Afghanistan

Afghan Refugees: আর কি বাবা-মাকে দেখতে পাব? আফগান উদ্বাস্তুদের দীর্ঘশ্বাসে ভারী হচ্ছে দিল্লির বাতাস

ক’দিন ধরেই চিন্তায় রাতের ঘুম উড়েছে ভারতে বসবাসকারী আফগানদের। আর কি কখনও দেখা হবে বাবা-মা-ভাই-বোনের সঙ্গে!

Advertisement

সুচন্দ্রা ঘটক

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০২১ ১৫:২৬
Share:

আত্মীয়-বন্ধুদের ফোন করে খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করছেন ভারতে বসবাসকারী আফগান শরণার্থীরা। কিন্তু গত চার দিনে ফোন পাননি অধিকাংশেই।

গত চার দিনে এক বারও ফোন লাগেনি। বাবা-মায়ের সঙ্গে এক বার কথা বলার জন্য আকুল নাসির খান। কাবুলের কাছে ছোট্ট গ্রাম করেগাবে বাড়ি। কয়েক বছর আগে দেশ ছেড়েছেন। সেই থেকে এক বারও বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাননি। দিনের শেষে এক বার ফোনে গলাটা শুনতেন। পরিবারের সঙ্গে সে ভাবেই যোগাযোগ রাখা। তালিবানরা কি সেটুকুও কেড়ে নেবে? কলকাতা থেকে যাওয়া ফোনে সেই প্রশ্ন করতেও গলা কাঁপে নাসিরের। তালিবান জমানায় আফগানিস্তানেই কেটেছে তাঁর ছেলেবেলা। সেই সময়টাই আবার বুঝি ফিরে এল নাসিরের জীবনে!

Advertisement

ক’দিন ধরেই চিন্তায় রাতের ঘুম উড়েছে ভারতে বসবাসকারী আফগানদের। ‘‘কিন্তু ন’দিনে এমন ঘটে যাবে, তা ভাবতেও পারিনি আমরা,’’ বুধবার বলছিলেন নাসির। দিল্লির লাজপতগনরের বাসিন্দা নাসিরদের মতো আরও হাজার পাঁচেক আফগান শরণার্থী পরিবার রয়েছে এ দেশে। কেউ থাকেন পুণেতে, কেউ হায়দরাবাদে। দুশ্চিন্তায় তাঁরা সকলে মিলে গিয়েছেন—আর কি কখনও দেখা হবে বাবা-মা-ভাই-বোনের সঙ্গে! ভারতে আফগান শরণার্থীদের সংগঠনের চেয়ারম্যান আহমেদ জিয়া গনির কথায়, ‘‘সারাদিন এখন ফোনে আমাদের একটাই কথা— কেউ যদি পরিবারের খোঁজ এনে দিতে পারেন।’’ তবে পরিবারের খোঁজ পেলেই চিন্তা শেষ হবে না। পরের চিন্তা হল, তাঁদের কোনও ভাবে আফগানিস্তান থেকে বার করে আনা। কিন্তু এখন সাহায্য করবে কে? বিভিন্ন আর্ন্তজাতিক সংগঠন একই উত্তর দিচ্ছে। আপাতত কারও কিছু করার নেই। শরণার্থীদের সংগঠনের তরফে এখন ভারত সরকারের সাহায্য চাওয়ার চেষ্টা চলছে।

সপরিবার নাসির খান।

গোটা আফগানিস্তানেই প্রায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ। মাঝেমাঝে ফেসবুক, হোয়াটস্‌অ্যাপ চালু হলেই সেখান থেকে বন্ধুরা পাঠাচ্ছেন তালিবানের অত্যাচারের ভিডিয়ো। আফগানিস্তানের অন্যান্য অঞ্চলে ফোন না গেলেও কাবুল শহরে এখনও যোগাযোগ করা যাচ্ছে। ভারত থেকে সেখানকার আত্মীয়-বন্ধুদের বারবার ফোন করে চলছে খোঁজ। তবে অধিকাংশের একই জবাব। গনি বলেন, ‘‘সকলে আতঙ্কে রয়েছেন। নিজের পরিবারেরই ঠিক নেই। অন্য কারও খোঁজ আনতে বাড়ি থেকে বেরোবেন কী ভাবে? তবু আমরাও তো অসহায়! তাই বারবার ফোন করছি। যদি কেউ কোনও খবর দিতে পারেন।’’ কাবুলে ফোন করে পরিজনদের খবর না পেলেও কানে আসছে বিভিন্ন এলাকার পরিস্থিতির কথা। ব্যাঙ্কে টাকা নেই। বাড়িতে বিদ্যুৎ নেই। ঘরে ঘরে হেঁশেলে যতটুকু খাবার মজুত ছিল, সব কমতে শুরু করেছে। বাজার-দোকান খুলছে না। তালিবানের গুলির ভয় যেমন আছে, তেমনই আতঙ্ক অনাহারের। খেতে না পেয়েই কি তবে প্রাণ যাবে প্রিয়জনদের? চিন্তায় ছটফট করছেন আফগান শরণার্থীরা।

Advertisement

তালিবানের শাসন কেমন জানা আছে নাসির আর গনির। ছোটবেলায় তালিবানি অত্যাচারের অভিজ্ঞতা আছে। এলাকার তালিবানরা এক বার তুলে নিয়ে গিয়েছিল নাসিরকে। স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে, অনেক টাকা মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়িয়ে এনেছিলেন বাবা। তার পরেই ঠিক করেন দেশ ছাড়বেন। নাসির বলেন, ‘‘মারধর তো কোনও ব্যাপারই না। ওদের কথা না শুনলে হাত-পা কেটে দিতেও পিছপা হয় না তালিবানরা।’’ গনির অভিজ্ঞতাও বিশেষ আলাদা নয়। তাঁর ছেলেকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল তালিবানরা। বাঁচাতে পারেননি নিজের সন্তানকে। ওঁরা জানান, আগে যখন তালিবানের শাসনে ছিল দেশ, তখন সাধারণের উপরে নানা ভাবে চলত অত্যাচার। বাজারে যাওয়ার সময়ে পুরুষদের মাথাও পুরোপুরি ঢাকা না থাকলে শাস্তি দেওয়া হত। মেয়েদের তো কথাই নেই! লেখাপড়া দূরের কথা, সামান্য চিকিৎসাও জুটত না। কোনও স্ত্রীরোগ চিকিৎসক ছিলেন না। আবারও কি তেমনই সময় এল? নাসির বলেন, ‘‘এখন তালিবানেরা সবে এসেছে। তাই বন্ধুত্বপূর্ণ বার্তা দিচ্ছে। কিন্তু আমরা ওদের চিনি। আর ক’দিন যাক। ওদের আসল রূপ বেরোবে। পরিবারের মহিলাদের জন্য চিন্তা হচ্ছে।’’

হাজার পাঁচেক আফগান শরণার্থী পরিবার রয়েছে এ দেশে। কেউ থাকেন পুণেতে, কেউ হায়দরাবাদে।

গত কয়েক বছরে বড় শহরগুলির চিত্র কিছুটা বদলেছিল। চিকিৎসা ব্যবস্থা, শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি ঘটছিল। বহু মহিলা বাইরে কাজ করতে বেরোচ্ছিলেন। তবে গ্রামাঞ্চলে তালিবানদের চোখ রাঙানির খেয়াল রেখে চলতে হতই। তাই বাধ্য হয়ে দেশ ছেড়েছিলেন ওঁরা। আবার তালিবানের হাতে ধরা পড়তে চাননি। আশা ছিল ধীরে ধীরে সময় বদলাবে। গনি বলেন, ‘‘এখন মনে হচ্ছে, আমাদের দেশ এক বারে আবার অনেকগুলো বছর পিছিয়ে যাবে।’’ করোনাকালে লকডাউনের সময়ে নাসিরের চাকরি চলে গিয়েছিল। বাড়িতে স্ত্রী ও চার সন্তান। সংসার চালানোর জন্য শুরু করেন নতুন ব্যবসা। আফগানিস্তান থেকে কাঠবাদাম, আখরোট এনে দিল্লির নানা প্রান্তে বিক্রি করছিলেন। এখন চিন্তা সে ব্যবসা নিয়েও। নাসিরের গলায় ঝরে পড়ে দীর্ঘশ্বাস, ‘‘বন্ধুরা কাবুল থেকে জিনিসপত্র পাঠাত। আমি সেগুলো এখানে বিক্রি করে আবার টাকা দিতাম। এ বার তো নিজের ব্যবসা নিয়েও চিন্তায় পড়ে গেলাম। ও দেশের সঙ্গে বুঝি আর কোনও রকম সম্পর্কই রাখা যাবে না! যেখানেই যাই, এই তালিবানরা আমাদের শান্তি দেবে না!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement