রান্নাঘরের কোন কোন জিনিস নির্দিষ্ট সময় অন্তর না বদলালে বিপদ!
হেঁশেলে দীর্ঘ সময় রান্নাবান্না চলে। সবচেয়ে বেশি কালি পড়ে, তেলচিটে হয় বাড়ির মধ্যে এই স্থানটি। ঘর সাজানোর দিকে নজর দিলেও, অনেকেই রান্নাঘরের সৌন্দর্যে তেমন চোখ দেন না। নির্দিষ্ট সময় অন্তর বিছানার চাদর বদলায়, জানলার পর্দা নতুন হয়, তা হলে রান্নাঘরের জিনিসই বা বাদ পড়বে কেন? হেঁশেলের জিনিসপত্রেরও মাঝেমধ্যে বদলের প্রয়োজন, তা হয়তো অনেকেই বোঝেন না। কড়াই থেকে এমন অনেক জিনিস আছে, যত ক্ষণ না তার শোচনীয় অবস্থা হয় তত ক্ষণ বাতিলের আওতায় আসে না।
কিন্তু জানেন কি হেঁশেলের বেশ কিছু উপাদান নির্দিষ্ট সময় অন্তর বদল না করলে স্বাস্থ্যের পক্ষে তা ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে? তা ছাড়া, প্রতিটি জিনিসেরই একটি মেয়াদ রয়েছে। তাই সেগুলিরও বদল প্রয়োজন।
ননস্টিক কড়া
কম তেলে রান্নার জন্য ননস্টিকের বাসনকোসন বেশ জনপ্রিয়। কিন্তু সমস্যা হল সঠিক ব্যবহারবিধি মানা না হলে সহজেই এই ধরনের বাসন নষ্ট হয়ে যায়। আবার যত্নে ব্যবহার করলেও বেশ কিছু দিন পর এতে থাকা বিশেষ পরত উঠে যায়। তেমনটা হলেই কিন্তু এই বাসন বাদ দিয়ে নতুন কিনতে হবে। অনেকেই ননস্টিক কড়াই বা বাসনের পুরো পরত উঠে না যাওয়া পর্যন্ত তাতেই রান্না করেন। এ ভাবে কড়াইয়ের ব্যবহার স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর হতে পারে। মোটামুটি ২-৩ বছর অন্তর এই ধরনের কড়াই বদলানো প্রয়োজন।
রান্নাঘর পরিষ্কারের তোয়ালে
রান্নাঘরের বিভিন্ন অংশ পরিষ্কারের জন্য তোয়ালে বা কাপড় দরকার হয়। আনাজপাতি কাটাই হোক বা খাবারের অংশ পরিষ্কার, গ্যাস অভেনে লেগে থাকা তেল-মশলা, তোয়ালে বা কাপড় দিয়ে প্রতি দিন মুছতে মুছতে তেলচিটে হয়ে যায়। এগুলি প্রতি দিন সাবান দিয়ে পরিষ্কার করা উচিত। গরম জলে ফুটিয়ে নিলে আরও ভাল হয়। কিন্তু বহু বাড়ির রান্নাঘরেই দেখা যায় তেলচিটে নোংরা, রংচটা রান্নাঘর পরিষ্কারের কাপড় বা তোয়ালে দিনের পর ব্যবহার করা হচ্ছে। এটা কিন্তু মারাত্মক ক্ষতিকর। ভিজে কাপড় বা তোয়ালেয় ব্যাক্টেরিয়া, নানা রকম জীবাণু বাসা বাঁধে। তাই এক মাস অন্তর সেগুলি বাদ দেওয়া প্রয়োজন। তবে কেউ যদি নিয়মিত সেই কাপড় বা তোয়ালে গরম জলে সাবান দিয়ে ফুটিয়ে নেন, তবে তার স্থায়িত্বের মেয়াদ আরও একটু বাড়তে পারে। আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, এই কাপড় বা তোয়ালে কাচার পর রোদে ভাল করে শুকিয় নেওয়া দরকার।
আনাজ কাটার বোর্ড
আনাজ কাটতে কেউ কাঠের আবার কেউ প্লাস্টিকের বোর্ড ব্যবহার করেন। প্রতি দিন কাজের শেষে এই বোর্ডগুলি ভাল করে সাবান দিয়ে পরিষ্কার করে নেওয়া প্রয়োজন। বিশেষত কাঠের বোর্ড দীর্ঘদিন ব্যবহারে ভেঙে যেতে পারে, কাটাকুটিতে ফাটল ধরতে পারে। এই ফাঁকফোকরে বাসা বাঁধে জীবাণু। তাই ২-৩ বছর অন্তর এই ধরনের বোর্ডগুলি পাল্টে ফেলা প্রয়োজন।
প্লাস্টিকের কৌটো
প্লাস্টিক স্বাস্থ্যের পক্ষে মোটেই ভাল নয়। তবুও বহু বাড়িতে কাজের সুবিধার জন্য প্লাস্টিকের কৌটো ব্যবহার হয় রকমারি জিনিসপত্র রাখার জন্য। প্লাস্টিকের একটি সুবিধা হল, এটি হাত ফস্কে পড়ে গেলেও ভেঙে যায় না। ফলে, অনেকেই মশলা থেকে চাল, ডাল, নুন, তেল প্লাস্টিকের কৌটোতেই রাখেন। একান্তই এই ধরনের কৌটো ব্যবহার করলে এক বছর অন্তর সেগুলি পাল্টে ফেলা প্রয়োজন। অনেক সময় প্লাস্টিকের কৌটোর রং বদলে যায়, গন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ দিন ব্যবহারে ক্ষতির সম্ভাবনাও বৃদ্ধি পায় এতে।
মশলা
অনেকেই একসঙ্গে অনেকটা পরিমাণ মশলা সংরক্ষণ করে রাখেন। এতে কাজের সুবিধা হয়। কিন্তু সঠিক ভাবে, সঠিক তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে না পারলে এর পুষ্টিগুণ চলে যায়। গন্ধ কমে যায়। তার উপর বর্ষাকালে উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ায় মশলা দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। বুঝতে না পেরে খারাপ হয়ে যাওয়া মশলা ব্যবহারে পেটের সমস্যা হতে পারে। তাই একবারে অনেকটা মশলা না কিনে, ২-৩ মাস ব্যবহারের জন্য সংরক্ষণ করলেই ভাল হয়।