আমার বাড়িতে বাবা এবং দাদু দু’জনেই আইনের সঙ্গে যুক্ত। দাদু বিচারক ছিলেন, বাবা ওকালতি করেন। তাঁদের দেখাদেখিই ছোট থেকে আইন নিয়ে পড়ার ইচ্ছে জাগে। আমি ডন বসকো, পার্ক সার্কাসের প্রাক্তন ছাত্র। স্কুলে সিভিক্স বলে একটি বিষয় ছিল। সেখানে সংবিধান, বিচারব্যবস্থা নিয়ে পড়তে হত। প্রায় প্রতি দিনই দাদুর সঙ্গে আইনের কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনাও হত। অন্য দিকে, খবরের কাগজে তো প্রায়ই আইনকানুন নিয়ে নানা ধরনের খবর থাকে। সেগুলো পড়তে পড়তে ধীরে ধীরে বিষয়টার প্রতি আমার আগ্রহ তৈরি হয়।
সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় কয়েক জন সিনিয়রের কাছ থেকে ‘ক্ল্যাট’ পরীক্ষাটা সম্পর্কে জানতে পারি। তারা ওই পরীক্ষাটি দিচ্ছিল। যেহেতু আমার আইন নিয়ে পড়ার ইচ্ছে ছিল, তাই পরীক্ষার সম্পর্কে ওই দাদাদের কাছে থেকে আরও বিস্তারিত জানার চেষ্টা করেছিলাম। তারাও সাহায্য করেছিল। বলে দিয়েছিল, ক্ল্যাট-এ কী কী পড়তে হয়, কী ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া উচিত, কখন থেকে এই প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার পড়া শুরু করা উচিত ইত্যাদি। ক্লাস টেন-এর পরে পরিকল্পিত ভাবেই সায়েন্স-এর বদলে আমি কমার্স নিয়েছিলাম। আমাদের আইএসসি বোর্ডে কমার্সে কমার্শিয়াল অ্যাপ্লিকেশনস বা ইকনমিক্স যা পড়ায়, সেটা এখনকার কোম্পানি ল’জ় বা দেশের অর্থনীতির বিষয়গুলি বুঝতে সাহায্য করে।
একাদশ শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকেই আমি ক্ল্যাট-এর প্রস্তুতি শুরু করে দিই। জানতাম, এর মধ্যে স্কুল ও বোর্ডের পরীক্ষা থাকবে। পরীক্ষার আগে এক দু’মাস বাদ দিয়ে সাধারণত ক্ল্যাটের পড়াশোনা করতাম। এখানে যেহেতু বোর্ডের পড়া এবং ক্ল্যাটের প্রস্তুতি দুটোই এক সঙ্গে চালাতে হত, তাই অনেক সময়েই অসুবিধে হত। কিন্তু জানতাম, আমাকে দুটো পরীক্ষাতেই ভাল করতে হবে। সে ভাবেই সময় ভাগ করার চেষ্টা করতাম। সাধারণত গোটা সপ্তাহে স্কুলের পড়াটা বেশি করে করতাম। আর সপ্তাহের শেষে শনি-রবিবার ক্ল্যাট-এর পড়াশোনা বেশি করে করতাম। একই ভাবে যখন গরম বা শীতের ছুটি পড়ত কিংবা স্টাডি লিভ থাকত, তখন সময় করে বোর্ডের পড়ার পাশাপাশি ক্ল্যাট-এর পড়াশোনাও করতাম।
ক্ল্যাট-এর ক্ষেত্রে একটা বিষয় সব সময় মাথায় রাখতে হয়। এখানে তোমার ‘নলেজ’-এর থেকেও ‘অ্যাপ্টিটিউড’ অনেক বেশি যাচাই করা হয়। ফলে এখানে নানা ধরনের প্রশ্ন প্র্যাকটিস করাটা খুবই জরুরি। যত বেশি তুমি বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন উত্তর করবে, তত আসল পরীক্ষায় সফল হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে। এ বছর শুনছি পরীক্ষার ধরন কিছুটা বদলেছে। তবুও মূল প্রেপারেশনে খুব একটা হেরফের হওয়ার কথা নয়। ক্ল্যাট-এ মূলত পাঁচটা সেকশন। প্রথমে বলি, জেনারেল নলেজ এবং কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স বিভাগটির সম্পর্কে। এই বিভাগের জন্য খবরের কাগজ খুঁটিয়ে পড়া দরকার। বিশেষত, গত এক বছর বা ছ’মাসে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, আন্তর্জাতিক, বৈজ্ঞানিক, আইন, খেলাধুলো সংক্রান্ত যে খবরগুলি শিরোনামে থেকেছে সেগুলি নোট করে রাখতে হবে। একই সঙ্গে প্রত্যেক সপ্তাহের শেষে সেগুলি রিভাইজ় করতে হবে। আমাদের সময় আমরা যেমন ‘লুসেন্টস জিকে’ নামে একটি বই দেখতাম। এ ছাড়া জেনারেল নলেজ এবং কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স সংক্রান্ত বেশ কিছু ওয়েবসাইট আছে। সেগুলি দেখা যেতে পারে।
লিগাল অ্যাপ্টিটিউড-এ প্রশ্ন এখন অনেক বেশি রিজ়নিং-নির্ভর হয়ে গিয়েছে, যে কারণে বই বেশি পড়ার থেকে এখানে নানা ধরনের প্রশ্ন বেশি করে প্র্যাকটিস করলে কাজে দেবে। সাধারণত কী ধরনের প্রশ্ন আসে সেই ধাঁচ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে বিগত বছরগুলির ক্ল্যাট পরীক্ষার প্রশ্নপত্র থেকে। এ ছাড়া ‘ইউনিভার্সাল’ প্রকাশনার একটি বই রয়েছে। এখানে সব বিভাগের অনুশীলন রয়েছে।
ইংরেজিতে প্যারা জাম্বলস, গ্রামাটিক্যাল এরর, সিনোনিমস-অ্যান্টোনিমস, ইডিয়মস ইত্যাদি আসে। মোট কথা, ছাত্রের ইংরেজির প্রাথমিক দক্ষতা যাচাই করা হয়। এ বছর শুনছি কম্প্রিহেনশন বিষয়ক প্রশ্নের সংখ্যা বেশি থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। ভাল হয়, যদি প্রতি দিন একটি নামী ইংরেজি সংবাদপত্রের সম্পাদকীয় বিভাগটি পড়তে পারো। সেখান থেকে নতুন শব্দ বাছলে, বাক্যগুলির গঠনের ধরন নজর করলে। রিডিং কম্প্রিহেনশন প্র্যাকটিস করার ক্ষেত্রে এটা একটা ভাল অভ্যাস। ইংরেজির জন্য রেন অ্যান্ড মার্টিন, নরম্যান লিউইস-এর ‘ওয়ার্ড পাওয়ার মেড ইজ়ি’ দেখতে পারো।
লজিক্যাল অ্যাপ্টিটিউড-এ আমাদের সময় দুটো সেকশন ছিল— ভার্বাল লজিক এবং অ্যানালিটিক্যাল রিজ়নিং। অ্যানালিটিক্যাল রিজ়নিং অনেকটা অঙ্কের মতো। এখানকার বেশ কিছু প্রশ্নের জন্য শর্টকাট পদ্ধতি জেনে রাখতে হয়। আর ভার্বাল লজিক রপ্ত করা যায় নানা ধরনের প্রশ্নোত্তর করে। এই বিভাগের জন্য এম কে পান্ডে-র একটি বই পাওয়া যায়।
শেষে আসি অঙ্কের বিভাগে। এখানেও বেসিক অঙ্কের প্রশ্ন আসে। কিন্তু সেগুলি কম সময়ে উত্তর করার জন্য শর্টকার্ট পদ্ধতি আছে। সেগুলি জানতে হবে। এর জন্য দেখা যেতে পারে এম টায়রা-র বইগুলি।
ক্ল্যাট পরীক্ষার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল সময়। কম সময়ে যত বেশি উত্তর করা যায়। খুব তাড়াতাড়ি উত্তর করার অভ্যাস তৈরি করতে হবে। এর জন্য নিয়মিত মক টেস্ট দেওয়া জরুরি। তা ছাড়া এমন কিছু প্রশ্ন থাকে যেগুলি শর্টকাটের সাহায্যে খুব কম সময়ে উত্তর করা যায়। এই শর্টকাট পদ্ধতিগুলি জেনে রাখতেই হবে।
মক টেস্ট দেওয়ার পাশাপাশি ক্ল্যাটের পুরনো প্রশ্নপত্রগুলো সলভ করতে পারো প্রশ্নের ধাঁচ জানার জন্য। মোটামুটি যখন দেখবে তোমার ক্ল্যাটের প্রস্তুতি হয়ে গিয়েছে, মক টেস্টও অনেকগুলি দিয়ে ফেলেছ, তখন ক্ল্যাট-এর পুরনো প্রশ্নগুলো সল্ভ করতে পারো। তা ছাড়া, যখন ক্ল্যাট পরীক্ষা শুরু হয়নি, তখন বিভিন্ন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলি ভর্তির জন্য নিজস্ব পরীক্ষা নিত। সেই প্রশ্নপত্রগুলিও পাওয়া যায়। সেগুলিও অবশ্যই সল্ভ কোরো। দেখা গিয়েছে, অনেক সময় ওই সব প্রশ্নপত্রের ধাঁচে বেশ কিছু প্রশ্ন ইদানীং এসেছে।
শেষে বলব, অযথা চাপ না নিয়ে মাথা ঠান্ডা করে পরীক্ষা দিও। অনেক সময় টেনশনে ছাত্রছাত্রীরা জানা প্রশ্নও ভুল করে আসে। খোলা মনে পরীক্ষা দিতে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
সত্রাজিৎ বর্তমানে এনইউজেএস-এ প্রথম বর্ষের ছাত্র