মোদী হাওয়ায় ভর করেই এ বার আরও শক্তি বাড়াতে চায় বিজেপি। এ ক্ষেত্রে তাদের পাখির চোখ বিহার, দিল্লি, উত্তরাখণ্ড ও ঝাড়খণ্ড। এই চারটি রাজ্যে ক্ষমতায় আসার প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা।
বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার আজ পদত্যাগ করেছেন। অনেক দিন ধরেই তাঁর দলের বিধায়করা তলে তলে যোগাযোগ রাখছেন বিজেপির সঙ্গে। লোকসভা ভোটে ভরাডুবির পর দলে ভাঙনের আশঙ্কা আরও তীব্র হয়ে উঠেছে নীতীশের। তাই এই পদত্যাগের কৌশল বলে মনে করছে বিজেপি। নীতীশের পদত্যাগের জেরে যদি সরকার পড়ে যায় এবং বিজেপির পথ আটকে অন্য কোনও সমীকরণের সরকার মাথা না তুলতে পারে সে ক্ষেত্রে বিজেপি নেতৃত্ব সরকার গড়তে প্রস্তুত। বিহারের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক ধর্মেন্দ্র প্রধান বলেন, “কালই আমরা বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছি। এই রাজ্যেও আমরা জাত-পাতের যাবতীয় সমীকরণ ভাঙতে পেরেছি। নীতীশ তো বটেই, বাকি দলগুলিও ধরাশায়ী হয়েছে। এই অবস্থায় আমরা সেখানে সরকার গড়তে প্রস্তুত।”
তবে কোনও ভাঙাগড়ার খেলায় এখনই যেতে চাইছে না দল। দিল্লিতেও অরবিন্দ কেজরীবাল মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর আম আদমি পার্টির অনেকে বিজেপিতে যোগ দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ভোটের আগে কেনাবেচার প্রচার হলে পাছে মোদীর ভাবমূর্তিতে আঁচ পড়ে, তার জন্য সেই পথে হাঁটেননি বিজেপি নেতৃত্ব। মোদী দিল্লি এসে দলের নেতাদের সেই পদক্ষেপ করতে বারণ করেন। আজ দিল্লির বিজেপি নেত্রী আরতি মেহরা বলেন, “আমাদের কাছে নির্দেশ ফের ভোটে গিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসার। দিল্লির ৭টির মধ্যে ৭টি লোকসভা আসনেই আমরা যদি জিততে পারি, তা হলে দিল্লি বিধানসভাতেও জয় নিশ্চিত। তবে এ কথা ঠিক, ভোট ভাগের হিসেবে বিজেপির চেয়ে খুব পিছিয়ে নেই আপ। বিজেপির থেকে তারা ১০ শতাংশ কম ভোট পেয়েছে। লড়াই খুব সহজ না হলেও ক্ষমতা দখল সম্ভব।”
লোকসভার আগেই উত্তরাখণ্ডে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা কংগ্রেসের নেতা সতপাল মহারাজ বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। তাঁর স্ত্রী এখনও কংগ্রেসে আছেন। ভোটের আগেই স্থির হয়ে গিয়েছিল, লোকসভা শেষ হতেই সতপাল আরও বিধায়ককে নিয়ে বিজেপিতে যোগ দেবেন। ৭০টি আসনের উত্তরাখণ্ডে সরকার গড়তে প্রয়োজন ৩৬ জন বিধায়কের সমর্থন। সেখানে কংগ্রেসের শক্তি ৩৩। বাকি মায়াবতীর দল ও অন্যদের নিয়ে আরও ৭ জনের সমর্থন নিয়ে চলছে সরকার। সূত্রের খবর, সতপালের সঙ্গে ১০ জনের মতো বিধায়ক রয়েছেন। বিজেপির কৌশল, এখন এই বিধায়করা যদি বিজেপিতে যোগ দেন, তা হলে এমনিতেই সে রাজ্যে কংগ্রেসের সরকার পড়ে যাবে।
ঝাড়খণ্ডে সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছে হেমন্ত সোরেন সরকার। ৮২টি আসনের এই রাজ্যে প্রয়োজনীয় সংখ্যার থেকে এক জন বেশি বিধায়ক নিয়ে সরকার চলছিল। কিন্তু তার মধ্যেই চন্দ্রশেখর দুবে কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে যোগ দেন। আর হেমলাল মুর্মু ও বিদ্যুৎবরণ মাহাতো ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চার হয়ে জিতে এসেও বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। রাজ্য বিজেপি ভোটের আগে থেকেই হেমন্ত সোরেন সরকারকে ইস্তফার চাপ দিচ্ছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব লোকসভা শেষ না হওয়া পর্যন্ত ধীরে-চলো নীতি নিয়ে চলারই পরামর্শ দিয়েছিলেন। এখন সেই পর্ব চুকেছে। তাই ঝাড়খণ্ডের সংখ্যালঘু সরকারকে উৎখাত করতে আপাত ভাবে বাধাই নেই। প্রশ্ন হল, বিজেপি নেতৃত্ব কখন ও কী ভাবে সেটা ঘটাতে চাইবেন।