প্রতীকী ছবি।
উন্নয়নের চাপে পথের দু’ধার থেকে উধাও হচ্ছে সবুজ। বাড়ছে গাড়ির সংখ্যা, সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বায়ুদূষণ। এই আবহে শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত শিশু-কিশোরের সংখ্যা বৃদ্ধিও উদ্বেগজনক জায়গায় পৌঁছেছে বলে মত শিশুরোগ চিকিৎসকদের।
শহরের ফুসফুস রক্ষায় এখনই দ্রুত পদক্ষেপ করা না হলে কলকাতার শৈশব বিপন্ন হবে! এমনই অশনি সঙ্কেত দিল শিশুরোগ চিকিৎসকদের সংগঠন। ‘চাইল্ডহুড অ্যাজ়মা অ্যাওয়েরনেস ইনিশিয়েটিভ’ এবং ‘ইন্ডিয়ান চেস্ট সোসাইটি’র সহযোগিতায় রবিবার সল্টলেকে ‘কলকাতা মেট্রোপলিস অ্যাকাডেমি অব পেডিয়াট্রিক্স’-এর বার্ষিক সম্মেলনে শোনা গেল এ কথা।
চিকিৎসক সুব্রত চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এখন যে বাচ্চাদের চিকিৎসা করি, তাদের অন্তত পঞ্চাশ শতাংশ শ্বাসকষ্টে ভুগছে। ভিটামিড ডি-র অভাব, এমনকি অ্যালার্জিতেও ভুগছে ছোটরা। এর বড় কারণ বাতাসের দূষণ।’’ সম্মেলনের অর্গানাইজিং কমিটির সম্পাদক চিকিৎসক অর্ণব হালদার বলেন, ‘‘জিনগত কারণে শিশুরা হাঁপানি, শ্বাসকষ্টজনিত রোগের শিকার হলে সে ক্ষেত্রে কিছু করার থাকে না। কিন্তু পরিবেশের কারণে শ্বাসকষ্ট হলে তা নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে!’’ সেই পথ খুঁজতেই এ দিনের আলোচনা।
সচেতনতার চার ধাপ
• শিশুদের ধুলো থেকে দূরে রাখুন
• দূষণ বেশি এমন এলাকায় বিশেষ মুখোশ পরান
• কোন খাবারে সন্তানের এলার্জি, খেয়াল করুন
• স্যাঁতসেঁতে জায়গা এড়িয়ে চলুন
চিকিৎসকদের মতে, সেপ্টেম্বর-নভেম্বরে শহরে শ্বাসকষ্টের সমস্যা বেশি দেখা দেয়। উৎসবের মরসুমের বিভিন্ন উপাদানই তার কারণ। চিকিৎসক অতনু ভদ্র জানান, গত বছর নভেম্বরে কলকাতার বাতাসে বায়ুর গুণমান সূচক (এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স) দিল্লির থেকেও খারাপ ছিল। এ বছর যদি একই হাল হয়, তা হলে উদ্বেগের মাত্রা আরও বাড়বে। এর কারণ ব্যাখ্যায় পুণের বাসিন্দা ইন্ডিয়ান অ্যাকাডেমিক অব পেডিয়াট্রিক্সের সদস্য চিকিৎসক বর্ণালী ভট্টাচার্যের বক্তব্য, উৎসবে জনসমাগমের কারণে বাতাসে ধূলিকণার পরিমাণ বেশি থাকে। তা ছাড়া ধূপ, ধুনুচি, ফুল, এ সবও শ্বাসকষ্টের ক্ষেত্রে অনুঘটকের কাজ করে। বর্ণালীর কথায়, ‘‘উৎসব মানে আবেগ, উত্তেজনা। ঘটনা হল, আবেগ-উত্তেজনাও শরীরে ঘুমিয়ে থাকা শ্বাসকষ্টকে জাগিয়ে তুলতে পারে!’’
শুধু কী তাই! শহরে এখন অনেক ইংরেজি মাধ্যম স্কুলই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। সম্মেলনে উপস্থিত শিশুরোগ চিকিৎসকদের দাবি, শীতাতপ যন্ত্রের ফিল্টার ঠিক মতো পরিষ্কার না হলে পড়ুয়াদের শ্বাসকষ্টের বড় কারণ হতে পারে সেটি। সুব্রতবাবুর মতে, ‘‘সবাই সচেতন না হলে এই পরিস্থিতির মোকাবিলা সম্ভব নয়। চিকিৎসক হিসেবে অভিভাবকদের সচেতন করব আমরা। বিভিন্ন স্কুলেও সচেতনতার প্রচার চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে।’’