শিল্প ছুঁয়ে দেখছে এক পড়ুয়া। নিজস্ব চিত্র।
ওদের দু'চোখে আঁধার। তবে কল্পনাশক্তি প্রখর। অন্তর্দৃষ্টি আর কল্পনার জাল বুনে দু’চোখ ভরা আঁধার নিয়েও অনেকের স্বপ্নপূরণ হয়েছে। ব্রেইল পদ্ধতির মাধ্যমে সুযোগ রয়েছে পড়াশোনারও। কিন্তু এ দেশ শিল্প-সংস্কৃতি সমৃদ্ধ। হোক না দৃষ্টিহীন, তাই বলে শিল্পের কাছাকাছি পৌঁছনোর পথ কি এতই দুর্গম? সেই পথ সুগম করে দেওয়ার লক্ষপূরণেই ‘কলকাতা সেন্টার ফর ক্রিয়েটিভিটি’র উদ্যোগ দৃষ্টিহীনদের জন্য আর্ট লাইব্রেরি। সম্প্রতি দরজা খুলল সেই লাইব্রেরির। ঠিকানা, কলকাতা সেন্টার ফর ক্রিয়েটিভিটি, ৭৭৭ আনন্দপুর, ই এম বাইপাস। লাইব্রেরি উদ্বোধনের দিনই দৃষ্টিহীন এবং মূক-বধিরদের জন্য দাবা প্রতিযোগিতারও আয়োজন করা হয়েছিল।
দৃষ্টিহীনদের কাছে এ এক নতুন দিগন্ত। রং-তুলিতে ধরা মুহূর্ত, চরিত্রের সাক্ষী হওয়ার সুযোগ তাঁদের নেই। তবে ব্রেইল আর্ট শিল্পকর্মের কাছে পৌঁছে দেবে তাঁদের। এই লাইব্রেরি সাজানো হয়েছে বিভিন্ন শিল্পীর ব্রেইল আর্টের বই দিয়ে। চোখের আলোয় না হলেও, হাতের আঙুল দিয়ে দিয়ে ছুঁয়ে, বুঝে, কল্পনা করে এক নতুন অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হতে পারবে তারা। উদ্বোধনের দিন বিভিন্ন স্কুলের কয়েক জন দৃষ্টিহীন পড়ুয়া উপস্থিত ছিল। ছবির বইয়ের পাতায় হাত বুলিয়ে তাদের চোখেমুখে যে আলো ফুটে উঠতে দেখা গিয়েছে, সেই মুহূর্তের সঙ্গে কোনও কিছুর তুলনা হয় না। বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়, এসজি বাসুদেব-সহ আরও অনেক চিত্রশিল্পীর ব্রেইল আর্টের বই থাকছে এখানে। আগামী দিনে এই তালিকায় আরও অনেক নতুন বই সংযোজন হবে।
ছবির বইয়ের পাতা উল্টে দেখছে এক খুদে পড়ুয়া। নিজস্ব চিত্র।
শিল্পের সঙ্গে দৃষ্টিহীনদের পরিচয় করানোর এই প্রয়াস এর আগে তেমন দেখা যায়নি। তাই অনেকেই বিষয়টিকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। এমন ভাবনার উৎস কী? কেসিসি-এর চেয়ারপার্সন রিচা আগরওয়াল বলেন, ‘‘দৃষ্টিহীনদের জন্য পড়াশোনার নানা সুযোগ রয়েছে। কিন্তু শিল্প এবং সংস্কৃতির অভিজ্ঞতা থেকে বঞ্চিত থাকছে। পড়াশোনার পাশাপাশি দেশের শিল্প এবং তার ঐতিহ্যের সঙ্গে আলাপ করাতেই এই ব্রেইল আর্ট লাইব্রেরি তৈরি করা। বাইরের বই যেমন রয়েছে, তেমনি কেসিসি থেকে ব্রেইল আর্টের বই মুদ্রিত হয়েছে।’’