সদস্য টানতে ‘কিছু একটা’ চাই, চিন্তা কংগ্রেসে

পরপর সব ভোটে হেরে বেজায় ঘোরালো পরিস্থিতি! সাবেক দলের ভোটারই কমে যাচ্ছে রাজ্যে রাজ্যে, তো নতুন সদস্য জুটবে কোত্থেকে! সাত-পাঁচ ভেবে দলের সংগ্রহ সদস্য অভিযানে নয়া উদ্যম আনতে এখন উৎসাহ প্রকল্প (ইনসেনটিভ স্কিম) শুরু করার কথাও ভাবছেন কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব। কী উৎসাহ প্রকল্প? কংগ্রেসের এক সাধারণ সম্পাদকের কথায়, “কিছু একটা! নইলে সবারই যা মনের অবস্থা, নতুন সদস্য জুড়তে নিচুতলার কর্মীরাই বা উৎসাহ পাবেন কী করে?”

Advertisement

শঙ্খদীপ দাস

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০১৪ ০২:৫০
Share:

পরপর সব ভোটে হেরে বেজায় ঘোরালো পরিস্থিতি! সাবেক দলের ভোটারই কমে যাচ্ছে রাজ্যে রাজ্যে, তো নতুন সদস্য জুটবে কোত্থেকে! সাত-পাঁচ ভেবে দলের সংগ্রহ সদস্য অভিযানে নয়া উদ্যম আনতে এখন উৎসাহ প্রকল্প (ইনসেনটিভ স্কিম) শুরু করার কথাও ভাবছেন কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব।

Advertisement

কী উৎসাহ প্রকল্প? কংগ্রেসের এক সাধারণ সম্পাদকের কথায়, “কিছু একটা! নইলে সবারই যা মনের অবস্থা, নতুন সদস্য জুড়তে নিচুতলার কর্মীরাই বা উৎসাহ পাবেন কী করে?”

কংগ্রেসের সাংগঠনিক নির্বাচন নিয়ে এছন তৎপরতা চলছে। সভানেত্রী পদে আগামী বছর সনিয়া গাঁধীর মেয়াদ শেষ হবে। তার আগে প্রদেশ ও সর্বভারতীয় কংগ্রেসের সাংগঠনিক নির্বাচনের প্রক্রিয়া যেমন শুরু হয়েছে, তেমনই তার অঙ্গ হিসেবে শুরু হয়েছে সদস্য সংগ্রহের লক্ষ্যে বিশেষ অভিযান। সেই প্রক্রিয়ারই দায়িত্বে থাকা কেরল কংগ্রেসের নেতা মুল্লাপল্লি রামচন্দ্রন সম্প্রতি দলের সব সাধারণ সম্পাদক ও সম্পাদককে বৈঠকে ডাকেন। সদস্য সংগ্রহ অভিযানে যে বেশি সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না, তা ওই বৈঠকেই তুলে ধরেন বিভিন্ন রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকেরা।

Advertisement

তখনই দলের এক সম্পাদক প্রস্তাব দেন, সদস্য সংগ্রহের জন্য উৎসাহ প্রকল্প শুরু করলে কেমন হয়? সূত্রের খবর, গোড়ায় বিষয়টিকে একেবারে হালকা চালে নিয়ে একটু হাসাহাসি হলেও, তা থামতেই মুকুল ওয়াসনিক প্রশ্ন করেন, “বিষয়টা কী রকম?” কিন্তু কৌতূহলী মুকুলকে বাধা দিয়ে কংগ্রেসের বর্ষীয়ান কোষাধ্যক্ষ মতিলাল ভোরা বলে ওঠেন, “আমি হাত তুলে দিচ্ছি! দলের ভাঁড়ে মা ভবানী অবস্থা। এমনিতেই সাংগঠনিক নির্বাচনের জন্য প্রচুর টাকা খরচ হবে। তার ওপর কোনও রকম ইনসেনটিভ দেওয়ার অবস্থা কোষাগারের নেই।”

অগত্যা উপায়? জবাবে কংগ্রেসের ওই সম্পাদকই প্রস্তাব রাখেন, মাছের তেলে মাছ ভাজলে কেমন হয়! কংগ্রেসের সদস্য হতে গেলে এখন বছরে তিন টাকা চাঁদা দিতে হয়। পাঁচ বছরে তাঁর মোট পনেরো টাকা চাঁদা এক বারেই জমা নেওয়া হয়। আবার, কোনও সদস্য সরাসরি কংগ্রেসের পদাধিকারী হতে চাইলে তাঁকে চাঁদা দিতে হয় একশো টাকা। এখন নিচু স্তরের কোনও কংগ্রেস কর্মী যদি এক হাজার বা দু’হাজার নতুন সদস্য জুড়তে পারেন, তা হলে চাঁদার টাকা দিয়েই তাঁকে একটা সাইকেল কিনে দেওয়া যেতে পারে। বা ছেলেমেয়ের স্কুলের বেতন। কিংবা বইখাতার খরচ।

কিন্তু এ ক্ষেত্রে একটা অন্য আশঙ্কাও থেকে যায়। উৎসাহ প্রকল্পের ফলে এই বার্তা যাবে না তো যে, সদস্য টানতে উৎকোচ দিচ্ছে কংগ্রেস? শেষমেশ বৈঠকে স্থির হয়, কোনও রকম উৎসাহ প্রকল্প দেওয়া হলে তা এমন নিরীহ ভাবে দিতে হবে, যাতে নেতিবাচক বার্তা না যায়।

সেই কারণেই সদস্য সংগ্রহ অভিযান ও ইনসেনটিভের প্রস্তাব নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আগামী ২৮ অক্টোবর সমস্ত প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতিকে দিল্লিতে বৈঠকে ডাকা হয়েছে। দলের এক সাধারণ সম্পাদক আজ জানান, এই প্রস্তাব আখেরে রাজ্য স্তরেই রূপায়ণ হবে। তাই উৎসাহ প্রকল্পের ব্যবস্থা আদৌ কতটা কার্যকরী হতে পারবে, বা কী ধরনের উৎসাহ প্রকল্প কর্মীদের দেওয়া যেতে পারে, সে বিষয়ে রাজ্য নেতাদেরও মতামত প্রয়োজন। হতে পারে, কোনও প্রদেশ সভাপতিই উদ্ভাবনী কোনও প্রস্তাব দিলেন।

কিন্তু মূল প্রশ্ন তো সেটা নয়। আসল ঘটনা হল, কংগ্রেসের কি তা হলে এতই দুর্দিন যে, নতুন সদস্য সংগ্রহ করতে উৎসাহ প্রকল্পের কথা ভাবতে হচ্ছে!

কংগ্রেসের ওই সাধারণ সম্পাদকের মতে, দুর্দিন তো বটেই। সেটা নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই। লোকসভা ও একাধিক রাজ্যে পরপর বিধানসভা ভোটে জিতে বিজেপি কর্মীরা আত্মবিশ্বাসে ফুটছেন। পরিস্থিতি গরম থাকতে থাকতেই বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ আগামী মাস থেকে দলের সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরুর কথা বলেছেন। এটা স্বাভাবিক যে, কংগ্রেসের থেকে বিজেপির সদস্য হওয়ার ঝোঁক এখন গ্রামে-গঞ্জে বা নতুন প্রজন্মের মধ্যে বেশি। কারণ, বিজেপি ক্ষমতায় রয়েছে। তা ছাড়া, বিজেপি ক্যাডার-ভিত্তিক দল। আরএসএসের স্বয়ংসেবকরাও খুব সক্রিয়। উল্টো দিকে কংগ্রেসের তেমন কোনও ক্যাডার-ভিত্তি নেই। নিচুতলার কর্মীরাও এখন মনমরা হয়ে রয়েছেন। তাই নতুন সদস্য বাড়াতে কিছু একটা উপায় ভাবা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।

একটা সময় ছিল, যখন এমনিতেই সমাজের বিভিন্ন অংশ থেকে প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক মানুষ কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত হতেন। পরবর্তী কালে সদস্য সংগ্রহ অভিযানের নামে কারচুপি শুরু হয়। ব্লক ও জেলার নেতারা ভুয়ো তালিকা বানিয়ে তাঁদের নামে চাঁদা দিয়ে দলে পদ দখল করতে নেমে পড়েন বলে অভিযোগ ওঠে। কিন্তু রাহুল গাঁধী সেই কারচুপি বন্ধ করতে ব্যবস্থা নিয়েছেন। এখন কংগ্রেসের সদস্য হওয়ার জন্য ছবি-সহ ফর্ম ভর্তি করে জমা দিতে হয়, সেই সঙ্গে সচিত্র পরিচয়পত্রের প্রতিলিপি। কিন্তু কংগ্রেস নেতাদের সমস্যা হয়েছে সেখানেও। এত ঝক্কি পোহাতে নিচুতলায় এখন বিশেষ আগ্রহ দেখা যায় না। এমনকী কংগ্রেস যখন কেন্দ্রে ক্ষমতায় ছিল, তখনও সদস্য অভিযান ছিল ঢিলেঢালা। পশ্চিমবঙ্গেই এমন জেলা রয়েছে, যেখানে সদস্য সংগ্রহ অভিযান হয়নি।

আর এখন কংগ্রেস বিরোধী আসনে। তা-ও দৃশ্যত কোণঠাসা অবস্থা। তাই ঠেলায় পড়েই সদস্য বাড়াতে এখন সাত-পাঁচ ভাবনা চব্বিশ আকবর রোডে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement