লাল, নীল, গোলাপি, হলুদ... রঙের উৎসবে মেতে উঠতে কার না ভাল লাগে! আর দোল খেলায় খুদের উৎসাহ তো প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে যায়। কিন্তু রং খেলা কতটা স্বাস্থ্যসম্মত, সেটা কি কখনও ভেবে দেখেছেন? রঙে ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থ আপনার ছোট্ট সোনার কোনও ক্ষতি করবে না তো? প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যাচ্ছে। এ বার উত্তর খোঁজার পালা।
দোল খেলার আগে ভাবুন
আপনার সন্তান যে রং নিয়ে খেলছে তা কি আদৌ তার খেলার যোগ্য? শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ড. অপূর্ব ঘোষ জানালেন, ‘‘দোল খেলা খুব একটা হাইজেনিক নয়। রঙে মার্কারি থেকে শুরু করে অনেক ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয়। রং খেলার সময়ে তা মুখে, জিভে তো লেগে যায়ই। ফলে রং পেটে চলে গেলে ইনফেকশন হওয়ার আশঙ্কাও থেকে যায়।’’ পেটের সমস্যা হওয়ার ভয় সবচেয়ে বেশি থাকে। তা হলে কি আবির নিরাপদ?
অনেকেরই ধারণা থাকে যে, আবির জলে গোলা রঙের চেয়ে নিরাপদ। ফলে বাচ্চার হাতে অনেকেই নিশ্চিন্তে আবির তুলে দেন। কিন্তু এতেও বিপদ আছে। হয়তো খেলার ছলেই পাশের বাড়ির খুদেটি আপনার একরত্তির মুখে আবির মাখিয়ে দিল। আপনি হয়তো ভাবছেন আবিরে ক্ষতির আশঙ্কা কম। কিন্তু এই আবিরই আপনার সন্তানের রেসপিরেটরি ট্র্যাক ব্লক করে শ্বাসের সমস্যা তৈরি করতে পারে। ড. অপূর্ব ঘোষ বললেন, ‘‘দোলের আগে পরে দিন দশেক পর্যন্ত সাবধান থাকা উচিত। বিশেষত যে সব বাচ্চার অ্যাজ়মা বা হাঁপানির মতো সমস্যা আছে। তাই যাদের ইনহেলার চলে, তাদের এই সময়টা ইনহেলার কন্টিনিউ করতে বলে থাকি।’’
কী করবেন
বাড়ির খুদেটিকে তো আর আটকাতে পারবেন না রং খেলা থেকে। তাই তার জন্য ব্যবহার করতে পারেন হার্বাল রং। তবে বাজারচলতি হার্বাল রং কেনার আগে তা যাচাই করে নিন। বাড়িতে রং আগে থেকেই বানিয়ে রাখতে পারেন আপনার খুদেটির জন্য। তবে এ রকম যেন না হয় যে, আপনার সন্তান ভেষজ রং ও বাকিরা রাসায়নিক রং নিয়ে দোল খেলছে। তা হলে লাভ কিছুই হবে না। বরং খুদের সঙ্গীরাও যাতে হার্বাল রং নিয়েই দোল খেলে, তা নিশ্চিত করুন আগে।
রং খেলার সময়ে বাচ্চাকে বড় সানগ্লাস, টুপি, মুখের মাস্ক পরাতে পারেন। এতে চোখ, চুল, মুখের অংশ ঢাকা পড়ে যাবে।
রং খেলার পরে কচি কচি হাত, পা, মুখ থেকে তা ঘষে তোলার সমস্যাও অনেক। তাই রং খেলার আগেই সারা শরীরে ও চুলে ভাল করে তেল মাখিয়ে দিন।
রং খেলার সময়ে তাদের পছন্দসই ছোট ছোট গেম খেলতে পারেন। তা হলে রঙের দিক থেকে তাদের মন অন্য দিকে সরে যাবে।
রং খেলার সময়েও অনেক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। বাড়ির ছোট খুদেটি রং গোলার বড় টাবে পড়ে যেতে পারে। বা জল দিয়ে রং খেলা হয় বলে পা পিছলে পড়েও অঘটন ঘটা কিছু অসম্ভব নয়। তাই ছোটরা রং খেললেও তা যেন বড়দের সামনেই হয়, তা সুনিশ্চিত করুন।
খেয়াল রাখবেন আপনার শিশু যেন অন্য কোনও বাচ্চার চোখে, মুখে রং না দেয়। তা আপনাকেই শেখাতে হবে। একই সঙ্গে কুকুর, বেড়ালের গায়েও রং দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে যে, পশুদের লোমে রং লেগে গেলে তা সহজে তোলা যায় না।
দোল খেলার সময়ে বাচ্চাদের সাবধান করে দেবেন রঙের বিষয়ে। তারা যদি নিজেরা সচেতন থাকে, তা হলে বিপদ এড়ানো সহজ হবে।
কোনও ভাবে চোখে রং চলে গেলে বেশি ঘষাঘষি করবেন না। এক বাটি দুধ চোখের সামনে ধরে চোখ খোলা-বন্ধ করবেন। চোখের রং দুধই টেনে বার করে নেবে।
রং তুলবেন কী ভাবে
অহেতুক কড়া সাবান দিয়ে বাচ্চার ত্বক ঘষবেন না।
বেসন ও টক দইয়ের প্যাক বানিয়ে তা মাখিয়ে রাখুন বাচ্চাকে। মিনিট কুড়ি পরে ঘষে তুলে দিন।
ময়দা ও দুধের মিশ্রণ বানিয়ে তাই দিয়েও রং তুলতে পারেন।
ভেষজ রং ব্যবহার করলে এতেই রং উঠে যাবে। আর না উঠলেও এক দিনে সব রং তোলার চেষ্টা করবেন না। বরং স্নানের পরে বেশি করে ময়শ্চারাইজ়ার লাগিয়ে রাখুন। পরের দিন স্নানের সময়ে বাকি রং উঠে যাবে।
আপৎকালীন অবস্থায়
যদি দেখেন খেলা চলাকালীন বা পরে বাচ্চার শ্বাসকষ্ট হচ্ছে, সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। বাড়িতে ইনহেলার দিয়ে তা নিজে থেকে ঠিক করতে যাবেন না। অনেক সময়ে আবিরে অ্যালার্জি থাকলে এই রকম সমস্যা হয়। সে ক্ষেত্রে অক্সিজেন দিতে হতে পারে। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
যে কোনও উৎসবই আনন্দের। তাই আনন্দের পরিবেশ যাতে নষ্ট না হয়, আগে থেকে সাবধান হন।