অসমে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সামিল কলকাতা জেলা বামফ্রন্ট। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র
জঙ্গিদের ভয়ে অসম থেকে পশ্চিমবঙ্গে এসেছেন আদিবাসী শরণার্থীরা। সঙ্গে সঙ্গে এসেছে জঙ্গিহানার ভয়ও। কেন্দ্র ও রাজ্য গোয়েন্দা দফতর সূত্রে অসম ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে বলা হয়েছে, এনডিএফবি জঙ্গিরা অসম-লাগোয়া কুমারগ্রামের শরণার্থী শিবিরে ঢুকে হামলা চালানোর ছক কষেছে। এই বার্তা পৌঁছনোর পরেই আলিপুরদুয়ার জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে বালাপাড়া-সহ সব ক’টি শরণার্থী শিবিরে নিরাপত্তা দ্বিগুণ করা হয়েছে।
আলিপুরদুয়ারের পুলিশ সুপার এসপি অনুপ জায়সবাল বলেন, “বালাপাড়া শিবিরে বড়ো সম্প্রদায়ের বহু মানুষ রয়েছেন। সেখানে যদি এনডিএফবি জঙ্গিদের কেউ ঢুকে শরণার্থীদের মধ্যে মিশে থাকে, তা হলে চট করে আমরা চিনতে পারব না। কারণ, জঙ্গিদের সকলের ছবি আমাদের কাছে নেই। তাই প্রতিটি শিবিরে পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনীও মোতায়েন করা হয়েছে।” বিস্ফোরক চিনতে দক্ষ কুকুর দিয়ে তল্লাশিও চালানো হচ্ছে বালাপাড়ায়।
পুলিশ সুপার জানান, এত দিন শিবিরপিছু দু’জন করে নিরাপত্তা কর্মী ছিল। এখন প্রতিটি শিবিরে আরও চার জন করে সিআরপিএফ জওয়ান মোতায়েন করা হয়েছে। এর মধ্যে বালাপাড়া শিবিরে ১০ জন সিআরপিএফ জওয়ান রাখা হয়েছে।
অসমে জঙ্গি হানার জেরে প্রায় দেড় হাজার শরণার্থী সঙ্কোশ নদী পেরিয়ে কুমারগ্রামে আশ্রয় নেন। তাঁদের রাখার জন্য পাঁচটি শরণার্থী শিবির খোলে প্রশাসন। এগুলি অসমের কাছে। এর মধ্যে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের জঙ্গল-ঘেরা বালাপাড়া শিবির থেকে অসমের দুরত্ব বড় জোর চার কিলোমিটার। বালাপাড়া শিবিরে ৫০০ জনের উপরে শরণার্থী রয়েছেন। জেলা পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, চ্যাংমারি, হেমাগুড়ি, মধ্য হলদিবাড়ি শালবাড়ি শিবিরে, এবং বালাপাড়া শিবিরে ১৩৮০ জন শরণার্থী রয়েছেন। এখানে জঙ্গিরা আত্মগোপন করলে, তাদের চেনা সহজ হবে না।
আলিপুরদুয়ারের সাংসদ দশরথ তিরকে বলেন, “অসম ও ভুটান সীমান্তের কুমারগ্রাম অঞ্চলে বরাবর জঙ্গিদের আসা যাওয়া রয়েছে। তাই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত।” তৃণমূলের আলিপুরদুয়ার জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী বলেন, “শরণার্থীরা আমাদের অতিথি। ওঁদের দেখভালের দায়িত্ব আমাদের। তবে শরণার্থীদের মাঝে জঙ্গিরা আত্মগোপন করে থাকলে সেটা চিন্তার বিষয়। পুলিশ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখুক।”
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শরণার্থীদের এ রাজ্যে থাকতে দেওয়ার আশ্বাস দেওয়ার পর আশায় বুক বেঁধেছিলেন তাঁদের অনেকে। কুমারগ্রামের চ্যাংমারি শিবিরে রয়েছেন সিমলাবাড়ি গ্রামের সুশীল মুর্মু, শনিরাম সোরেন। এ দিন তাঁরা বলেন, “থাকব ভেবেছিলাম। শুনছি জঙ্গিরা এখানেও আসতে পারে। তা হলে তো ফিরে যাওয়াই ভাল।”
খবর ছিল, মানলেন গগৈ
এনডিএফবি জঙ্গিদের হামলার আগাম খবর নিয়ে গত কয়েক দিনে গোয়েন্দা সূত্রে বেশ কিছু কথা বলা হয়েছে। আজ মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ জানান, ২৩ ডিসেম্বর তাঁর দফতরে বেলা সাড়ে ১২টায় এবং কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা ব্যুরোর তরফে বিকেল ৩টায় জঙ্গি হানা নিয়ে আগাম খবর এসেছিল। তার পরেও পুলিশ বা সেনাবাহিনী হামলা রুখতে ব্যবস্থা নিতে পারেনি বলেও মেনে নেন গগৈ। জঙ্গিরা বিকাল ৫টা নাগাদ হানা দেয়। তবে ব্যর্থতার দায় কেন্দ্রের উপরেও চাপাতে চেয়েছেন গগৈ। তাঁর বক্তব্য, “কেন্দ্রের কাছে খবর থাকলে কেন্দ্রীয় বাহিনী কেন ব্যবস্থা নেয়নি? শোণিতপুর ও কোকরাঝাড়ে পর্যাপ্ত সেনা ও আধাসেনা ছিল।” মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “বিজেপি ঘটনাটি নিয়ে দায়িত্বজ্ঞানহীনের মতো রাজনীতি করছে। সকলেই জানে, লোকসভা ভোটের আগে বিজেপির সঙ্গে এনডিএফবির ঘনিষ্ঠতা ছিল। আমাদের প্রার্থীকে খুন করার জন্য নিশানা করা হয়েছিল।” সেনাবাহিনী সূত্রে খবর, ইতিমধ্যে এসএসবি-র সঙ্গে এনডিএফবি জঙ্গিদের এক দফা গুলির লড়াই হয়েছে। এর পরে সংবিজিৎ গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান শুরু হবে। সেখানে চালকবিহীন বিমান বা ড্রোনের সাহায্যও নেবে বাহিনী।