দলের সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় নামল সিপিএমের কর্মী-সমর্থকরাই! এমনটাই ঘটেছে পূর্ব ত্রিপুরা লোকসভা (সংরক্ষিত) আসনে।
ত্রিপুরার দু’টি আসনেই সিপিএম তাদের প্রার্থী ‘পরিবর্তন’ করেছে। সপ্তাহ কয়েক আগে তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী ত্রিপুরায় গিয়ে ডাক দেন পরিবর্তনের। ২০০১ সালে পশ্চিমবঙ্গে মমতা একই ভাবে পরিবর্তনের ডাক দিয়ে স্লোগান তুলেছিলেন, ‘উল্টে দিন, পাল্টে দিন’। সিপিএমের তৎকালীন রাজ্য সম্পাদক অনিল বিশ্বাস পরিবর্তনের আগেই পরিবর্তন করে দেন। শাসক বিরোধী হাওয়াকে প্রশমিত করতে সিপিএমের দীর্ঘ দিনের শতাধিক বিধায়ককে সরিয়ে দিয়ে নিয়ে আসেন নতুন মুখ। স্থানীয় স্তরে নতুন মুখের বিরুদ্ধে মমতার ‘পরিবর্তন’-এর ধার অনেকটাই কমে যায়। পরিস্থিতি রাতারাতি সিপিএমের নিয়ন্ত্রণে আসে। এ বার ত্রিপুরাতেও অনিল বিশ্বাসের সেই সূত্রকেই কাজে লাগিয়ে আগেভাগেই ত্রিপুরা (পশ্চিম) আসনে দীর্ঘ দিনের সাংসদ খগেন দাসকে সরিয়ে নতুন মুখ হিসেবে নিয়ে আসা হয়েছে শঙ্কর প্রসাদ দত্তকে। আর সংরক্ষিত ত্রিপুরা (পূর্ব) আসনে সাতবারের নির্বাচিত সাংসদ বাজুবন রিয়াংকে সরিয়ে রাজ্যের শিল্প-বাণিজ্য মন্ত্রী জিতেন্দ্র চৌধুরীকে মনোনয়ন দিয়েছে সিপিএম। যদিও এই পরিবর্তনের ব্যাখ্যা দেয়নি দল।
তবে সিপিএমের এই দুই প্রার্থীর নাম ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই জিতেন্দ্র চৌধুরীর দলীয় মনোনয়ন বাতিলের জন্য সিপিএমের বেশ কিছু কর্মী-সমর্থক ত্রিপুরার দক্ষিণে সাব্রুম এবং মনু বিধানসভা কেন্দ্র সংলগ্ন কলাছড়া এলাকায় গত কয়েক দিন ধরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। এমনকী দলীয় ওই কর্মীরা পথ অবরোধও করেন। তবে সেটা জীতেনবাবুর বিরোধিতা করে নয়, বিরোধিতা দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মন্ত্রী জিতেন্দ্র চৌধুরী যে অঞ্চল থেকে বিধায়ক হয়ে বিধানসভায় এসেছেন, সেখানকার দলীয় কর্মী-সমর্থকরা তাঁকে সাংসদ হিসেবে পাঠাতে নারাজ। স্থানীয় দলীয় কর্মীদের একাংশের আশঙ্কা, জিতেনবাবু রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্য থাকায় যে ভাবে দক্ষিণ ত্রিপুরার কয়েকটি বিধানসভা এলাকায় ‘উন্নয়ন’ হয়েছে, সাংসদ হলে তাতে ‘ভাঁটা’ পড়বে। এলাকা বঞ্চিত হবে। দলের পক্ষে ব্যাপারটা সুখকর হলেও, এলাকার পক্ষে তা হবে না। তাই দক্ষিণ ত্রিপুরার সিপিএমের একাংশের এই ‘বিক্ষোভ’।
বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পরেই দক্ষিণ ত্রিপুরায় সিপিএমের জেলা ও মহকুমা স্তরের নেতাদের ছোটাছুটি শুরু হয়ে যায়। বুঝিয়ে সুজিয়ে ‘অসন্তুষ্ট’ দলীয় কর্মীদের শান্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। বিষয়টি রাজ্য নেতৃত্বেরও নজর এড়ায়নি। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য এবং দলের মুখপাত্র গৌতম দাস দলীয় কর্মীদের এই ‘বিক্ষোভের’ কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘জিতেনবাবুর মনোনয়নে সিপিএমের অল্পবয়সী কিছু সমর্থক ও কর্মী তাদের আপত্তি জানিয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে, পথ অবরোধ করেছে। এটা যে দলীয় সিদ্ধান্তের পরিপন্থী, তা তাদের বোঝানো হচ্ছে।’’ জিতেনবাবু নিজেও দলীয় কর্মী-সমর্থকদের বিক্ষোভকে বেশি গুরুত্ব দিতে নারাজ। দলীয় এক জনসভায় তিনি বলেন, ‘‘দল যে দায়িত্ব দিয়েছে তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। নির্বাচিত হলে সংসদে রাজ্যবাসীর সমস্যার কথা বলব।’’ সিপিএমের একাংশ বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন। সিপিএমের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে দলীয় ‘অনুশাসন’ ভাঙার এই প্রবণতাতেই তাঁদের উদ্বেগ। নির্বাচনী ফলাফলে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে বলেও তাঁদের একাংশ মনে করেন।