চিয়া বীজ নিয়ম করে লাগালে ত্বক সতেজ ও উজ্জ্বল হবে। ছবি: সংগৃহীত।
ওজন ঝরাতে আমারা যতটা আগ্রহী, ত্বকের যত্নে ততটা খেয়াল রাখি না। পেশার কারণে প্রায় রোজেই বাইরে বেরোলে চড়া রোদে পোড়ে ত্বক। বিস্তর ধুলোবালি, ময়লাও জমে ত্বকের রোমকূপে। সপ্তাহ ঘুরলেই দেখবেন, ত্বকের রঙে কালছে ছোপ পড়েছে। সেই ঔজ্জ্বল্য, চাকচিক্য আর নেই। কেমন শুকনো, খসখসে হয়ে গিয়েছে। যাঁরা দিনভর শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে থাকেন, তাঁদের ত্বকে টান ধরে আরও দ্রুত। তাই তরতাজা, কোমল ত্বক যদি পেতে হয়, তা হলে বিশেষ পরিচর্যা প্রয়োজন। তার জন্য একগাদা দাম দিয়ে প্রসাধনী কেনার প্রয়োজন নেই। চিয়া বীজই সেই ম্যাজিক করতে পারে।
চিয়া বীজে কী কী থাকে?
চিয়া বীজ প্রোটিন, ফাইবারে ভরপুর। প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি ফ্যাসিড, ভিটামিন সি ও ই এবং অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট থাকে। ১০০ গ্রাম চিয়া বীজে প্রায় ১৬.৫ গ্রামের মতো প্রোটিন থাকে।
ত্বকের কী কী উপকার করে?
১) ঔজ্জ্বল্য ফেরায়
শুকনো, খসখসে ত্বকে জলীয় ভাব ফিরিয়ে আনে। এক চা চামচ চিয়া বীজ সারা রাত জলে ভিজিয়ে রাখুন। দেখবেন আঠালো জেলির মতো হয়ে গেছে। এই জেলি ত্বকে লাগালে ভিতর থেকে ত্বক সতেজ ও ঝলমলে হয়ে উঠবে।
২) রোদে জ্বালাপোড়া থেকে বাঁচায়
চিয়া বীজের ভিটামিন ই রোদে পোড়া ত্বকের দাগছোপ দূর করে। সূর্যের নানা রকম ক্ষতিকর রশ্মির প্রভাবে ত্বকে র্যাশ, লালচে ভাব, জ্বালার অনুভূতি হয়। চড়া রোদে ত্বকে যে কালচে ভাব দেখা দেয়, তা দূর করতে চিয়া বীজের জুড়ি মেলা ভার।
৩) বুড়োটে ছাপ পড়বে না
চিয়া বীজে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে, যা ত্বকে কোলাজেন উৎপাদনে সাহায্য করে। কোলাজেন এক রকম প্রোটিন, যা ত্বক, চুল, নখ, হাড়ের সংযোগকারী কোনগুলি গঠন করে। চিয়া বীজের জেল নিয়মিত লাগালে ত্বকের প্রয়োজনীয় উৎসেচক যেমন কোলাজেন, হায়ালুরনিডেজ় এবং ইলাস্টেজ তৈরি হবে। ফলে চামড়া ও কোষ মজবুত, টানটান হবে। বলিরেখা পড়বে না। মনে হবে ত্বকের বয়স বছর পাঁচেক কমে গেছে।
৪) ব্রণ, ফুসকুড়ি হবে না
চিয়া বীজের উপকারিতা অনেক। ছবি: সংগৃহীত।
সোরিয়াসিস, দাদ-হাজা-চুলকানির মতো সমস্যা দূরে থাকবে। যে কোনও রকম সংক্রমণ থেকে ত্বকে বাঁচাবে চিয়া বীজ।
৫) ত্বকের বর্ম
চিয়া বীজে থাকে আলফা লিনোলেয়িক অ্যাসিড যা বাইরের ধুলোময়লা থেকে ত্বককে সুরক্ষা দেবে। চিয়া বীজের নির্যাসে থাকে ভিটামিন এফ, যা ভিতর থেকে ত্বককে সুস্থ ও সতেজ রাখবে।
কী ভাবে ব্যবহার করবেন?
১) চিয়া বীজ সারা রাত জলে ভিজিয়ে রাখুন। পরের দিন এর সঙ্গে মধু বা দই মিশিয়ে ভাল করে মুখে, হাতে মেখে নিন। ত্বকের যেখানে যেখানে রোদে পোড়া দাগ রয়েছে, সেখানে ভাল করে এই মিশ্রণ লাগান।
২) ভেজানো চিয়া বীজে কলা চটকে নরম করে সেই মিশ্রণও লাগাতে পারেন।
৩) চিয়া বীজের সঙ্গে নারকেল তেল মিশিয়ে খুব ভাল স্ক্রাব তৈরি করা যায়। এই মিশ্রণ লাগালে ত্বকের মৃত কোষ, ধুলোময়লা উঠে যাবে।
৪) অ্যালোভেরায় সমস্যা না থাকলে ভেজানো চিয়া বীজের সঙ্গে অ্যালো ভেরা জেল মিশিয়ে ত্বকে লাগাতে পারেন। এতে ত্বকের জ্বালাপোড়া বা প্রদাহ কমবে।
৫) চোখের নীচের কালি তুলতেও চিয়া বীজ ব্যবহার করা যেতে পারে। এর জন্য ভেজানো চিয়া বীজের সঙ্গে শসার রস মিশিয়ে কিছু ক্ষণ রেখে দিন। তার পর সেই মিশ্রণ তুলোয় করে দু’চোখের নীচে ভাল করে লাগিয়ে রাখুন। অথবা আইপ্যাড থাকলে তাতে সেই মিশ্রণ নিয়ে চোখ ঢেকেও রাখতে পারেন কিছু ক্ষণ। দেখবেন আরাম লাগবে এবং চোখের নীচের কালিও ধীরে ধীরে উঠে যাবে।