ল্যাপটপ বা মোবাইলের দিকে চেয়ে চেয়ে দিন কেটে যাচ্ছে। গান শোনা, সিনেমা কিংবা ওয়েব সিরিজ় দেখা, বন্ধুদের সঙ্গে গল্পের জন্য ‘স্ক্রিন টাইম’ তো বেড়ে যাচ্ছিলই, করোনার ঘরবন্দি দশার ফলে তার সঙ্গে যোগ হয়েছে অনলাইন ক্লাস। ল্যাপটপ, মোবাইল বা ট্যাবলেট নিয়ে এতটা সময় কাটাতে দেখে বাবা-মায়েরা বিরক্ত হচ্ছেন, শঙ্কিতও হচ্ছেন। ঘরে ঘরে তর্ক চলছে বড় আর ছোটদের। কতটা স্ক্রিন টাইম বাড়াবাড়ি?
লকডাউনের পর অল্পবয়সিদের মধ্যে তিনটি দল দেখতে পাচ্ছি আমরা। এক, যাদের স্ক্রিন টাইম বেড়েছে, ল্যাপটপ-মোবাইলে ক্লাস (বা কাজ) আর বিনোদনের জন্য আগের চাইতে বেশি সময় কাটাচ্ছে। কিন্তু তাদের শারীরিক-মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব পড়েনি, অন্যের সঙ্গে আচরণে বদল আসেনি।
দ্বিতীয় দলটি স্ক্রিনে এমনই মগ্ন হয়ে থাকছে যে অন্যান্য কাজ সময় মতো করছে না। মোবাইলের ব্যবহার প্রয়োজনের গণ্ডি অনেকখানি ছাপিয়ে যাচ্ছে। খাওয়া, ঘুম, নিজের যত্ন নেওয়া, এ সবই উপেক্ষিত হচ্ছে। বাড়ির লোকেদের সঙ্গে ব্যবহারে বিরক্তি, অসহিষ্ণুতা দেখাচ্ছে। নিজেরও মেজাজ খারাপ, পড়াশোনা খারাপ হচ্ছে। কিন্তু সে কথা বুঝতে চাইছে না, বললে অস্বীকার করছে।
এই দলেরই একটা অংশ হল তৃতীয় দল, যারা নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ সম্পূর্ণ হারিয়ে ফেলেছে। কোনও মতেই স্ক্রিন থেকে চোখ সরাতে পারছে না। মোবাইল-ল্যাপটপ জীবনের কেন্দ্রে চলে আসায় নিজের যত্ন, সামাজিক সংযোগ, পড়া বা কাজ— সবই মন থেকে সরে গিয়েছে। সে সবের ক্ষতি হচ্ছে, সেই হুঁশ থাকছে না। এরা ‘ডিপেনডেন্ট গ্রুপ’। ড্রাগ-আসক্তির মতো, স্ক্রিন-আসক্তিও এক ধরনের অসুখ, তা গত বছর জানিয়ে দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। মনঃসংযোগের অভাব, ধৈর্যের অভাব, বিরক্তি, নিজের পরিচর্যায় অক্ষমতা, মাথা বা চোখের যন্ত্রণা এমন অবস্থার কিছু লক্ষণ।
তাই ‘স্ক্রিন টাইম বাড়লে তা খারাপ কেন?’ এই প্রশ্নের উত্তর হল, কোনও জিনিস খারাপ বলে বুঝব যখন তার ফল খারাপ। পড়াশোনা, স্বাস্থ্য, সামাজিক সম্পর্ক— এই তিনটির উপর যদি স্ক্রিন টাইম কুপ্রভাব ফেলে, তা হলে সংযত করতে হবে নিজেকে। অনেক সময়ে নিজের মধ্যেও নিজেকে ভাল না লাগার বোধ, খারাপ থাকার অনুভূতি টের পাওয়া যায়। সেটাও একটা গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত।
স্ক্রিন টাইম নিয়ে সংঘাতে না গিয়ে প্রয়োজন আলোচনায় বসা। অভিভাবককে ছোটদের কাছে বুঝিয়ে বলতে হবে, কেন বেশি মনে হচ্ছে স্ক্রিন টাইম, কী ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে তার। শরীরের যত্ন, বাড়ির কাজে সাহায্য, এ সবের জন্যও সময় রাখা চাই ছেলেমেয়েদের।
সন্তানকে বোঝাতে হবে, কতটা স্ক্রিন টাইম তার দরকার এবং কেন দরকার। দরদস্তুর করে একটা সিদ্ধান্তে আসতে হয় এই সব পরিস্থিতিতে। তবে যাদের আসক্তি হয়ে গিয়েছে স্ক্রিনে, তাদের সিদ্ধান্ত মানতে পারার ক্ষমতা থাকে না। তারা অসুস্থ, চিকিৎসার প্রয়োজন।