ফাইল ছবি
করোনায় আক্রান্ত হয়ে যত জনের মৃত্যু হচ্ছে, তার থেকেও বেশি মানুষ মারা যাচ্ছেন কোভিড-পরবর্তী সময়ে। সংক্রমণের জেরে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ক্ষতি হয়ে সেই মৃত্যু অবশ্য নথিভুক্ত হচ্ছে না। তা সাধারণ মৃত্যু হিসেবেই গণ্য হচ্ছে। যদিও কোভিড-পরবর্তী সমস্যা নিয়ন্ত্রণে কী ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন, সে বিষয়ে পরামর্শ-নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে স্বাস্থ্য ভবন। কিন্তু সরকারি পোস্ট-কোভিড ক্লিনিক রয়েছে মাত্র একটি!
রাজ্যে অতিমারির আগের ঢেউগুলির সময়ে শহরের তিনটি হাসপাতালে ওই ক্লিনিক চালু করেছিল স্বাস্থ্য দফতর। বেলেঘাটা আইডি, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ এবং এম আর বাঙুর হাসপাতালে সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে চলত ‘পোস্ট-কোভিড ক্লিনিক’। এখন রাজ্যে চতুর্থ ঢেউ চললেও শুধুমাত্র বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে সপ্তাহে এক দিন চলছে ওই চিকিৎসা কেন্দ্র। রাজ্যের স্বাস্থ্য-অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগী বলেন, ‘‘প্রতিটি হাসপাতাল ও সমস্ত চিকিৎসককে বলা রয়েছে, কোভিড-পরবর্তী সময়ে কী কী ধরনের সমস্যা দেখা দিলে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। কী চিকিৎসা করতে হবে, তা-ও অ্যাডভাইজ়রিতে রয়েছে। সেই মতোই বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।’’
সূত্রের খবর, গত বছর সপ্তাহে এক দিন চলা আইডি হাসপাতালের ওই কেন্দ্রে সর্বাধিক ১০০ জন রোগীও এসেছেন। এখন সেই সংখ্যা দশ-বারোয় নেমেছে। এর নেপথ্যে অবশ্য মানুষের সচেতনতার অভাব রয়েছে বলেও দাবি চিকিৎসক মহলের। আইডি-র বক্ষরোগ বিভাগের প্রধান তথা পোস্ট-কোভিড ক্লিনিকের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক কৌশিক চৌধুরী বললেন, ‘‘সেরে ওঠার পরেও মূলত ক্লান্তি, শ্বাসকষ্ট ও অনিদ্রার ঝক্কি থেকে যাচ্ছে। তাই তাঁদের সবারই পোস্ট-কোভিড ক্লিনিকে যাওয়া উচিত। তাতে নির্দিষ্ট ব্যবস্থাপনার মধ্যে সমাধান সম্ভব।’’ চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ‘পোস্ট-কোভিড সিনড্রোম’ বলতে বোঝাচ্ছে, আক্রান্ত হওয়ার ১২ সপ্তাহ পরেও সমস্যাগুলির থেকে যাওয়া বা নতুন করে শুরু হওয়া। ‘লং কোভিড’-কে দু’টি পর্বে ভাগ করা যায়। একটি করোনা-পরবর্তী সমস্যা, আর একটি করোনার কারণে ক্রনিক সমস্যা। কোভিডমুক্ত হওয়ার চার সপ্তাহ পর থেকে ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত যে উপসর্গগুলি থেকে যাচ্ছে, তা হল ক্রনিক সমস্যা।
শহরের এক বেসরকারি হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ারের চিকিৎসক সৌতিক পাণ্ডার কথায়, ‘‘সংক্রমণমুক্ত হলেও লং কোভিড বিষয়টি নতুন রোগ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে গিয়েছে। মানুষকে সেটা বুঝতে হবে। এই ধরনের ন্যূনতম উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। সমস্যাটি কোভিডের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত না অন্য কিছু, তা দেখা প্রয়োজন।’’ চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, প্রতিটি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে নির্দিষ্ট পোস্ট-কোভিড ক্লিনিক থাকা প্রয়োজন।