অমিত শাহ ও আজম খান।
যথাক্রমে নরেন্দ্র মোদী ও মুলায়ম সিংহের দুই কান্ডারি। ভোটের পারদ যত চড়ছে, ভিন্ন মেরুর এই দুই নেতা ক্রমশই হয়ে উঠছেন গো-বলয়ের সবথেকে বড় রাজ্য উত্তরপ্রদেশে মেরুকরণের দুই মুখ।
উত্তরপ্রদেশের আশিটি আসনের দিকে নজর সব দলের। মোদীও এই রাজ্য থেকে দলের আসন গত বারের পাঁচগুণ করার চেষ্টায় রয়েছেন। মুলায়মও চাইছেন রাজ্যের ১৮ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোটকে সংগঠিত করতে। গত কয়েক মাস ধরেই উত্তরপ্রদেশের প্রকাশ্য জনসভায় মোদী-মুলায়ম ছায়াযুদ্ধ চলছিল। এ বার তাঁদের কান্ডারিরা মেরুকরণের রাস্তায় নেমে পড়েছেন সরাসরি।
এখনও পর্যন্ত মোদী নিজে হিন্দুত্বের কথা বলেননি। বরং সঙ্ঘ ও বিজেপি নেতারা তলে তলে অনেকদিন ধরেই উত্তরপ্রদেশে সুকৌশলে মেরুকরণ উস্কে দিয়ে আসছিলেন। উত্তরপ্রদেশের দায়িত্ব পাওয়ার পরেই অমিত শাহ তাঁর সফর শুরু করেছেন অযোধ্যা থেকে। সম্প্রতি গোষ্ঠী সংঘর্ষপীড়িত মুজফ্ফরনগরে গিয়ে জাঠেদের ‘বদলা’ নেওয়ার কথা বলেছেন তিনি। ওই মন্তব্য ঘিরে এখন অমিত শাহকেই সরাসরি আক্রমণ করে নিজেদের ঘুঁটি সাজাচ্ছে সপা। মুলায়মের সেনাপতি আজম খান ইতিমধ্যেই অমিতকে ‘গুন্ডা নম্বর ওয়ান’ বলেছেন। অমিতের বিরুদ্ধে দু-দুটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। আর আজ মুলায়ম নিজেও তোপ দেগেছেন মোদী-ঘনিষ্ঠ এই নেতাকে। বলেছেন, “গুজরাত দাঙ্গার সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দায়িত্বে ছিলেন অমিত শাহ-ই। মানবতার সঙ্গে তাঁর কোনও সম্পর্ক নেই। এখানেও তিনি ‘নাশ’ করবেন।”
বিজেপি নেতৃত্ব মনে করেন, মুজফ্ফরনগর সংঘর্ষের পর থেকেই মুলায়মের সংখ্যালঘু ভোটের ভিত নড়বড়ে হতে শুরু করেছে। এই সংঘর্ষের জন্য আজম খানকেই দায়ী করেন অনেকে। এমনকী দিল্লির শাহি ইমাম সৈয়দ আহমেদ বুখারিও মুজফ্ফরনগরের সংঘর্ষের পর আজম খানের অপসারণ দাবি করেছিলেন। কিন্তু এখন সংখ্যালঘুর ‘মসিহা’ হিসেবে সেই আজম খানকেই ময়দানে এগিয়ে দিয়েছেন তাঁর ‘নেতাজি’ মুলায়ম। রাত পোহালেই মুজফ্ফরনগর-সহ গোটা পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে ভোট। তার আগে সংখ্যালঘু ভোট টানতে গত কাল একটি বিতর্কিত মন্তব্য করে বসেছেন আজম খান। একটি সভায় তিনি বলেছেন, “কার্গিল যুদ্ধ জিতেছিলেন মুসলিম সেনারা, হিন্দু সেনারা নন!”
পত্রপাঠ রে রে করে উঠেছে বিজেপি। অমিত শাহের ‘বদলা’ সংক্রান্ত মন্তব্য যথেষ্ট অস্বস্তিতে ফেলেছিল মোদীকে। যে কারণে ইস্তাহার প্রকাশের সময় বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীকে আলাদা করে বলতে হয়েছিল যে, ‘কোনও অসৎ উদ্দেশ্যে’ তিনি কাজ করবেন না। অমিত শাহও আজ গ্রেফতারি ঠেকাতে ইলাহাবাদ হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। কিন্তু একই সঙ্গে আজম খানের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে ঘটা করে নালিশও জানিয়েছে বিজেপি। আজম খানের বক্তৃতার সিডি খতিয়ে দেখার পর তাঁকে নোটিস পাঠিয়েছে কমিশন। তাঁকে শো-কজ করে ১১ এপ্রিলের মধ্যে জবাব চাওয়া হয়েছে। আজম খান অবশ্য নিজের মন্তব্যের সমর্থনে আজ বলেছেন, “আমি মুসলিমদের অবদানের কথা বলেছি। তাতে অসন্তুষ্ট হওয়ার কী আছে?” এ নিয়ে সঙ্ঘ ও বিজেপিকে আজও এক প্রস্ত আক্রমণ করেন তিনি।
বিজেপি নেতৃত্ব অবশ্য ভালই জানেন, উত্তরপ্রদেশে সংখ্যালঘু ভোট টানতে যেমন মুলায়ম উদ্যোগী, তেমনই সেই মেরুকরণের পথ ধরে বিজেপিকেও তার ফায়দা তুলতে হবে। সে কারণে আজ দিল্লিতে দলের সদর দফতরে শুধুমাত্র আজম খানের বিরোধিতা করেই সাংবাদিক সম্মেলন হয়েছে দু’বার। বিজেপির মুখপাত্র সুধাংশু ত্রিবেদী বলেন, “আজম খানের সংখ্যালঘু তোষণ এমনই পর্যায়ে পৌঁছে যাচ্ছে যে, তা ভারতের নিরাপত্তার পক্ষেও বেশ বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়াচ্ছে।”
এক বিজেপি নেতার কথায়, “গোটা প্রচারে মোদী সর্বধর্মের উন্নয়নের কথাই বলে এসেছেন। কিন্তু এখন যে ভাবে অমিত শাহের উপরে আক্রমণ বাড়ছে, তাতে আমাদেরও আজম খানদের বিরোধিতা করতে হচ্ছে।” তবে এই দ্বৈরথ দেখে বসপা নেত্রী মায়াবতী বলেছেন, “এটা দু’দলের ম্যাচ গড়াপেটা। দু’দল দুই গোষ্ঠীর ভোট চায়। সেই ভাবেই তারা মেরুকরণ করে যাচ্ছে।”