ফাইল চিত্র।
রাজ্যে বেড়ে চলেছে কোভিডের সংক্রমণ। গত পাঁচ দিন ধরে একশোর ঘরেই ওঠানামা করছে সংক্রমণের লেখচিত্র। মঙ্গলবার স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে আক্রান্ত হয়েছেন ১৩৫ জন। তালিকার একেবারে শীর্ষে রয়েছে কলকাতা। তার পরেই উত্তর২৪ পরগনা।
সূত্রের খবর, ধীরে হলেও সংক্রমণ বৃদ্ধির গতিপ্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করে পুনরায় করোনা-বিধি সম্পর্কে সচেতনতা এবং পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানোর উপরে জোর দিতে সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠাবে রাজ্যে কোভিড ব্যবস্থাপনায় গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি। গত ১১ মার্চের পরে রাজ্যে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা নেমে গিয়েছিল ১০০-র অনেক নীচে। কিন্তু জুনের গোড়া থেকে ধীরে ধীরে উঠতে শুরু করে ৯ জুন (স্বাস্থ্য দফতরের ১০ জুনের বুলেটিনে প্রকাশিত) ফের দৈনিক আক্রান্ত ১০০-র ঘরে প্রবেশ করে। তার পর থেকে ওঠানামার মধ্যে দিয়েই সংক্রমণ এগোচ্ছে। যা দেখে বিশেষজ্ঞেরা মনে করছেন, ধীরে হলেও বঙ্গে আক্রান্ত বৃদ্ধি পাবে।
এরই মধ্যে মাস্ক পরা বা স্যানিটাইজ়ার ব্যবহার করার মতো বিধি উড়িয়ে ভিড়ে যে ভাবে গাদাগাদি চলছে, তাতে ঝুঁকি আরও বাড়ছে বলেই মত চিকিৎসক মহলের। সূত্রের খবর, কোভিডের ব্যবস্থাপনায় গঠিত পাঁচ জন চিকিৎসকের বিশেষজ্ঞ কমিটির আলোচনায় করোনা-বিধি পালনে জোর দেওয়ার পাশাপাশি দাঁত ও কান-নাক-গলার রোগে আস্ত্রোপচারের আগে রোগীর কোভিড পরীক্ষা করানোর বিষয়ে কথা হয়েছে। সেই সঙ্গেই তাঁরা মনে করছেন, এখন ডেঙ্গি বা আবহাওয়ার কারণেও অনেকের জ্বর হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে জ্বরের সঙ্গে শ্বাসকষ্ট যদি থাকে, তা হলেও পরীক্ষা করাতে হবে। কমিটির চেয়ারম্যান গোপালকৃষ্ণ ঢালি বলেন, ‘‘রুজি-রুটির জন্য মানুষকে বেরোতে হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু সাবধানতা অবলম্বন করলে তবেই আমরা অতিমারির বড় ঢেউকে আটকাতে পারব।’’
শহর থেকে শহরতলি, এমনকি জেলাতেও সিংহভাগ মানুষই যে করোনা-বিধি মানছেন না, প্রতিনিয়তই তার প্রমাণ মিলছে। ধর্মতলা চত্বরের ভিড় দেখলেই বোঝা যায়, কী ভাবে উপেক্ষিত হচ্ছে কোভিড-বিধি। দৈনিক আক্রান্তের পাশাপাশি পজ়িটিভিটি রেট বা সংক্রমিতের হারও বাড়ছে। এ দিনের বুলেটিনে দেখা যাচ্ছে, সোমবার রাজ্যে ৭২৮৯ জনের পরীক্ষা হয়েছিল। পজ়িটিভ ১৩৫ জন। অর্থাৎ, পজ়িটিভিটি রেট ১.৮৫ শতাংশ। শেষ পাঁচ দিনের মধ্যে গত ১২ জুন, রবিবার (১৩ জুনের বুলেটিনে প্রকাশিত) রাজ্যে সংক্রমিতের হার ছিল সব থেকে বেশি (২.৪৫ শতাংশ)। মাত্র ৪৬০৩ জনের পরীক্ষায় ১১৩ জন আক্রান্তের খোঁজ মিলেছিল।
গত ২৪ ঘণ্টায় কলকাতায় ৬৬ জন, উত্তর ২৪ পরগনায় ৩৩ জন, পশ্চিম মেদিনীপুরে ন’জন, পশ্চিম বর্ধমান ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় পাঁচ জন করে আক্রান্ত হয়েছেন। বাকি কয়েকটি জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা এক থেকে চারের মধ্যে। তবে আটটি জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা শূন্য। জনস্বাস্থ্য বিষয়ক চিকিৎসক অনির্বাণ দলুইয়ের কথায়, ‘‘আগেও দেখা গিয়েছে, প্রথমে শহরাঞ্চল, অর্থাৎ ঘন জনবসতিপূর্ণ এলাকায় আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। তার পরে ধীরে ধীরে শহরতলি এবং জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকে। তবে এখনই খুব বেশি আতঙ্কিত না হয়ে আরও সতর্ক হতে হবে। পরীক্ষার উপরে জোর দিতে হবে।’’ রবিবার কলকাতা পুরসভার আট নম্বর বরোয় ১৪ জন এবং দশ নম্বরে ১৫ জন আক্রান্ত হয়েছিলেন। সোমবার ওই দুই বরোয় ছ’জন করে আক্রান্ত হলেও, ১২ নম্বর বরোয় ১৭ জন সংক্রমিতের খোঁজ মিলেছে।
চিকিৎসক এবং ভাইরাস বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, করোনাভাইরাসের মারণ-ক্ষমতা এখন ততটা বেশি নয় ঠিকই। কিন্তু ক্রমাগত মিউটেশন করে তা যে দীর্ঘস্থায়ী হতে চলেছে, সেই প্রবণতাই লক্ষ করা যাচ্ছে। ভাইরোলজিস্ট সিদ্ধার্থ জোয়ারদারের কথায়, ‘‘বর্তমানে প্রাণীদের দেহ, বিশেষত বন্য প্রাণীদের দেহকে আশ্রয় করে করোনাভাইরাসের থেকে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। তাই মনে হচ্ছে, এই ভাইরাসকে পৃথিবী থেকে নির্মূল করা সহজ হবে না।’’
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।