পোশাকশিল্পী রুদ্র সাহার স্টাইলিংয়ে অরিজিৎ শিকদার এবং সৌভিক বর্মণ। ছবি: সংগৃহীত।
দুর্গাপুজোর পর বাঙালি নিজেকে উজাড় করে দেয় যে পার্বণে, সে উৎসবের নাম পয়লা বৈশাখ। বাঙালির আবেগের উদ্যাপন। ষোলআনা বাঙালিয়ানার উদ্যাপন। বৈশাখের প্রথম দিনটির আবাহনে চারদিক উৎসবমুখর। আগমনী উৎসব হোক কিংবা বৈশাখী উদ্যাপন, কব্জি ডুবিয়ে ভূরিভোজ ছাড়া বাঙালির সব উৎসবই অসম্পূর্ণ। তেমনই সাজগোজ ছাড়াও উৎসবের কথা ভাবা যায় না। বৈশাখের প্রথম দিনে নিজেকে না সাজালে চলে! পাটভাঙা শাড়ি, কপালে ছোট্ট টিপ, ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক আর খোঁপায় গোঁজা জুঁই— নববর্ষে মেয়েদের সাজগোজের একটা ধারা দীর্ঘ দিন ধরেই চলে আসছে। অনেকেই এই চিরাচরিত নিয়ম মেনেই সেজে ওঠেন। কিন্তু বৈশাখের প্রথম দিবসে ছেলেরা কী ভাবে সাজবেন?
ধুতি পরা এবং সামলানো ঝক্কির বলে মাঝে একটা সময়ে ছেলেদের আলমারিতে ধুতি প্রায় থাকত না বলা যেতে পারে। কলেজপড়ুয়া থেকে মাঝবয়সি— ধুতির সঙ্গে আড়ি করেছিলেন অনেকেই। তবে সেই ছবিটা অনেকটাই বদলে গিয়েছে। দুর্গাপুজোর অষ্টমীতে পাড়ার মণ্ডপে ধুতি-পাঞ্জাবি পরা ছেলের সংখ্যা বেশি থাকে। তেমনই বাঙালির অন্য উৎসব নববর্ষের সাজ হিসাবেও ধুতি-পাঞ্জাবি অনেকের প্রথম পছন্দ। ধুতি নিয়ে আর ছুতমার্গ নেই ছেলেদের। বরং বিশেষ কিছু দিনে ধুতিকেই আপন করে নিচ্ছেন পুরুষরা।
উৎসব বিশেষে আবার সাজগোজের নতুন ‘ট্রেন্ড’ তৈরি হয়। সেই ধারা অনুসরণ করে অনেকেই সাজতে ভালবাসেন। নববর্ষে উপলক্ষেও কি ছেলেদের সাজ নিয়ে তেমন কোনও ‘ট্রেন্ড’ আছে? যে উৎসবের প্রতিটি ছন্দে বাঙালিয়ানার সুর বাজে, সাবেকি সাজগোজই সেই উৎসবের চিরকালীন ধারা বলে মনে করেন পোশাকশিল্পী রুদ্র সাহা। রুদ্রর কথায়, ‘‘নববর্ষের সাজ নিয়ে কোনও পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করাই শ্রেয় বলে আমি মনে করি। বরং ধুতি-পাঞ্জাবির সাজেও একটু বদল আনা যায়। লাল পাড় ধুতির বদলে শুধু সাদা রং বেছে নেওয়া যেতে পারে। আবার প্রিন্টেড পাঞ্জাবির বদলে সুতোর কাজ করা হলে মন্দ হয় না। কিংবা চিকনকারি পাঞ্জাবি পরা যেতে পারে। সঙ্গে একটা সোনার চেন পরে নিলেও ভাল দেখাবে। ফিউশনও হচ্ছে, আবার সাজগোজে বাঙালিয়ানাও বজায় থাকল।’’ শুধু পাঞ্জাবি নয়, ধুতির ক্ষেত্রেও কিন্তু অন্য কিছু ভাবা যেতে পারে। কী রকম? রুদ্র বলেন, ‘‘কোঁচা দেওয়া ধুতির বদলে শাড়ির মতো বড় ধুতি পাওয়া যায়। যেটা পরলে বেশ ভাল দেখায়। সেটাও পরা যেতে পারে।’’
রুদ্র সাহার স্টাইলিংয়ে মেহেরুল খান। ছবি: সংগৃহীত।
পরলে ভাল লাগলেও, ধুতি পরা সহজ নয়। সময় এবং ধৈর্য— দুই-ই ব্যয় হয়। উৎসবের দিনে এত সময় থাকে না। তা হলে উপায়? সমাধান দিলেন শহরের অন্য এক পোশাকশিল্পী সন্দীপ জয়সওয়াল। সন্দীপের কাছে সমাধান তৈরি, ‘‘রেডিমেড ধুতি আছে তো। পরার ঝক্কি নেই। সামলানোও সহজ। তা ছাড়া, মেয়েদের মতো ছেলেরাও সাজ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে ভালবাসেন। এটা ঠিক যে মেয়েদের মতো এত প্রকার পোশাক ছেলেদের নেই। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী বানিয়ে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। আমি নিজে এ বছর রেশমের সুতোর কাজ করা পাঞ্জাবি বানিয়েছি। ধুতির কোঁচাতে সুতোর কাজ করিয়েছি।’’
পোশাকশিল্পী সন্দীপ জয়সওয়ালের নকশা করা পাঞ্জাবি। ছবি: সংগৃহীত।
সাজগোজ নিয়ে ভাবনাচিন্তা করার পাশাপাশি গরমের কথা ভুলে গেলে চলবে না। এ দিকে, সাজের সঙ্গে আপস করা চলবে না। অন্য দিকে, স্বস্তিও চাই। দু’টি একসঙ্গে সম্ভব? রুদ্রর কথায়, ‘‘সম্ভব। যাঁরা গরমে ধুতি-পাঞ্জাবি পরতে চান না, সুতির কুর্তা আর ট্রাউজার্স পরতে পারেন। আর কুর্তাতে যদি কটকির কাজ থাকে, তা হলে আরও ভাল দেখাবে।’’ সন্দীপের ভাবনা আবার খানিকটা আলাদা। তিনি বলেন, ‘‘গরমের সঙ্গে পাঞ্জাবি না পরার কোনও সম্পর্ক নেই। মলমলের পাঞ্জাবি পরা যেতে পারে। অত্যন্ত স্বস্তিদায়ক। তা ছাড়া, এখন যে মানের মলমল পাওয়া যায়, তা সত্যিই ভাল। কলকাতায় গরমে পরলে কোনও অস্বস্তি হবে না।’’