—প্রতীকী ছবি।
দেশের অন্যান্য প্রান্তের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গেও অ্যাসিড-হামলার ঘটনা বাড়ছে। অ্যাসিড-হানার শিকার হলে বা অন্য কোনও ভাবে গায়ে অ্যাসিড পড়লে কী করবেন? শরীরের যেখানে অ্যাসিড লাগবে, সেখানে অনবরত জল দিয়ে যান। এই মর্মেই টেলিভিশন ও রেডিয়োয় বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে সচেতনতার প্রচার শুরু করল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক।
বিজ্ঞাপনে বলা হচ্ছে: অ্যাসিড-আক্রান্তকে নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছনোর আগে পর্যন্ত ক্ষতস্থানে জল ছাড়া যেন আর কিছুই দেওয়া না-হয়। তাতে চিকিৎসকদের আক্রান্তকে চিকিৎসা করতে সুবিধা হবে। শুধু তা-ই নয়, এই পদ্ধতিতে ক্ষতও অনেকটা কমানো যায়। অ্যাসিড হামলা বেড়ে চলায় বিভিন্ন থানা এলাকায় স্থানীয় ভাবে অ্যাসিড বিক্রির উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে বলে প্রচার চালানো হচ্ছিল। কিন্তু অ্যাসিডে আক্রান্ত হলে কী করণীয়, সেই বিষয়ে এত দিন কোনও প্রচারের ব্যবস্থা হয়নি। সচেতনতা বাড়াতে কেন্দ্রীয় সরকার এ বার বিভিন্ন মাধ্যমে বিজ্ঞাপনী প্রচার শুরু করেছে।
কেন্দ্রীয় প্রচারকে স্বাগত জানাচ্ছে অ্যাসিড-আক্রান্তদের নিয়ে কর্মরত বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। তাদের বক্তব্য, অ্যাসিড লাগলে হাসপাতালে পৌঁছনোর আগে পর্যন্ত কী করা উচিত, অনেকেই তা জানেন না। অ্যাসিড-ক্ষতে জল লাগলে ক্ষতি হবে, এমন ভ্রান্ত ধারণাও আছে কোথাও কোথাও। অনেকে আবার জল দিয়ে ক্ষতস্থান একটু ধুয়েই স্থানীয় ওষুধের দোকান থেকে লোশন এনে লাগান। কেউ কেউ তার উপরে চাদর জড়িয়ে দেন। এতে ফল হয় উল্টো।
প্লাস্টিক সার্জেন অরিন্দম সরকার বলেন, ‘‘অ্যাসিডের ক্ষত নির্ভর করে অ্যাসিডটা কত জোরালো, তার উপরে। তবে শুরু থেকে জল ঢেলে যেতে পারলে অ্যাসিড অনেকটাই ধুয়ে যায়।’’ একই বক্তব্য বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার। বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে এই সচেতনতা প্রসারের পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে জাতীয় স্তরের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে দিব্যলোক রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের পাশাপাশি রাজ্য সরকারও যদি এই ধরনের বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে স্থানীয় ভাষায় প্রচার করে, প্রত্যন্ত এলাকার লোকজনের সুবিধা হয়। তাঁদের কাছে বার্তা পৌঁছয়।’’
জল ঢাললে অ্যাসিডের ক্ষত যে কমে, নিজের অভিজ্ঞতা থেকে তা জানিয়েছেন অ্যাসিড-আক্রান্ত এক তরুণী। পূর্ব মেদিনীপুরের দাসপুরের বাসিন্দা ওই তরুণী ২০১৫ সালে অ্যাসিড-হানার শিকার হন। রাতের অন্ধকারে ঘুমন্ত অবস্থায় মুখ এবং শরীরে অন্যত্র অ্যাসিড পড়তেই জ্বালা সহ্য করতে না-পেরে বাড়ির পাশের পুকুরে ঝাঁপ মেরেছিল ওই তরুণী। অনেক ক্ষণ জলে ডুবে থাকার পরে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন পরিবারের লোকজন।
হাসপাতালের চিকিৎসক পরে ওই তরুণীকে জানিয়েছিলেন, পুকুরে ঝাঁপ দেওয়ায় তাঁর অ্যাসিড অনেকটাই ধুয়ে গিয়েছিল। তাতে পরবর্তী কালে তাঁর চিকিৎসায় সুবিধা হয়। ‘‘আমি জানতাম না যে, জল ঢালতে হয়। আসলে যন্ত্রণা সহ্য করতে না-পেরে পুকুরে ঝাঁপ মেরেছিলাম। পরে হাসপাতালে জানতে পারি, কাজটা ভালই করেছিলাম,’’ বললেন ওই তরুণী। তিনি মনে করেন, কেন্দ্রীয় সরকারের বিজ্ঞাপনী প্রচারের ফলে অ্যাসিড সম্পর্কে সচেতনতা বাড়বে।