গর্ভাবস্থায় কিছু খাবারের অভ্যাসকে মেনে চলুন।
গর্ভাবস্থায় খাবার কখনও অভ্যাস মেনে চলে না। পছন্দের খাবারে অনীহা হয় আর অপছন্দের খাবারে আসক্তি। যিনি মিষ্টি খান না, তিনি হয়তো কব্জি ডুবিয়ে মিষ্টি খেতে শুরু করেন। কারও টক খেতে ইচ্ছে করে, কারও নোনতা তো কারও তেতো। হালকা খাবারে অভ্যস্ত মহিলা হঠাৎ তেল–মশলাদার খাবারের ভক্ত হয়ে ওঠেন। কারও কারও ক্ষেত্রে আবার চকখড়ি, মাটি, পেট্রোল খাওয়ার অদ্ভুত আর এ সবের হাত ধরেই খুলে যায় হাজার বিপদের দরজা। যেমন অপুষ্টি, মেদবাহুল্য, জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, অ্যানিমিয়া। বিপদ হয় গর্ভস্থ সন্তানেরও।
কাজেই কোনও খাবারে বেশি আসক্তি হলে চিকিৎসককে তা জানান। এমনিতেও এই সময়টা খাওয়াদাওয়ায় বেশ কিছু বিধিনিষেধ থাকে। তাই মন চাইলেই ইচ্ছা মতো খাওয়া যায় না। কেন এ সব খাওয়ার ইচ্ছে হচ্ছে ও কীভাবে তা সামলাবেন, সেটুকু জানলে বিপদ ঘটার আগেই সচেতন হতে পারবেন।
স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ মার্থা হাজরা হদিশ দিলেন এমন কিছু উপায়ের, যাতে আয়ত্তে থাকবে অসুখ।
আরও পড়ুন: বসন্তে পাতে নেই সজনে! অজান্তেই কী কী ক্ষতি করছেন জানেন?
এই সময় খাওয়াদাওয়ায় বেশ কিছু বিধিনিষেধ মেনে চলতে হয়।
আসক্তির কারণ
গর্ভাবস্থার শুরুতে প্রজেস্টেরন হরমোন বেড়ে গেলে সোডিয়াম ও তরলের ঘাটতি হতে পারে। বাড়তে পারে নোনতা ও ভাজাভুজি খাওয়ার ইচ্ছে। এই ইচ্ছেয় লাগাম না পড়ালে জল জমে হাত–পা ফুলতে পারে, প্রেশার বেড়ে সূত্রপাত হতে পারে প্রি–একলাম্পশিয়ার। মেদবাহুল্য, অপুষ্টি, পেটের গোলমালের আশঙ্কা তো থাকেই। ডার্ক চকলেট আসক্তির মূলে অনেক সময় থাকে জেস্টেশনাল অ্যানিমিয়ার হাত। হরমোনের দৌলতে বাড়ে তেল–মশলাদার খাবার বা আচার খাওয়ার তাগিদ। মাঝেমধ্যে অল্পস্বল্প খেলে ক্ষতি নেই। বাড়াবাড়ি করলে অম্বল–বদহজম হতে পারে। মাছ–মাংস–ডিম খাওয়া ইচ্ছে খুব বেড়ে গেলে দেখতে হয় শরীরে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম ও ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের অভাব হচ্ছে কিনা। চক–মাটি বা পেট্রলের আসক্তির মূলে থাকতে পারে আয়রনের অভাব ও কিছু মানসিক সমস্যা। চিকিৎসা করে এ সব খাওয়া বন্ধ করতে হবে। হট ফ্লাশ, গরম লাগা বা ডিহাইড্রেশনের কারণে বরফ খাওয়ার ইচ্ছে হতে পারে। মিষ্টি–আসক্তির মূলে এনার্জির অভাব, সুগার কমে যাওয়া, মুডের ওঠাপড়া বা অবসাদের হাত থাকতে পারে। যা প্রশ্রয় দিলে মাথাচাড়া দিতে পারে ওবেসিটি ও ডায়াবিটিস।
আরও পড়ুনও: হার্ট অ্যাটাক ঠেকাতে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করুন, মেনে চলুন এ সব উপায়
কী করবেন
মিষ্টির বদলে টাটকা ফলের রস, কিসমিস–অ্যাপ্রিকট– খেতে পারেন এক–আধবার। অল্প করে। ৩–৪ বার টাটকা ফল খান। তাও কিন্তু মাত্রা রেখে। ডায়াবিটিস বা ওবেসিটি না থাকলে মাঝেমধ্যে খাওয়ার পর দু’–এক টুকরো ডার্ক চকলেট খেতে পারেন। খুব ইচ্ছে করলে অল্প আইসক্রিম খেলেও বিরাট ক্ষতি নেই। তেল–ঝালের বদলে লেবু, ধনে, জিরে, গোলমরিচ, তেজপাতা, গরম মশলা দিয়ে রান্না করা খাবার খান। ভাল জায়গার শিঙাড়া, ফুচকা, চপ এক–আধবার খেতে পারেন। তবে চিপস বা ন্যাচোস জাতীয় প্রসেসড ফুড খাবেন না। মাছ–মাংস–ডিম নিশ্চয়ই খাবেন। তবে কম তেলে রান্না করে।