বন্ধুত্ব নিয়ে আড্ডায় অনুত্তমা এবং সৌরেন্দ্র-সৌম্যজিৎ। ছবি: সংগৃহীত।
গত সপ্তাহ থেকেই ‘লোকে কী বলবে’-র বিশেষ পর্বে চলছে বন্ধুত্বের উদ্যাপন। জীবনের জটিলতর সমস্যার জট খুলতে নয়, মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায় কথা বলেছেন বন্ধুত্বের সমীকরণ নিয়ে। তবে তিনি একা নন, আগের পর্বের মতো এ সপ্তাহেও এই আড্ডায় সামিল হয়েছেন সঙ্গীতশিল্পী সৌরেন্দ্র মল্লিক ও সৌম্যজিৎ দাস। দু’জনেই ভাল বন্ধু। বহু বছর ধরে একসঙ্গে কাজ করছেন। দু’জনের নামও উচ্চারিত হয় একসঙ্গে। দু’জনেই নিজেদের বন্ধুত্বের সম্পর্ক নিয়ে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী। তবে সম্পর্কে যে কখনও চড়াই-উতরাই আসেনি, তা নয়। কী ভাবে তা সামাল দিয়েছেন, ফেলে আসা পর্বে দু’জনেই তা জানিয়েছেন। এ সপ্তাহের পর্ব শুরু হয় অনুত্তমার প্রশ্ন দিয়ে।
দু’জন মানুষের কাছে তাঁদের বন্ধুত্বের সংজ্ঞা যা, সমাজের ভাবনার সঙ্গে তা অনেক সময় মেলে না। বন্ধুত্ব খুব গভীর হলে অনেক সময় তাকে প্রেম হিসাবে ধরে নেওয়া হয়েছে। অনেকেরই মনে হয়েছে, বন্ধুত্বের মোড়কে বোধ হয় প্রেমের সম্পর্ককে আড়াল করা হচ্ছে। কিংবা হয়তো বিষয়টি শুধুই বন্ধুত্বে আটকে নেই।
এই ধরনের মন্তব্য কি সৌরেন্দ্র আর সৌম্যজিতের কানেও এসেছে? অনুত্তমা প্রশ্ন রাখেন দু’জনের কাছে। সৌম্যজিৎ বলেন, ‘‘আমরা যখন একসঙ্গে কাজ শুরু করেছিলাম, তখন এই ধরনের মন্তব্য উড়ে আসত। বিরক্ত হতাম। তবে ইদানীং আর এসব শুনতে হয় না। আমি জানি, বাজার থেকে এ সবের বীজ একেবারে নির্মূল হয়ে যায়নি। তবে আমার ক্ষেত্রে একটা মন্ত্র খুব কার্যকরী। যত বারই আমি এবং সমাজ মুখোমুখি হয়েছি, নিজেকেই বেছে নিয়েছি।’’
সৌম্যজিতের কথার রেশ ধরে সৌরেন্দ্র বলে ওঠেন, ‘‘আমাদের একটা গন্তব্য এবং আত্মবিশ্বাস আছে। আমরা জানতাম, সেই গন্তব্যে পৌঁছতে অনেক বাধা পেরোতে হবে। তৈরি ছিলাম সেই জন্য। তবে বিলাবলের ১২টি সুর আর ভৈরবীর ৭টি নোট, ওগুলিই আমাদের সব। আমাদের শক্তি। জানতাম যে, সুরের পথ ধরে আমরা যত এগোব, আগাছারা আমাদের বাধা দিতে শুরু করবে। কিন্তু আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। সেটাই আমাদের শপথ। এই বন্ধুত্ব যদি কেউ অন্য ভাবে দেখে থাকে, তার নেপথ্যের একটাই কারণ হল আমাদের সাফল্য।’’
সৌরেন্দ্র আর সৌম্যজিতের সম্পর্ক নিয়ে কৌতূহলের শেষ নেই অনেকেরই। কারও মনে হয়েছে, আসলে বিষয়টা সমপ্রেম। এ বিষয়ে সৌম্যজিৎ বলেন, ‘‘যখনই চেনা ছকের বাইরে গিয়ে কিছু হয়, সেটাকে অনেক সময় কুৎসার মধ্যে দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। আসলে বন্ধুত্ব এমন একটা সম্পর্ক, যা আমাদেরকে অধিকার দেয় যে কোনও মুহূর্তে ছেড়ে বেরিয়ে আসার। আর সেই জন্য এই সম্পর্ক আমাদের এত টানে। শুধু মাত্র বন্ধুত্ব আছে বলেই এই ২১টি বছর আমরা পারলাম। ভাই, সমপ্রেম কিংবা দাম্পত্যের সম্পর্ক থাকলে হয়তো সমস্যায় পড়তাম।’’