চ্যাংমারিতে শরণার্থীরা। ছবি: রাজু সাহা
গ্রামে গ্রামে রটে গিয়েছে বার্তা।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী অসমের শরণার্থীদের বলেছেন, তাঁরা এ রাজ্যে যতদিন ইচ্ছে বাস করতে পারেন। এমনকী পাকাপাকি থাকার ব্যবস্থা করারও আশ্বাস দিয়েছেন। আর সে কথা জেনেই পশ্চিমবঙ্গ-লাগোয়া অসমের নানা গ্রাম থেকে শ্যামল হেমব্রম, থাম্বু হেমব্রম, মাহা হাঁসদাদের মতো বাসিন্দারা কুমারগ্রামে আসতে শুরু করেছেন। শরণার্থীদের ঢল দেখে চিন্তিত প্রশাসনও, তবে প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না কেউ।
কী করে অসমের গ্রামে ছড়াচ্ছে কুমারগ্রামের শিবিরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আশ্বাসের কথা? উত্তর সহজ। শরণার্থীরাই গ্রামে গিয়ে তা প্রচার করছেন। যেমন অসমের কুশলবাড়ির বাসিন্দা মাহান হাঁসদা। রবিবার সাইকেল নিয়ে শরণার্থী শিবির থেকে তিনি নিজের গ্রামে গিয়েছিলেন। সঙ্কোশ নদীতে এই শীতে জল তেমন নেই। ঘাড়ে সাইকেল চাপিয়ে নদী পেরিয়ে, ১২-১৩ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে কুশলবাড়ি গ্রাম। মাহানকে দেখে ভিড় করে এসেছিলেন বাসিন্দারা। তখনই খবরটা জানেন তাঁরা। সোমবার নতুন করে অসমের বিভিন্ন গ্রাম থেকে আরও ৬২ জন কুমারগ্রামে আশ্রয় নিয়েছেন। আদিবাসীদের উপর আক্রমণের নতুন কোনও ঘটনা না ঘটে থাকলেও, হেমাগুড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন একটি শরণার্থী শিবির খুলতে হয়েছে জেলা প্রশাসনকে। রবিবারও ১০১ জন শরণার্থী কুমারগ্রামে আসেন। এই নিয়ে পাঁচটি শিবিরে শরণার্থীর সংখ্যা দাঁড়াল ১৩৬৯। এঁদের অনেকেই আর অসমে ফিরতে চাইছেন না। তাঁদের বক্তব্য, “বারবার জঙ্গি হামলার জেরে ভিটেমাটি ছেড়ে অন্য রাজ্যে আশ্রয় নিতে হচ্ছে। ওখানে ফিরব কেন?”
কোকরাঝাড়ের শিমলাবাড়ি গ্রামের বাবলি হাঁসদা বুধবার পরিবার নিয়ে চ্যাংমারি শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি জানালেন, “এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী আমাদের পাকাপাকি থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। অসমে আর ফিরতে চাই না। এখানেই থাকতে চাই।” ছ’বিঘা চাষের জমি, বাড়ি, গরু-ছাগল, কোনও কিছুর টানেই আর ফিরতে চান না বাবলি।
এ দিন শিবিরে এসেছেন বিন্নাগুড়ির টাপু গ্রামের মদন বাস্কে। তিনি বলেন, “১৯৯৬, ১৯৯৮, দু’বার এ রাজ্যে আশ্রয় নিয়েছি। এই নিয়ে তিনবার হল। পাশের গ্রামে জঙ্গি হানায় অনেকে মারা গিয়েছেন। আর ফিরতে চাই না।” একই কথা শোনা গেল শিবিরের শিবলাল হাঁসদা, মনিকা মারান্ডি, জয় মুর্মুদের মুখেও।
এই পরিস্থিতির জন্য সরকারকে বিঁধেছেন বিরোধীরা। কুমারগ্রামের আরএসপি বিধায়ক মনোজকুমার ওঁরাও, সিপিএমের কুমারগ্রাম জোনাল সম্পাদক বীরেন রায় শরণার্থীর সংখ্যা বাড়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। মনোজকুমার বলেন, “যতদিন অসমের পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হয় ততদিন শরণার্থীরা থাকতে পারেন। কিন্তু পাকাপাকি থাকার আমন্ত্রণ জানানো মানা যায় না।” চ্যাংমারি পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান মলিনা নার্জিনারি অবশ্য বলেন, “অতিথি নারায়ণ।” তাঁর দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাসে শরণার্থী বাড়ছে এমন নয়। প্রাণ বাঁচাতেই অসমের বাসিন্দারা এ রাজ্যে আসছেন। সোমবার কুমারগ্রাম শরণার্থী শিবিরে বড়ো টেরিটোরিয়াল কাউন্সিলের প্রতিনিধিরা ত্রাণ দিতে আসতে চাইলেও তাদের আলিপুরদুয়ার জেলা প্রশাসন আটকে দেয়। পরে অসমের গোঁসাইগাঁওয়ের মহকুমাশাসক অমলেন্দু রায় অসম সরকারের দেওয়া এক লরি ভর্তি ত্রাণ কুমারগ্রামের বিডিও-র কাছে দিয়ে যান। অমলেন্দুবাবু বলেন, “শরণার্থীদের ফিরিয়ে নেওয়ার কোনও নির্দেশ পাইনি। নির্দেশ পেলেই সেই মতো ব্যবস্থা হবে।”