কয়লা মন্ত্রকের অনিয়মের কেচ্ছা ফাঁস করতে গিয়ে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও জড়িয়ে দিলেন মন্ত্রকের প্রাক্তন সচিব পি সি পরাখ। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা বাজপেয়ী জমানার কয়লামন্ত্রীর বিরুদ্ধে সরাসরি কোনও আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ অবশ্য তিনি করেননি। কিন্তু পরাখের বক্তব্য, কয়লা মন্ত্রকে খুব কম সময় থাকলেও মমতা যথেষ্ট অনিয়ম করেছিলেন। যে অভিযোগকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আখ্যা দিয়েছে তৃণমূল।
কয়লা খনি বণ্টন ঘিরে অনিয়মের অভিযোগ তুলে আজ যে বই প্রকাশ করেছেন পরাখ, সেই ‘ক্রুসেডর অর কনস্পিরেটর, কোলগেট অ্যান্ড আদার ট্রুথ’-এ মমতা প্রসঙ্গে একটা আলাদা পরিচ্ছেদই রয়েছে। ‘মমতা সরলতার অন্য দিক’ নামে ওই পরিচ্ছদে পরাখ লিখেছেন, মমতা সাদাসিধে জীবনযাপন প্রশংসনীয়। তাঁর ব্যক্তিগত সততা নিয়েও কোনও প্রশ্ন নেই। কিন্তু সেই মমতাই কয়লা মন্ত্রকের দায়িত্ব নেওয়ার পরে রাতারাতি ৫০ জন তৃণমূল কর্মীকে চাকরি দিয়ে দেন। তাঁদের নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনও নিয়ম মানা হয়নি। খাতায় কলমে তাঁরা কোল ইন্ডিয়াতে প্রশিক্ষণ নিলেও আদতে কাজ করতেন তৃণমূলের জন্যই।
পরাখের তোলা এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে তৃণমূলের জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, “পরাখ এক দিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সৎ এবং সাদাসিধে বলে সার্টিফিকেট দিচ্ছেন, আবার নিয়োগে দুর্নীতি নিয়ে কাঠগড়ায় তুলছেন! তৃণমূল নেত্রী সততা সম্পর্কে গোটা দেশ অবহিত। পরাখের সার্টিফিকেট তাঁর প্রয়োজন নেই।” আর যে অনিয়মের অভিযোগ পরাখ তুলেছেন সেটাও হাস্যকর বলে মন্তব্য করেছেন ডেরেক। তাঁর দাবি, ওই ৫০ জনের কেউই স্থায়ী কর্মী ছিলেন না। মাত্র দু’মাসের জন্য চুক্তির ভিত্তিতে তাঁদের নিয়োগ করা হয়েছিল। বস্তুত, পরাখ নিজেও স্বীকার করেছেন, মমতা মন্ত্রক ছাড়ার পরেই ওই কর্মীদের চাকরি চলে যায়।
ডেরেকের কথায়, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তিন মাসেরও কম সময় কয়লা মন্ত্রকে ছিলেন। তিনি মন্ত্রক ছাড়ার দশ বছর পরে ভোটের মুখে এই অভিযোগ তোলা হচ্ছে। কয়লা খনি বণ্টন নিয়ে যখন হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে, তখন তার সঙ্গে এই সামান্য অনিয়মকে জড়ানোটা হাস্যকর। বোঝাই যাচ্ছে যে গোটা বিষয়টি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।”
কোল ইন্ডিয়ার মাধ্যমে কলকাতায় একটি হাসপাতাল তৈরির ক্ষেত্রেও মমতার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ এনেছেন পরাখ। তাঁর অভিযোগ, ওই হাসপাতালের জন্য কলকাতা পুরসভাকে ২৫ লক্ষ টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে সংস্থার কর্তাদের বাধ্য করেছিলেন মমতা। তবে তাঁর মন্ত্রিত্ব যাওয়ার পরে সেই প্রস্তাব খারিজ করে দেয় কোল ইন্ডিয়া।
পরাখের আরও অভিযোগ, নয়াভেলি লিগনাইট কর্পোরেশনে ডিরেক্টর হিসেবে মমতা তাঁর পছন্দের কিছু ব্যক্তিকে বোর্ডে বসিয়েছিলেন। সে জন্য বোর্ডের কিছু সদস্যকে বিনা কারণে অপসারণ করেছিলেন তিনি। যদিও মমতা চলে যাওয়ার পরে ওই ডিরেক্টরদেরও অপসারণ করা হয়।
এই দুই অভিযোগই ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল।