শীত মানেই পার্টি সিজ়ন। করোনাকে সঙ্গী করে প্রায় দশ মাস ঘরে কাটিয়ে দেওয়া মানুষ এখন মরিয়া। ভয় থাকলেও বন্দিদশা কাটিয়ে উৎসবমুখর হতে চাইছে মন। যেহেতু সংক্রমণের হার এখন কমের দিকে এবং ভ্যাকসিনেশন প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার মুখে, তাই খানিকটা হলেও করোনাভীতি কমে গিয়েছে মানুষের মনে। পার্কস্ট্রিট সেজে উঠেছে আলোয়, বড় ক্লাব এবং হোটেলগুলো তাদের বর্ষবরণের প্যাকেজ নিয়ে হাতছানি দিচ্ছে। অতএব শীতের পরশ মেখে পুরনো ছন্দে ফেরার জন্য উদ্গ্রীব আমজনতা।
কিন্তু পার্টির স্রোতে গা ভাসানোর আগে ক’টি জিনিস মাথায় রাখা দরকার। করোনা এখনও পুরোমাত্রায় রয়েছে, তাই অসাবধানতা কোনও ভাবেই নয়। ব্রিটেন, ইটালিতে নতুন করে করোনার সংক্রমণ শুরু হয়েছে এবং এই ‘স্ট্রেন’ আরও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। যে কারণে ইউরোপ এ বার বর্ষবরণের উদ্যাপনে রাশ টানছে। এই রাশ টানাই আসল কথা। এত দিনে আমরা বুঝে গিয়েছি মাস্ক পরা, দূরত্ব বজায় রাখা এবং হাত স্যানিটাইজ় করা— এগুলোই আমাদের করোনার হাত থেকে বাঁচাতে পারে। তাই আনন্দ করুন, কিন্তু নিয়ম মেনে।
চেষ্টা করুন এই তিনটি প্রধান সাবধানতা যতটা সম্ভব মেনে চলতে। বড় জমায়েত এড়িয়ে চলুন। হোটেল বা ক্লাবগুলোও কিন্তু অতিথিসংখ্যা বেঁধে দিয়েছে। টলি ক্লাব, আরসিজিসির মতো ক্লাবে হাজারখানেক অতিথি যেখানে একসঙ্গে থাকতে পারে, এ বার তা কমিয়ে শ’পাঁচেকের গণ্ডিতে রাখা হয়েছে। সব টেবিলের মধ্যে দূরত্বও থাকবে। পার্টি মানেই গান আর জমিয়ে নাচ। তবে দ্বিতীয়টিতে এ বার কোপ পড়ছে। কারণ নাচতে গেলে দূরত্ববিধি মানা সম্ভব নয়। নিয়মিত পার্টি করে থাকেন এবং পার্টি হোস্টও করেন অভিনেতা সাহেব ভট্টাচার্য। তাঁর কথায়, ‘‘প্রতিটি পার্টিতেই এন্ট্রি পয়েন্টে থার্মাল চেকিং জরুরি। তার সঙ্গে হাত স্যানিটাইজ় করা। আমরা বাইরে থেকে আসার সময়ে সকলেই মাস্ক পরে থাকি, কিন্তু পার্টির মধ্যে একবার ঢুকে পরলে সারাক্ষণ মাস্ক পরে থাকাটা হয়তো সম্ভব নয়। কিন্তু যতটা পারা যায় চেষ্টা করতে হবে। তবে হ্যান্ডশেক বা জড়িয়ে ধরাটা এড়িয়ে চললেই ভাল।’’ সাহেব মনে করেন, এই পরিস্থিতিতে মন ভাল রাখতে সাবধানতা মেনে টুকটাক পার্টি করাই যায়। ‘‘সম্প্রতি একটি পার্টি হোস্ট করেছিলাম। অনেক দিন পরে সকলের সঙ্গে দেখা হল। বলতে পারেন প্রাণ ভরে শ্বাস নিলাম,’’ মন্তব্য সাহেবের। তবে বড় জমায়েত এড়িয়ে যেতে বলছেন তিনিও।
তাই পার্টি করতে হলে সেটা ঘরোয়া পরিসরে করতে পারেন। পরিবার ও বন্ধুদের নিয়ে কোথাও একটা লাঞ্চ-ডিনারও প্ল্যান করা যায়। প্রিয়ঙ্কা সরকার বা পার্নো মিত্রর মতো সেলেবরাও বাড়িতে ঘনিষ্ঠ বৃত্তে পার্টি করার পরামর্শ দিচ্ছেন।
ঘরোয়া পার্টিতে কী করবেন?
যদি নিজের বাড়িতে পার্টির আয়োজন করেন, তা হলে কড়া হাতেই সুরক্ষাব্যবস্থা সামলান। বন্ধু বা আত্মীয়দের বাড়িতে ডাকার বিষয়েও রাশ টানতে হবে। একটা বছর না হয় একটু ছোট পরিসরেই উদ্যাপন করলেন।
• স্যানিটাইজ়ার ছাড়াও অতিথিদের হাত ধোয়ার আলাদা ব্যবস্থা রাখুন। তোয়ালের বদলে টিসু পেপার ব্যবহার করুন। তা ফেলার জন্য নির্দিষ্ট পাত্রও রাখুন।
• খাবারের জন্য ডিসপোজ়েবল পাত্র ব্যবহার করুন। এখন মজবুত এবং পরিবেশবান্ধব প্লেট, কাঁটা-চামচ পাওয়া যায় বাজারে। গ্লাসের ক্ষেত্রেও তাই। এতে সংক্রমণের ভয় যেমন কমবে, তেমনই পরিষ্কারের ঝামেলা থাকবে না।
• কেটারার দিয়ে খাবার পরিবেশনের পরিকল্পনা থাকলে দেখবেন, তাঁরা যেন মাস্ক এবং ফেসশিল্ড ব্যবহার করেন।
• বয়স্ক এবং শিশুরা কাছাকাছি থাকলে মাস্ক পরুন। অতিথিদেরও পরতে বলুন।
• বাড়িতে পার্টি করুন কিংবা বাইরে থেকে আসুন, সব মিটে গেলে পোশাক ছেড়ে আলাদা করে রাখবেন। শীতের রাতে স্নান করা সম্ভব না হলেও, গরম জলে হাত-মুখ ভাল করে ধুয়ে নেওয়া উচিত।
অন্য কারও বাড়িতে পার্টি করতে গেলেও একই বিধি মেনে চলবেন। এতে সেই পরিবারের সুরক্ষা যেমন বজায় থাকবে, আপনিও নিরাপদে থাকবেন।
মডেল: সোহিনী গুহ রায়, শ্রেষ্ঠা সুর, ঐশ্বর্য মুখোপাধ্যায়
ছবি: শুভদীপ সামন্ত
মেকআপ: সুবীর মণ্ডল লোকেশন: ক্লাব ইকোহাব, ইকোস্পেস বিজ়নেস পার্ক