Aerobics

এরোবিক্সে আরোগ্য

শরীর সুস্থ রাখতে আলস্য ঝেড়ে শুরু করতে পারেন এরোবিক্স। প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের জোগান দিয়ে শরীর ও মন ভাল রাখতে এর জুড়ি নেইপ্রয়োজনীয় অক্সিজেনের জোগান দিয়ে শরীর ও মন ভাল রাখতে এর জুড়ি নেই

Advertisement

সুবর্ণ বসু    

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০২০ ০৬:৩৮
Share:

এরোবিক্স কথাটার মধ্যে লুকিয়ে আছে ‘এয়ার’ শব্দটি। এয়ার মানে এখানে অক্সিজেন। শরীরে যে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার যাচ্ছে, তাকে ঠিক মতো দহন করতে বেশি অক্সিজেনের জোগান দেওয়াই এরোবিক্সের মূল কথা। অক্সিজেন মানেই সুস্থতা, রোগমুক্তি এবং প্রতিরোধ ক্ষমতা। এরোবিক্স শারীরচর্চার অন্য নাম কার্ডিয়ো-ভাস্কিউলার এক্সারসাইজ়। এর মধ্যে পড়ছে হাঁটা, দৌড়নো, সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানো, গানের তালে তালে নাচের মতো স্টেপ্‌স। এতেই লুকিয়ে রয়েছে আপনার সুস্থ সুন্দর দীর্ঘ জীবনের চাবিকাঠি।

Advertisement

এরোবিক্স খুব বন্ধুভাবাপন্ন এক্সারসাইজ়। যতটুকু পারেন, যে ভাবে পারেন, সে ভাবেই আপনার উপকার। যদি ব্যায়ামের অভ্যেস না থাকে এবং শুরু করতে চান এরোবিক্স, তা হলে তা আরম্ভ হোক সকাল-সন্ধেয় মাত্র পাঁচ মিনিট করে হাঁটা দিয়ে। সপ্তাহখানেক ওটুকুই, তার পর সহ্য ক্ষমতা অনুযায়ী কয়েক মিনিট করে বাড়িয়ে যেতে হবে। যদি আর্থ্রাইটিসের কষ্ট থাকে, হাঁটা বা দৌড়নোয় অসুবিধে হয়, তা হলে অ্যাকোয়াটিক এরোবিক্সের সাহায্য নিতে পারেন। তাতে কষ্ট কম, উপকারও পাবেন। সতেজ হবে মাংসপেশি, সেরে যাবে ব্যথাবেদনা।

১৯২২ সালে ব্রিটিশ ফিজ়িয়োলজিস্ট আর্চিবল্ড হিল এবং জার্মান ফিজ়িশিয়ান অটো মেয়ারহফ শরীরে সবচেয়ে বেশি অক্সিজেন গ্রহণ এবং অক্সিজেনের ঘাটতি নিয়ে গবেষণা করে নোবেল পেয়েছিলেন। সেখান থেকেই উঠে এসেছে এরোবিক্সের ধারণা। কিন্তু ‘এরোবিক্স’ নামটি এসেছে ষাটের দশকের শেষের দিকে। মার্কিন বায়ুসেনার ফিজ়িক্যাল থেরাপিস্ট কর্নেল পলিন পট্‌স এবং ডক্টর কেনেথ কুপার হাজার পাঁচেক কর্মীর উপরে এরোবিক্সের পরীক্ষা নিরীক্ষা করিয়ে সিদ্ধান্তে আসেন যে, এরোবিক্স মানুষের শরীরকে সুস্থ রাখে, তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়িয়ে দেয়। ১৯৬৮ সালে এই বিষয়ে ‘এরোবিক্স’ নামে বই লেখেন কুপার। কুপারকেই বলা হয় এরোবিক্সের জনক।

Advertisement

আজকের গতিশীল জীবনে বেশি চিন্তা হৃদ্‌যন্ত্রের রোগবালাই, সঙ্গে ডায়াবিটিস। স্ট্রেস, টেনশন, উদ্বেগ, উত্তেজনা থেকেই রক্তচাপের গোলমাল। অনিয়মিত অস্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়া থেকে বাড়ে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল। এরোবিক্স রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখে, ধমনীর মধ্য দিয়ে রক্তস্রোতের চলাচল ঠিক রাখে। রক্তে ভাল কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়ায়, ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমায়। শরীরে ইনসুলিনের স্বাভাবিক ক্ষরণ বজায় রেখে রক্তে চিনির পরিমাণ স্বাভাবিক রাখে। তা ছাড়াও, এরোবিক্স রক্তে অক্সিজেন সরবরাহ বাড়ায়। ফলে ফুসফুসের কর্মক্ষমতা বাড়ে। যাঁদের হাঁপানির সমস্যা, তাদের হাঁপের টান কমিয়ে আনে এরোবিক্স।

ফুসফুস পূর্ণমাত্রায় কর্মক্ষম থাকলে ভাইরাল সংক্রমণে সর্দি-কাশির মতো রোগ কমবে। প্রেশার-ব্লাড সুগার থাকলে করোনা সহজে তার শিকার পায়, এটা এখন আমাদের জানা। সুতরাং রক্তচাপ, রক্তশর্করা এবং ফুসফুস— এই তিনটি জিনিসকে অনুকূল রেখে করোনা প্রতিরোধেও এরোবিক্স কার্যকর। পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, এই শারীরচর্চা রক্তে অ্যান্টিবডির পরিমাণ বাড়িয়ে স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা জোরদার করে।

কলকাতার এক নামী জিমের কর্ণধার সৌমেন দাস জানালেন, ‘‘এখন অধিকাংশ জিমই বন্ধ। সুতরাং এরোবিক্স অপরিহার্য। কেউ যদি জিমের মেশিনারি ছাড়াই নিজে থেকে ওয়াকিং, জগিং, সঙ্গে শরীরের উপরের অংশের জন্য পুশ আপ, ডন, নীচের অংশের জন্য স্কোয়াট, কিছু ব্রিদিং এক্সারসাইজ় করতে পারেন, তাঁর ইমিউনিটি অনেকটাই স্ট্রং হয়ে উঠবে। সঙ্গে প্রয়োজন অনুযায়ী কিছু যোগব্যায়াম। তবে এরোবিক্স সব সময়ে কোনও অভিজ্ঞ প্রশিক্ষকের পরামর্শ নিয়ে করা জরুরি। বয়স, ক্ষমতা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী কে কতটা কী করবেন, সেটা ঠিকমতো নির্ধারণ করে দেওয়া হলেই উপকার হবে।’’

এখন অধিকাংশ মানুষই সারা দিন বাড়িতে বন্দি। ফলে একঘেয়েমি, মনখারাপ, বাড়ির লোকের সঙ্গে টুকটাক ঝামেলা এবং সেখান থেকে ডিপ্রেশন। যাতায়াত নেই, ফলে ক্লান্তি কম এবং নির্ঘুম দীর্ঘ রাত। এই সব সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে এরোবিক্স। এমনকি তা মনকেও তরতাজা রাখে। শারীরিক পরিশ্রমে ঘুমও ভাল হয়। ঘুম ভাল করে হলে মনের অনেক সমস্যা দূর হয়।

এ বার হয়তো মনে হতে পারে যে, তা হলে কি রোগ প্রতিরোধ করতেই এরোবিক্স? মানে তিরিশ পেরোলে তার পর? কমবয়সিদের এরোবিক্স প্রয়োজন নেই? উত্তরে বলা যেতে পারে, সব বয়সেই সুস্থ থাকাটা জরুরি। উপরন্তু এরোবিক্সে মস্তিষ্কের সক্রিয়তা বাড়ে, ফলে ছাত্রছাত্রীদের জন্যও এরোবিক্স উপকারী। স্মৃতিশক্তি ভাল রাখতেও সাহায্য করে এই এক্সারসাইজ়।

এরোবিক্সের উপকারিতা অনেক, কিন্তু বর্তমানে সব সময়ে কোচ বা ইনস্ট্রাক্টরের পরামর্শ নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাই মেনে চলতে হবে কিছু সতর্কতাও। ফিটনেস কোচ চিন্ময় রায় জানিয়েছেন, ‘‘এরোবিক্সে নাচ বা বাজনার তালে তালে কিছু মুভমেন্টস থাকে, মাঝে মাঝে থাকে জাম্পও। সেটা কার্পেটের উপরে না করলে মুশকিল। প্রথমত শক্ত মেঝেয় করলে গোড়ালি, হাঁটুতে ব্যথা হতে পারে। দেহের ওজন বেশি হলে চোটের আশঙ্কা আরও বেশি। দ্বিতীয়ত, ডায়াবেটিক রোগীরা কতক্ষণ করবেন সেটা খেয়াল রাখা উচিত। বেশিক্ষণ ধরে হাই ইনটেনসিটি বা হাই ইমপ্যাক্টের মুভমেন্ট করলে ব্লাড সুগার আচমকা ফল করে, শরীর অসুস্থ হয়ে পড়ে। স্টেপ এরোবিক্স ধরনের হাই ইমপ্যাক্ট মুভমেন্টের ফলে শুরুতে গায়ে হাতে ব্যথা হয় খুব বেশি। এক দিন করার পর চার দিন নড়াচড়া করার উপায় থাকে না, অনেকে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন। সুতরাং শরীর কতটা নিতে পারছে, সেটা সতর্ক হয়ে বুঝে তবেই করা উচিত।’’

সুতরাং, আর দেরি নয়, আলস্য, জড়তা আনলক করে শুরু করে দিন এরোবিক্সের এ বি সি ডি...

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement