণ, সাজপোশাক নিয়ে ততটা নন। তবু কোথাও গিয়ে তাঁকে যেন আলাদা করে চেনা যায়। সাজ নিয়ে এই ভাবলেশহীনতাই যেন তাঁর নিজস্ব ‘স্টাইল স্টেটমেন্ট’, সে কথা অনির্বাণ মুখে না বললেও, বারে বারেই বুঝিয়ে দেন।
অভিনয় বা পরিচালনা নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষায় যতটা বিশ্বাসী অনির্বাণ, সাজপোশাক নিয়ে ততটা নন। ছবি: অনির্বাণের ফেসবুকের পাতা থেকে।
মিমি চক্রবর্তী
সাজগোজ করতে ভালবাসেন সাংসদ-অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তী। তাই বলে খুব জমকালো সাজগোজে কখনওই খুব একটা তাঁকে দেখা যায় না। সাজের তেমন ধরন তিনি পছন্দও করেন না। মিমির সাজ মানেই একঝলক ঠান্ডা হাওয়ার মতো। মনপ্রাণ কেমন সতেজ করে দেয়। পাহাড়ে বেড়ে ওঠা। সেই পাহাড়ি উচ্ছলতার আভাস পাওয়া যায় রাজ্যের কনিষ্ঠতম সাংসদের সাজপোশাকেও। মিমির ফ্যাশন বিবৃতি যে একটু আলাদা, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। স্রোতের বিপরীতে হাঁটাই যেন তাঁর দস্তুর। কখনও ব্রালেটের সঙ্গে লেহঙ্গা, আবার কখনও শাড়ির সঙ্গে জিন্স— যাদবপুরের তারকা সাংসদ বরাবরই ছক ভাঙতে ভালবাসেন। আবার বাড়ির পুজোয় সোনার গয়না আর সবুজ কাঞ্জিভরম পরে জমিয়ে ধুনুচিও নাচেন তিনি।
মিমির সাজ মানেই একঝলক ঠান্ডা হাওয়ার মতো। ছবি: মিমির ইনস্টাগ্রামের পাতা থেকে।
শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়
টলিপাড়ায় ‘ফ্যাশন সচেতন’ হিসাবে বেশ নামডাক রয়েছে অভিনেত্রী শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়ের। এই তকমা অবশ্য অতিরঞ্জিত নয়। কারণ শুভশ্রী যথেষ্ট মাথা খাটিয়ে পোশাক পরেন। মা হওয়ার পর চটজলদি ওজন ঝরিয়ে আগের চেহারায় ফিরেছেন। তবে মোটা হয়ে যাওয়ার সঙ্গে ফ্যাশনের যে কোনও সম্পর্ক নেই, অন্তঃসত্ত্বাকালীন ফোটোশুটে তা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন অভিনেত্রী। ফোলা পা আর স্ফীতোদর নিয়ে মাতৃত্বকালীন সাজপোশাকে নজর কেড়েছিলেন শুভশ্রী। ভারতীয় পোশাক থেকে পশ্চিমি— সব ধরনের পোশাকেই সাবলীল ভাবে ধরা দেন অভিনেত্রী। চওড়া পাড়ের শাড়ি, সোনার গয়না, সিঁথিতে চওড়া সিঁদুর— সাবেকি সাজের পাশাপাশি, তিনি নজর কাড়েন হাঁটুর উপর শেষ হয়ে যাওয়া কালো বডিকন কিংবা হলুদ বিকিনিতেও। কখনও তিনি ‘পরিণীতার’ চঞ্চল কিশোরী, আবার তিনিই ‘বিসমিল্লার’ রাধা। চামড়া কুঁচকে ঝুলে গিয়েছে, মাথায় পাকা চুল, কপাল জুড়ে বয়সের ভাজ, চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা— ৭৫ বছর বয়সি ‘ইন্দুবালার’ চরিত্রে শুভশ্রীকে দেখবেন বলে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন দর্শক। পর্দার মতো ব্যক্তিগত জীবনেও তিনি নিজের ‘লুক’ নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করতে আগ্রহী। ছবির প্রচার কিংবা ঘরোয়া পার্টি— সাজগোজে নিজস্বতা রাখতে জানেন শুভশ্রী।
পর্দার মতো ব্যক্তিগত জীবনেও নিজের ‘লুক’ নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করতে আগ্রহী নায়িকা। ছবি: শুভশ্রীর ইনস্টাগ্রামের পাতা থেকে।
বিক্রম চট্টোপাধ্যায়
এখন আর তাঁকে শুধু পর্দার রোম্যান্টিক নায়ক বললে হবে না। নতুন ছবি ‘পারিয়া’র হাত ধরে অভিনেতা বিক্রম চট্টোপাধ্যায় একেবারে অন্য অবতারে হাজির হয়েছেন। অনেকে বলছেন, নতুন অ্যাকশন হিরো পেল টলিউড। ফিটনেসের পাশাপাশি বিক্রম পোশাক-সচেতনও। তাঁর ইনস্টাগ্রামের পাতা ঘেঁটে দেখলে তা বোঝা যাবে। শৌখিনতার ছাপ রয়েছে তাঁর সাজগোজে। জুতো থেকে রোদচশমা — সব কিছুই যে তিনি অত্যন্ত ভাবনাচিন্তা করে বাছাই করেন, তা বেশ বোঝা যায়। বিক্রমের মেদহীন, পেশিবহুল চেহারায় পাঞ্জাবি যতটা মানানসই, ঠিক ততটাই জিনস্ আর একরঙা টি-শার্টেও নজর কাড়েন অভিনেতা। পুজোর সময় ধুতি-পাঞ্জাবিতেও দেখা গিয়েছিল তাঁকে। সাবেকি সাজ কিংবা পশ্চিমী ঘরানা— যে কোনও পোশাকেই তাঁর সাজ বাকিদের চেয়ে আলাদা করে বিক্রমকে।
সাবেকি সাজ কিংবা পশ্চিমি ঘরানা— যে কোনও পোশাকেই তাঁর সাজ বাকিদের চেয়ে আলাদা করে বিক্রমকে। ছবি: বিক্রমের ইনস্টাগ্রামের পাতা থেকে।